ভারতের নির্বাচনে চোখ রেখে বিএনপির আন্দোলন কৌশল

 

মাথাভাঙ্গা মনিটর: ভারতের চলমান লোকসভা নির্বাচনকে বিবেচনায় নিয়েই রাজনীতির হিসাব কষতে শুরু করেছে বিএনপি। কর্মকৌশল প্রণয়নও চলছে ওই নির্বাচন সামনে রেখে। বলা হচ্ছে, ভারতের নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন বেগবান করা যাবে না। বিশেষ করে কংগ্রেস ক্ষমতায় থাকাকালীন এদেশে সরকারবিরোধী আন্দোলন গতিশীল করা কঠিন বলে বিএনপির নীতি-নির্ধারকরা মনে করেন। ফলে ওই নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত সরকারবিরোধী বড় ধরনের কোনো আন্দোলনে দলটি যাচ্ছে না।

এর আগে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব এদেশে অংশীদারিত্বমূলক একটি নির্বাচনের জন্য সরকারকে চাপ দিলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। বিশেষ করে ভারতের সমর্থন নিয়ে সরকার একতরফা একটি নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে পেরেছে। ফলে ভারত নিরপেক্ষ না হলে নির্দলীয় ব্যবস্থায় গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন আদায় কঠিন বলে বিএনপির এখনকার মূল্যায়ন। দলটি বুঝতে পেরেছে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্বই সব নয় এ অঞ্চলে টিকে থাকতে হলে ভারতের সমর্থন প্রয়োজন। তাই ওই দেশে ক্ষমতার পট পরিবর্তনের আশায় রয়েছে দলটি। বলছে, বিজেপি ক্ষমতায় গেলে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে সরকারের বিরুদ্ধে তারা কঠোর আন্দোলন শুরু করবে। বিভিন্ন ফোরামসহ দলটির সর্বস্তরে এখন ভারতের নির্বাচন নিয়েই আলোচনা, জল্পনা-কল্পনা চলছে। বিএনপি মনে করে, ক্ষমতায় যেতে পারলে পক্ষে না হলেও বাংলাদেশে বিজেপি অন্তত নিরপেক্ষ অবস্থান নিলেও বর্তমান সরকারকে দাবি মানতে বাধ্য করা যাবে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের বড় একটি অংশও মনে করেন, বিজেপি ক্ষমতায় গেলে বিএনপির আশাবাদী হওয়ার মতো কারণ আছে। কেননা যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব বাংলাদেশে সব দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু একটি নির্বাচনের প্রশ্নে এখনও তাদের অবস্থানে অটল। এ পর্যন্ত এ ইস্যুতে তাদের অবস্থানের এতোটুকু বদল হয়নি। বিশ্লেষকদের কেউ কেউ মনে করেন, কেবল ভারতের সমর্থন নিয়েই সরকার টিকে আছে। এ অবস্থায় বিএনপি মনে করছে, কংগ্রেস ক্ষমতায় থাকাকালীন এদেশে আন্দোলন জোরদার করা কঠিন। ফলে তারাও বিজেপিকে ক্ষমতায় দেখতে চাইছে। আর এজন্যই এ মুহূর্তে ভারতের চলমান নির্বাচনের দিকেই দলটির নজর। দলের বিভিন্ন পর্যায় থেকে বিজেপির সাথে সম্পর্ক তৈরি বা যোগাযোগের উদ্যোগও নেয়া হয়েছে। বার্তা দেয়া হচ্ছে ক্ষমতায় গেলে বিজেপির সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করা হবে। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের কূটনীতিকদের সাথেও তারা ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন।

সূত্রের দাবি, ২২ এপ্রিল তিস্তা অভিমুখে রোডমার্চ কর্মসূচি পালন ওই উদ্যোগেরই অংশ। বিএনপির প্রভাবশালী একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুগান্তরকে জানিয়েছেন, ক্ষমতায় যেতে পারলে বিএনপি বিজেপির সাথেই তিস্তা নিয়ে আলোচনা ও চুক্তি করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে, এমন একটি বার্তা দেয়ার জন্য নির্বাচন চলাকালীন বিএনপির এ কর্মসূচি। পাশাপাশি এদেশের জনগণকেও তারা দেখাতে চায়, ভারতে কংগ্রেস ও বর্তমান সরকারের আমলে তিস্তার পানি বণ্টন ইস্যুতে অগ্রগতির আর কোনো সম্ভাবনা নেই। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অবশ্য মনে করেন, পার্শ্ববর্তী দেশের রাজনীতি বা পরিবর্তনের সাথে এদেশের রাজনীতির হিসাব মেলানো ঠিক নয়। তিনি বলেন, অনেকেই ওই নির্বাচনের সাথে এ দেশের রাজনীতির হিসেব-নিকেশ মেলাচ্ছেন। কিন্তু আন্দোলন করে দাবি আদায় করতে হলে বিএনপিকে তার নিজস্ব শক্তির ওপর ভর করতে হবে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. ওসমান ফারুক বলেন, আওয়ামী লীগের সাথে কংগ্রেসের অনেক দিনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। সে কারণে হয়তো তাদের দিকে ঝোঁকও কিছুটা বেশি। কিন্তু আমি বলব যারাই ভারতে ক্ষমতায় আসুক বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে তাদের পুনর্মূল্যায়ন করা উচিত। কেননা ৫ জানুয়ারি একতরফা একটি নির্বাচনের মাধ্যমে এখানে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, কংগ্রেস ক্ষমতায় এলেও আওয়ামী লীগের প্রতি তাদের একমুখী নীতি পরিবর্তন করা প্রয়োজন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদের মতে, ভারতের নির্বাচন নিয়ে বিএনপির আশাবাদী হওয়ার মতো কারণ আছে। তিনি বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের সাথে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের যে ব্যক্তিগত সম্পর্ক তা বিজেপির সাথে একেবারেই নেই। ফলে বিজেপি ক্ষমতায় এলে আওয়ামী লীগকে কাছে ঘেঁষতে নাও দিতে পারে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে পরিবর্তনের ফলাফল বিএনপির পক্ষে যেতে পারে বলে তারা মনে করতে পারে।

তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের সাথে নরেন্দ্র মোদির সম্পর্ক ভালো নয়। এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী হতে পারলে মোদি নিজেই সমঝোতার মাধ্যমে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে পশ্চিমা বিশ্বকে খুশি করার উদ্যোগ নিতে পারেন। সুতরাং দুদিক থেকেই বিএনপিতে আশাবাদ সৃষ্টি হওয়ার মতো কারণ আছে।