বৃষ্টি বাদল উপেক্ষা করে চুয়াডাঙ্গার গড়াইটুপি মেলায় শিশু-কিশোরদের ভিড়

পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মেলা দেখতে পেরে তৃপ্তির হাসি

 

বেগমপুর প্রতিনিধি: এ বছর রোজার মাস পড়ায় আয়োজক কর্তৃপক্ষ এক মাস পর শুরু করেন চুয়াডাঙ্গা জেলার ঐতিহ্যবাহী গড়াইটুপি মেলার কার্যক্রম। মেলা শুরু নিয়ে নানাজনের নানা মতামত থাকলেও অবশেষে বুড়ো বটগাছের নিচে ধুমধামের সাথে চলছে মেলা। মেলার পঞ্চম দিন শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় হরেক রকম জীবজন্তু দেখাতে আর শিশু-কিশোরদের বায়না মেটাতে অভিভাবকেরা তাদের সন্তানদের সাথে নিয়ে ঘুরেছে মেলার আঙিনা। বাড়ি ফিরেছে নানান রঙের খেলনাপাতি নিয়ে। যদিও মেলার কাঠের দোকানিরা তাদের তৈরি জিনিসপত্র এখনও সাজাতে পারেনি। তবে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এক সাথে মেলা দেখতে পেরে আয়োজক কর্তৃপক্ষকে সাধুবাদ জানিয়েছে এলাকাবাসী। কাদা-পানি মাখামাখি করে বাড়ি ফেরা মানুষের মুখে শোনা যাচ্ছে এবারের মেলা জমেছে বেশ।

রোজার মাস হওয়ায় কিছুটা ছন্দপতন ঘটিয়ে প্রায় এক মাস পর গত ২০ জুলাই জাঁকজমকপূর্ণ পরিবেশে মেলার যাত্রা শুরু করে আয়োজক কর্তৃপক্ষ। মেলার শুরু নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে দেখা দেয় মিশ্র প্রতিক্রিয়া। অবশেষে তা ভুলে গিয়ে জেলার একমাত্র ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে গড়াইটুপি মেলার স্বার্থে এক কাতারে দাঁড়িয়ে এলাকার মেলাপ্রেমী ভক্তরা। আর মেলা আয়োজক কর্তৃপক্ষ এ বছর ব্যবসার বিষয়টি গৌন করে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মেলা উপভোগ করতে যাতে বিড়ম্বনায় পড়তে না হয়, তারই ব্যবস্থা করেছে। গতকাল শুক্রবার ছিলো ছুটির দিন। আর এ দিনে শিশু-কিশোরদের সাথে নিয়ে নারী-পুরুষসহ অনেক অভিভাবককে দেখা গেছে মেলার মাঠে। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে জীব জন্তুতে আর বিভিন্ন কসরতে সাজানো সার্কাসে একটু বাড়তি ভিড় পড়ে গেছে। সার্কাস দেখে ভিড় জমেছে মিষ্টির দোকানে। গরম জিলেপি আর রসগোল্লা দিয়ে গলা ভিজিয়ে নিয়ে আবারও ছুটাছুটি চুরিমালা, খেলনা, পুতুল, কম্বল আর বাঁশ-কাঠের দোকানে। মেলা দেখে বাড়ি ফেরা শাপলা, রিমা, বেলী এবং জব্বার বললেন, মেলা নিয়ে বিভিন্ন অপপ্রচার থাকলেও এ বছরের মেলা একেবারেই ভিন্ন। মেলার এ প্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত পর্যন্ত ঘুরেছি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কোন বিড়ম্বনায় পড়তে হয়নি। কাদা পানি উপেক্ষা মেলা দেখতে একটু কষ্ট হলেও মেলার পরিবেশ আর নিশ্চিন্তে বাড়ি ফেরা এর চাইতে আর কি চাই। আবারও একবার আসবো মেলার মাঠে কাঠের তৈরি জিনিসপত্র আর কম্বল কিনতে। জিনিসপত্রের দাম কেমন? এমন প্রশ্নের উত্তরে তারা জানালেন গত বছরের মতোই। দামের খুব বেশি তারতম্য হয়নি।

এলাকার কয়েকজন প্রবীণ ব্যাক্তি বললেন, যে মালিক উল গাউছের মাজারকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন থেকে প্রতিবছর এ বটগাছের নিচে ঘটে দেশের ৪৫টি জেলার লোকের আগমন। তার গ্রহণযোগ্যতা এবং পবিত্রতা রক্ষার্থে ইউপি চেয়ারম্যান একটি নামাজের ঘর বানিয়ে দিয়েছেন। শুধু মেলার উদ্দেশেই মানুষ এখানে আসে না। বিশ্বাসের জায়গা থেকে অনেকে অনেক রকম মনোবাসনা পূরণের জন্য আসে। এ মেলা এতদাঞ্চলের মানুষের সংস্কৃতির ধারক-বাহক ও সোনালি ঐতিহ্য বহন করে আসছে। এ মেলায় একদিকে যেমন বিনোদনে এনে দেয় ক্লান্তি মনে প্রশান্তি, অন্যদিকে অসংখ্য মানুষের মিলন মেলা সৃষ্টি করে সম্প্রীতি। অটুট হয় আত্মীয়তার বন্ধন। ঐতিহ্যবাহী এ মেলা চুয়াডাঙ্গা জেলাবাসীর গর্ব ও অহংকার। যদিও এ সময় স্থানীয় লোকজনের বাড়তি আত্মীয়স্বজনদের ঝামেলা পোয়াতে হয়। তারপরও সে ঝামেলা কিছুটা হলেও সুখের। মেলার আয়োজক শুকুর আলী বলেন, যদিও সরকারকে অনেক টাকা রাজস্ব দিয়ে এ মেলা করতে হচ্ছে, সে দিকটি না ভেবে ঐতিহ্যের ধারক বাহক এ মেলা যাতে সকলে এক সাথে উপভোগ করতে পারে সে দিকটি নিশ্চিত করা হয়েছে। মেলায় আসলে তার প্রমাণ মিলবে। আর যদি কারো কোনো অভিযোগ থাকে তাহলে পবিত্র স্থানের পবিত্রতা রক্ষা এবং এলাকার সুনাম ধরে রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা করা হবে। কারণ অর্থই মানুষের জীবনের সব কিছু না। মানুষের আশীর্বাদের কাছে সবকিছুই মূল্যহীন।