ভিক্ষা চাই না চাই একটি ভালো হুইল চেয়ার

দামুড়হুদার উজিরপুরের প্রতিবন্ধী আমির হোসেন হুইল চেয়ারে চেপে ফেরি করেন হাওয়াই মিঠাই

 

মো. শাহাবুদ্দিন: চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদা উপজেলার উজিরপুর গ্রামের শারীরিক প্রতিবন্ধী আমির হোসেন (৫৫) ভিক্ষাবৃত্তি না করে নিজের তৈরি শিশুদের প্রিয় হাওয়াই মিঠাই গ্রামে গ্রামে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছে। আয় করছে প্রতিদিন দু শ থেকে আড়াই শ টাকা।

চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার উজিরপুর গ্রামের দিগপাড়ার মৃত কিতাব আলীর ছেলে আমির হোসেন জন্মগ্রহণ করেন স্বাভাবিক ভাবেই। আর সবার মত তিনিও খেটে খেয়ে জীবন যাপন করতেন। পেশায় ছিলেন ভ্যানচালক। আট বছর আগে দূরারোগ্য এক ব্যাধিতে তার দু পা অবশ হয়ে যায়। অনেক চিকিৎসা করার পরও তিনি আর স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাননি। তিন ছেলে ও এক মেয়ের জনক তিনি। জীবনে তার আরও করুণ পরিণতি নেমে আসে যখন তার দু ছেলে বিয়ে করে বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। এক মেয়ে ও ছোট ছেলেকে নিয়ে তার জীবনে নেমে আসে দুর্বিষহ বিপর্যয়। একে তো পা অবশ হওয়ার কারণে কোনো কাজই করতে পারতেন না তার ওপর আবার ছেলেরাও তার পাশে না দাঁড়িয়ে স্বার্থপরের মতো চলে যায় তাকে ছেড়ে। কেমন করে তিনি নিজেদের আহারের সংস্থান করবেন আর কেমন করেই বা মেয়ের বিয়ের ব্যবস্থা করবেন। এলাকাবাসী এবং নিকটজনদের সাহায্য সহযোগিতার মাধ্যমে মেয়ের বিয়ে দিয়ে দায়মুক্ত হন কিছুটা। স্ত্রী ও ছোট ছেলেকে নিয়ে শুরু হয় তার নতুন করে জীবনযুদ্ধ। কাজ করবার ক্ষমতা না থাকার কারণে মানুষের দ্বারে হাত পাততে বাধ্য হন। কিন্তু সে সময় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে তেমন কেউই তার পাশে এসে দাঁড়ায়নি। এ পরিস্থিতিতে তিনি বিক্রি করেন তার একমাত্র সম্বল বসত ভিটার ৪ শতাংশ জমির এক শতাংশ। জমি বিক্রির সেই টাকা দিয়ে কেনেন চলাচলের জন্য একটি হুইল চেয়ার ও হাওয়াই মিঠাই তৈরির মেশিন। শুরু করেন হুইল চেয়ারে করে হাওয়াই মিঠাই বিক্রির ব্যবসা। বাড়িতে স্ত্রীর সহযোগিতায় রাতে হাওয়াই মিঠাই তৈরি করে প্যাকেট করে রাখেন। সকালে আবার বেরিয়ে পড়েন বিক্রি করতে।

গতকাল বুধবার দামুড়হুদার দেউলী গ্রামে মিঠাই বিক্রির সময় কথা হয় এ প্রতিবেদকের সাথে। তিনি জানান, ভিক্ষা করা ভালো নয়। আমি ভিক্ষা চাইও না। তিনি আক্ষেপ করে বলেন সাহায্যের জন্য প্রভাবশালীদের দ্বারে দ্বারে গেলেও কেউ টাকা দেয়া তো দূরের কথা আমার জন্য একটি হুইল চেয়ারের ব্যবস্থাও করে দেয়নি। তিনি যা আয় করেন তা দিয়ে কোনোরকম তার সংসার চলে যায়, বাড়তি কিছুই রাখতে পারেন না। তিনি তার হুইল চেয়ারটি দেখিয়ে বলেন এ হুইল চেয়ারটির অবস্থা খুব ভালো না। কোনো রকমে এ হুইল চেয়ারটি দিয়ে তিনি চালিয়ে যাচ্ছেন জীবনযুদ্ধ। সমাজের  বিত্তবানদের অথবা প্রশাসনের নিকট তিনি ভালো একটি হুইল চেয়ারের আবেদন জানিয়েছেন।