ব্যাংকগুলোতে রোজ ৩০০ সাইবার আক্রমণ

স্টাফ রিপোর্টার: প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের সাইবার আক্রমণ হলেও সাইবার নিরাপত্তা খাতে দেশের ব্যাংকগুলোর জ্ঞান ও বিনিয়োগ খুবই কম বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) এক গবেষক। বিআইবিএমের সহযোগী অধ্যাপক মো. মাহবুবুর রহমান আলম তার এক গবেষণাকর্মের বরাতে জানান, দেশের ব্যাংকগুলো প্রতিদিন সর্বোচ্চ প্রায় ৩০০ ম্যালওয়ার আক্রমণের মুখোমুখি হয়, যার ৬০ ভাগ স্থানীয় হ্যাকাররা করে থাকে। দেশি এই হ্যাকারদেরকেই সাইবার আক্রমণ মোকাবেলায় প্রশিক্ষণ দিয়ে নীতিবান হ্যাকারে পরিণত করা যেতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের আট কোটি ১০ লাখ ডলার রিজার্ভ চুরির পর শনিবার সাইবার আক্রমণ প্রতিরোধে আয়োজিত এক সেমিনারে গবেষণার তথ্য উপস্থাপন করেন মাহবুবুর আলম। সর্বসাম্প্রতিক সাইবার আক্রমণ প্রতিরোধের বিষয়ে বিভিন্ন ব্যাংকের নির্বাহী ও কারিগরি কর্মকর্তাদের অবগত করাতে প্রধান কারিগরী কর্মকর্তাদের ফোরাম (সিটিও), বাংলাদেশ এই সেমিনারের আয়োজন করে। এতে সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান ফায়ারআই, তাদের অধিভুক্ত কোম্পানি দ্যা ম্যানডিয়ান্ট এবং এডিএন অধিভুক্ত কোম্পানি টিভিএন সহযোগিতা দেয়। সেমিনারে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা ছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহাসহ স্থানীয় কর্মকর্তারা বক্তব্য রাখেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় পর বিভিন্ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের মধ্যে আইটি (ইনফরমেশন টেকনোলজি) খাতের উন্নয়নে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখেছেন বলে সেমিনারে জানান বিআইবিএমের মাহবুবুর আলম তিনি বলেন, আইটি খাতে ঘাটতি বিশ্লেষণ ও প্রশিক্ষণে তারা টাকা ঢালছেন। এরপরও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের ৮ ভাগ আইটি খাতে বিনিয়োগে উৎসাহী নয় এবং ২৪ ভাগ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনার জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন বলে জানান ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউটের এই শিক্ষক।

তারা আইটি খাতে বিনিয়োগে করবেন না; কিন্তু দুর্ঘটনার পর অভিযোগ করবেন, বলেন তিনি। দেশের ৭০ ভাগ ব্যাংকের আলাদা এবং স্বতন্ত্র আইটি নিরাপত্তা ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা বিভাগ নেই জানিয়ে মাহবুবুর আলম বলেন, অনেক ব্যাংক অদক্ষভাবে ব্যয়বহুল সফটওয়্যার নিয়েছে।

বিআইবিএমের গবেষণায় পাওয়া যায়, দেশের ব্যাংকিং খাতের আইটি উন্নয়নে এ পর্যন্ত ব্যাপক অর্থ খরচ হলেও তার বেশিরভাগ হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার কেনায় ব্যয় হয়। ১৯৬৮ সালে অগ্রণী ব্যাংকে প্রথম কম্পিউটার স্থাপনের সময় থেকে দেশের ব্যাংকগুলোর আইটি খাতের উন্নয়নে প্রায় ৩০০ বিলিয়ন টাকা ব্যয় হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ছাড়াই দেশের ব্যাংকিং খাতের আইটিতে প্রতিবছর ১০ বিলিয়ন টাকা বিনিয়োগ করা হচ্ছে। এসবের অধিকাংশ হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার কেনায় ব্যয় হয়। গত চার বছরে সাইবার নিরাপত্তা, এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও নিরীক্ষণের বাজেট খুবই কম বলে গবেষণায় দেখা যায়। নিরাপত্তা খাতে ব্যয় হয় মোট আইটি বাজেটের মাত্র ৪ ভাগ, যার দুই ভাগ আবার প্রশিক্ষণে। কিন্তু প্রযুক্তির অগ্রসরতায় যে কোনো ব্যবস্থার নিরাপত্তায় সাইবার আক্রমণ গুরুত্বপূর্ণ হুমকি হয়েছে।