বিদেশি পরামর্শক ঘিরেই বিশেষজ্ঞদের সন্দেহ

 

স্টাফ রিপোর্টার: হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ পাচারের বিষয়টি তদন্ত করতে গিয়ে গোয়েন্দারা চমকপ্রদ কিছু তথ্য উদ্ঘাটন করেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক বিদেশি পরামর্শককে ঘিরে সন্দেহ দানা বেঁধে উঠছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, হ্যাকাররা বাংলাদেশ ব্যাংকের সিস্টেমে ঢুকেই পেমেন্ট ট্রান্সফারের ক্রেডেনশিয়াল চুরি করে। এরপর ভুয়া সুইফট মেসেজের মাধ্যমে ফেডারেল রিজার্ভকে অর্থ স্থানান্তরের অনুরোধ পাঠানো হয়। ফেব্রুয়ারির প্রথমদিকে এক সপ্তাহের মধ্যে এরকম প্রায় তিন ডজন অনুরোধ যায় ফেডারেল রিজার্ভে। সব মিলিয়ে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার স্থানান্তর করতে বলা হয় বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে। এর মধ্যে চারটি অনুরোধের বিপরীতে ফিলিপাইনের এক ব্যাংকের পাঁচটি অ্যাকাউন্টে মোট ৮১ মিলিয়ন ডলার পাঠায় যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ। এই ঘটনাটি ৪ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৫টা থেকে রাত ৮টার মধ্যে ঘটেছে বলে গোয়েন্দারা নিশ্চিত হয়েছেন।

এ ঘটনায় সবচেয়ে বেশি আলোচিত সুইফট কোড বিষয়টি। কারণ এ কোডে ঢুকেই এ অর্থ লোপাট করে হ্যাকাররা। প্রশ্ন উঠেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের সুইফট (সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইন্টার ব্যাংক ফিন্যান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশন-এসডব্লি­উআইএফটি) কোড আসলে কাদের নিয়ন্ত্রণে! কি এই সুইফট কোড?

এ সুইফট কোড সীমিত কয়েকজনের কাছে থাকে। এই ঘটনার সাথে দেশীয় একটি চক্র জড়িত বলে ইতোমধ্যে গোয়েন্দারা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছে। তিনটি গোয়েন্দা সংস্থা বিষয়টি পর্যক্ষেণ করছে।

উল্লে­খ্য, সুইফট (সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইন্টারব্যাংক ফিন্যান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশন) হলো বেলজিয়ামভিত্তিক আন্তঃব্যাংক আর্থিক লেনদেনের নেটওয়ার্ক। এর মাধ্যমে আন্তঃব্যাংক লেনদেনের পরিচিতি শনাক্ত করা হয়। যা মূলত সংকেতলিপি তথা কোডের মাধ্যমে করা হয়। এক্ষেত্রে লেনদেনের তারবার্তা (ওয়ার) এই কোডের মাধ্যমে আদান প্রদান করা হয়।

জানা গেছে, বিশ্ব ব্যাংকের তথ্য ব্যবস্থাপনা ও প্রযুক্তি বিভাগের সাবেক পরিচালককে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার একজন নাগরিক। এসেই তিনি বাংলাদেশে ব্যাংকের সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ক আগের সফটওয়্যারটি পরিবর্তন করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নতুন দেয়া ওই সফটওয়ার প্রতিষ্ঠানের মালিকানার একটি অংশ ওই বিদেশির নামেই। এ নিয়ে রহস্য ঘনীভূত হচ্ছে। আইটি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের মতো রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে বিদেশি নাগরিককে পরামর্শক হিসেবে রাখায় অনেকের মনেই প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে। কেননা সরকারের সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের সম্পর্কও ভালো না। অথচ বিদেশি সেই নাগরিক বিশ্বব্যাংকেরই একজন সাবেক কর্মকর্তা। গোয়েন্দারাও বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেছেন। ইতোমধ্যে এই সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গোয়েন্দাদের হাতে এসেছে বলে জানা গেছে। একটি গোয়েন্দা সংস্থার এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, আমরা অনেকদূর এগিয়েছি। অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আমাদের কাছে এসেছে। অচিরেই তদন্ত করে এই ঘটনার আসল রহস্য দেশবাসীর কাছে উন্মোচন করা হবে।

গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের মতে, বিদেশি নাগরিককে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশাল অংকের অর্থ লোপাটের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের তথ্য প্রমাণ বের করতে সমস্যা হতে পারে। ভবিষ্যতে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি ওই বিদেশি নাগরিকের নখদর্পণে থাকছে। এতে করে আবারো বাংলাদেশ ব্যাংকে বড় ধরনের হ্যাকিংয়ের সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে। বিদেশি ওই নাগরিকের কার্যক্রমের সঙ্গে দেশীয় বিশেষজ্ঞদের রাখা প্রয়োজন ছিলো।