বিশ্বব্যাংকের আরেক প্রকল্প নিয়ে টানাহেঁচড়া

 

স্টাফ রিপোর্টর: পদ্মা সেতুর পর এবার বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ‘নদী ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক প্রকল্প নিয়ে নতুন করে টানাহেচড়া শুরু হয়েছে। ৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্প গত বছরের ২৯ অক্টোবর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে উপস্থাপন করা হলেও পাস হয়নি। ওই সময় প্রকল্পের পরামর্শক খাতে অস্বাভাবিক ব্যয় ও প্রয়োজনীয় অংগ (কম্পোনেন্ট) সংস্থান না থাকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ অবস্থায় উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) সংশোধন করে নতুন করে প্রকল্প আনার কথা বলেন তিনি। কিন্তু বিশ্বব্যাংকের বাড়াবাড়িতে এই প্রকল্প আলোর মুখ দেখবে কি-না তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। কেননা, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুসারে পরামর্শক ব্যয় কমানো ও অন্যান্য অংগ যুক্ত করা নিয়ে দরকষাকষি করছে সংস্থাটি। তারা বলছে, এই প্রকল্পের দ্বিতীয় ধাপে (পর্ব-২) এসব বিষয়কে যথাযথভাবে আনা হবে। প্রথম ধাপে নয়।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ সূত্র জানায়, সম্প্রতি বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের নতুন কান্ট্রি ডিরেক্টর দায়িত্ব গ্রহণ করে ইআরডির সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহউদ্দিনের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সাথে ছিলেন সংস্থাটির দক্ষিণ এশীয়বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যানেট ডিক্সন। এ সময় তারা প্রকল্পটি দ্রুত অনুমোদনের ব্যবস্থা করার তাগিদ দেন।

মোহাম্মদ মেজবাহউদ্দিন বলেন, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য চাওয়া হয়েছে। একনেক সভায় যেসব নির্দেশনা দেয়া হয়েছিলো তা মানা হয়েছে কি-না তার ব্যাখ্যা (কোয়ারি) চাওয়া হয়েছে। এসব কোয়ারি যথাযথ হলে আবারও একনেকে প্রকল্পটি উপস্থাপন করা হবে। আমরা বিশ্বব্যাংককেও বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রকল্প নিয়ে সংশয়ের সুযোগ নেই। কম্পোনেন্টগুলো যুক্ত হলে অনুমোদন হয়ে যাবে।

জানা যায়, ১৮ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে এই প্রকল্প নিয়ে জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার আলোকে প্রস্তাবিত প্রকল্পের অঙ্গভিত্তিক পরিকল্পনা (কম্পোনেন্ট) পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে কি-না তা নিশ্চিত করার জন্য বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে- বাঁধ নির্মাণ ও পুনর্নির্মাণ, নদী শাসন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নদী খনন ও ভূমি পুনরুদ্ধার নিশ্চিত করা।
ওই সভায় ক্যাপিটাল ড্রেজিং পাইলট প্রকল্পের সাথে প্রস্তাবিত প্রকল্পের সমন্বয় সাধনের কথা বলা হয়। বিষয়টি বিস্তারিতভাবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে অবহিত করার নির্দেশ দেয়া হয়।

জানা য়ায়, এ প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক শুধু পরামর্শক ব্যয় হিসেবে ৭৬৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়ার শর্ত দিয়েছে। অন্যদিকে সরকার মনে করছে, এ প্রকল্পে পরামর্শক ব্যয় হিসেবে সর্বোচ্চ একশ’ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া যেতে পারে। নদী ব্যবস্থাপনায় উন্নয়ন কর্মসূচি শীর্ষক এ প্রকল্পে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় বিশ্বব্যাংক। এটি বিশ্বব্যাংকের বোর্ড সভায় অনুমোদন হওয়ার কথা। তবে সরকারের পক্ষ থেকে মৌখিকভাবে বলা হয়েছে, অস্বাভাবিক ওই শর্তে এ ঋণ নেবে না সরকার। এ জন্য বিশ্বব্যাংকের বোর্ডকে এ ঋণ অনুমোদন না দেয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩ মার্চ বিশ্বব্যাংকের বোর্ড সভায় প্রকল্পটির ঋণ প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য উপস্থাপনের কথা থাকলেও সেটি হয়নি বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, ৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের ৪ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা দেয়ার কথা। বাকি অর্থ সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন থেকে ব্যয় হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধন করে পাঠালেও তাতেও আপত্তি জানিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। অনুমোদনের জন্য তৃতীয় দফা উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পাঠালে তাতেও কমিশনের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) আপত্তি জানিয়েছে। এ জন্য পুরো অনুমোদন প্রক্রিয়া থমকে গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নদী এবং পানি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বে মডেল। কিন্তু বিশ্বব্যাংক নদী ব্যবস্থাপনায় মোটা বেতনে বিদেশী পরামর্শক নিয়োগে অতি আগ্রহী। পরামর্শক খাতে ব্যয় কমিয়ে তা অন্য খাতে ব্যয় করতে আগ্রহী সরকার। বাংলাদেশে পরামর্শক খাতে এত অর্থ ব্যয়ের কোনো মানে হয় না বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
প্রকল্প পরিচালক হাবিবুর রহমান বলেন, নির্দেশনা অনুযায়ী ডিপিপি পর্যালোচনা করা হয়েছে। সংশোধিত প্রকল্প প্রস্তাবও অনুমোদন দেয়া হয়নি। কোন খাতে কত বরাদ্দ রাখা হচ্ছে সেটিও নির্দিষ্ট হয়নি। এ জন্য প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য আরও সময় প্রয়োজন।

এ প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের মুখপাত্র মেহরিন এ মাহবুব বলেন, আলোচ্য প্রকল্পে বেশ কিছু সংশোধন আনা হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের সাথে এ সংক্রান্ত আলাপ-আলোচনা করেই তা করা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে জটিলতা কেটে গিয়ে দ্রুতই প্রকল্পের অনুকূলে ঋণ প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য বোর্ড সভায় উঠবে