বিলুপ্তির পথে দামুড়হুদার বিষ্ণুপুরের মৃৎ শিল্প

 

দু বেলা ডাল-ভাতের তাগিদে বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে অনেকেই আজ অন্য পেশায়

সাইদুর রহমান: প্রযুক্তিতে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগায় প্লাস্টিকের তৈরি পণ্যের কাছে হার মানতে হচ্ছে মৃৎ শিল্প। মাটির তৈরি শৈল্পিকতার নিপুণ কারুকাজ প্রশংসা কুড়ালেও মৃৎ শিল্পীদের জীবনে আসেনি সুদিন। ফলে অনেকেই বাধ্য হয়ে বাপ-দাদার ওই পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় নিয়োজিত হচ্ছেন। এতে আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে দেশের মৃৎশিল্প। তেমনি নানাবিধ কারণে চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদা উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামের মৃৎ শিল্পীদের জীবনযাত্রা হয়ে পড়েছে ছন্দহীন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বিষ্ণুপুর গ্রামের বিভিন্ন বাড়ির উঠোনে বসে নারী-পুরুষরা মিলে মাঠি দিয়ে হাড়ি পাতিল, নান্দা ও পায়খানার সিলাব তৈরি করছে। দৃষ্টিনন্দন আর নানা বৈচিত্র্যময় পিঠা তৈরির তাওয়াও তৈরি করেন ওই গ্রামের মৃৎ শিল্পীরা। আধুনিক ছোঁয়ায় প্লাষ্টিকের তৈরি পণ্যের কাছে পরাজিত হয়ে মৃৎ শিল্প আজ বিলুপ্তির পথে। এক সময় ওই মাটির তৈরি পণ্যের যথেষ্ট চাহিদা ছিলো। বর্তমানে প্লাস্টিক, লোহা ও সিলভারের তৈরি আসবাবপত্রের চাহিদা থাকায় মাটির তৈরি পাতিলের তেমন আর সেই চাহিদা নেই। ফলে ওই পেশায় কর্মরত শিল্পীদের সংসার চালানো খুব দুরূহ হয়ে পড়েছে। ওই গ্রামের কামারপাড়ার শ্যামল, ভজন, সন্ন্যাসীসহ কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আগে হাড়ি পাতিল, নান্দা ও পায়খানার সিলাব তৈরি করে গ্রামে গ্রামে ফেরি করে বেচা বিক্রি করতেন তারা। আগের তুলনায় এখন খুব একটা বেচা বিক্রি নেই বললেই চলে। প্লাস্টিক ও মেলামাইনের ওই যুগে যা বেচা বিক্রি হয়, তাতে দু বেলা ডাল-ভাত খেয়ে কোনো রকম দিন যাপন করছি। এতে সংসার চালানো খুবই কষ্টকর হয়ে পড়েছে। অভাব অনটনের কারণে বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে অন্য কোনো পেশা বেছে নিতে হচ্ছে।

মৃৎ শিল্পীরা আরও বলেন, বাপ-দাদার ঐতিহ্য ওই পেশা। তাদের দেখাদেখি আমরাও ওই পেশা বেছে নিয়েছি। বিভিন্ন পূজার সময় প্রতিমা তৈরি করে মোটামুটি আয় হলেও হাড়ি-পাতিল তৈরি করে সংসার চালানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে।  তবুও ঐতিহ্য ধরে রাখতে ওই কাজ করে যাচ্ছি।

গ্রামের সামসুজ্জোহা ও মিঠু বলেন, আদিকাল থেকে উপজেলার প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবার মৃৎ শিল্পের পণ্যসামগ্রী তৈরি করে বিভিন্ন হাট-বাজার ও গ্রামগঞ্জে বিক্রি করতো। তখন গ্রামবাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে মৃৎ শিল্পের তৈরি নিত্য নতুন প্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রী ব্যবহার করা হতো। কিন্তু বর্তমানে বাজারে প্লাস্টিক ও মেলামাইনের দাপটে ওই শিল্প বিলুপ্তির পথে।