বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসীর গণপিটুনিতে দুজন নিহত

দামুড়হুদার কলাবাড়ি গ্রামে চোরদের ধাওয়া :  ঝোড়াঘাটায় গরু চুরি করে পালানোর সময় পড়লো ধরা

 

আলম আশরাফ/সাইদুর রহমান/কামরুজ্জামান বেল্টু: চুয়াডাঙ্গার ঝোড়াঘাটা গ্রামে গরু চুরি করে পালানোর সময় গণপিটুনিতে দু চোর নিহত হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে এ গণপিটুনির ঘটনা ঘটে। নিহত দু চোরের মধ্যে হানুর বাড়ি দামুড়হুদা খাপাড়ায় এবং মিরার বাড়ি গাংনী উপজেলার গাড়াবাড়িয়া গ্রামে। গণপিটুনির সময় গৃহকর্তা মিরাজ আহত হন। মিরাজের বড় ভাই হিরাজুল ইসলাম বাদী হয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। চুয়াডাঙ্গার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আনোয়ার সাদাত নিহতদের সুরোতহাল রিপোর্ট প্রণয়ন করেন।

গ্রামবাসী ও পুলিশসূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার রাত সাড়ে ২টার দিকে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার জুড়ানপুর ইউনিয়েনর কলাবাড়ি গ্রামে গরুচোরেরা হানা দেয়। গ্রামবাসী গরু চোরদের ধাওয়া করে। এর কয়েক ঘণ্টা পর ভোর সাড়ে ৫টার দিকে চোরেরা চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার আলুকদিয়া ইউনিয়নের ঝোড়াঘাটা গ্রামে ঢোকে। চোরেরা ভোররাতে গ্রামের ঝোড়াঘাটা গ্রামের রবজেল আলীর ছেলে মিরাজুল ইসলামের একটি গরু চুরি করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় মিরাজুলের ফুফু নুর বক্সের স্ত্রী নিছারন বেগম টের পেয়ে চিৎকার করেন। গ্রামে পাহারারত গ্রামবাসীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে চোরদের ধাওয়া করে। এক পর্যায়ে কয়েকজন চোর পালিয়ে গেলেও দুজন ধরা পড়ে। ছুটে আসে পার্শ্ববর্তী কলাবাড়ি ও হুজুগপাড়া গ্রামের লোকজন। উদ্ধার করা হয় চুরি হওয়া গরু। পরে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী আটক দু চোরকে গণপিটুনি দেয়। খবর পেয়ে গতকাল সকাল ৬টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে মুমূর্ষু অবস্থায় দু চোরকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মসিউর রহমান একজনকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। নিহত এ চোরের নাম মিরা (৪০)। সে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার গাড়াবাড়িয়া গ্রামের কাবিল উদ্দিনের ছেলে। অপর চোর দামুড়হুদা খাপাড়ার আজিম উদ্দিনের ছেলে হানুকে (৩৮) চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে ঘণ্টাখানেকের মাথায় সকাল সাড়ে ৭টার দিকে মারা যায়। হাসপাতালে কৌতূহলী ও উৎসুক জনতার ভিড় জমে। দীর্ঘ সময় পর্যন্ত দুজনের লাশ অজ্ঞাত পরিচয় হিসেবেই থাকে। পরে দামুড়হুদা খাঁপাড়ার হানু খার স্ত্রী শাবানা খাতুন ওরফে স্বপ্না হাসপাতালে এসে স্বামীর লাশ শনাক্ত করেন। পুলিশ জানায়, অপর নিহত চোর মিরার বাড়ি গাংনী উপজেলার গাড়াবাড়িয়া গ্রামে। সে কাবিলের ছেলে। গণপিটুনিতে নিহত দুজনের লাশ গতকালই ময়নাতদন্ত করা হয়। হানুর লাশ তার স্ত্রী শাবানার কাছে হস্তান্তর করা হলেও অজ্ঞাত কারণে অন্য লাশটি হাসপাতালমর্গে রাখা হয়েছে। আজ তার পরিবারের পক্ষ থেকে লাশ গ্রহণ না করা হলে পরে পুলিশ প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেবে বলে সূত্র জানায়।

নিহত হানুর স্ত্রী শাবানা খাতুন ওরফে স্বপ্না জানান, আমার স্বামী চুয়াডাঙ্গা শহরের রিকশা চালায়। বুধবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে বাড়ি থেকে চুয়াডাঙ্গা শহরের উদ্দেশে বের হয়। সে মাদাকাসক্ত। রাত ৮টার দিকে তার মোবাইলেফোন দিয়ে জানতে চায় সে কোথায় আছে। হানু উত্তরে জানায় সিনেমা হলের কাছে আছি, বাড়ি ফিরছি। রাতে সে বাড়ি ফিরে আসেনি। পরে জানতে পারি তার লাশ হাসপাতালে। আমার রিকশাচালক স্বামী একজন নেশাখোর। হানুর রয়েছে দু সন্তান। মেয়ে ময়নার বয়স ৭ বছর আর ছেলে সম্রাটের বয়স ৫ বছর। হানু বছর দশেক আগে একই গ্রামের মৃত আলী হোসেনের মেয়ে শাবানা খাতুন ওরফে স্বপ্নাকে বিয়ে করে।

এলাকাবাসী জানায়, কলাবাড়ি, হুজুগপাড়া ও ঝোড়াঘাটাসহ পার্শ্ববর্তী গ্রামে মাঝে-মধ্যেই গরু চুরি হতো। গ্রামের লোকজন গরু চুরি ঠেকাতে রাতপাহারা শুরু করে। চুয়াডাঙ্গা সদর থানার এসআই মকবুল হোসেন জানান, এ ঘটনায় ঝোড়াঘাটা গ্রামের মিরাজ উদ্দিনের বড়ভাই হিরাজ উদ্দিন বাদী হয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। গণপিটুনির সময় গরুর মালিক মিরাজ উদ্দিনও আহত হন বলে গ্রামবাসী জানায়।

দামড়হুদা অফিস জানিয়েছে, দামুড়হুদা খাপাড়ার চিহ্নিত গরু চোর একাধিক মামলার আসামি জনতার হাতে নিহত হানু চোরের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা ৭টায় স্থানীয় কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়। সকালে দু সন্তানের জনক হানু চোরের মৃত্যুর খবর শুনে গরু হারানো ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছে।

জানা গেছে, দামুড়হুদা খাপাড়ার আজিমুদ্দীনের ছেলে হানু দীর্ঘদিন থেকে গরু চুরি করে আসছিলো। গত দু বছরে সে আন্তঃজেলা গরুচোরের সর্দার হয়ে যায়। সে দীর্ঘদিন ধরে ট্রাক ভিড়িয়ে গরু চুরি করে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করতো। সম্প্রতি চিৎলা-গোবিন্দহুদা হাইস্কুলের কাছে জনতার হাতে ধরা পড়ে গণধোলাইয়ের শিকার হয়। তাকে মারাত্মক আহত অবস্থায় পুলিশ আটক করে। জামিনে মুক্তি পেয়ে সে আবার সাঙ্গপাঙ্গ গুছিয়ে তার কাজে ফিরে যায়। গত ৪ মাসে দামুড়হুদা উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে ৫০/৬০টি গরু চুরি হয়ে যায়। ইতঃপূর্বে হানুর দামুড়হুদার খাপাড়াস্থ বাড়ি থেকে পুলিশ বেশ কয়েকটি চোরাই গরু উদ্ধার করেছিলো।