বাহারি পোশাকে সাজানো দোকান : এখন শুধু অপেক্ষা ক্রেতার

আসছে ঈদ : কেনাকাটার আবহ বইছে চুয়াডাঙ্গার বিপণী বিতানগুলোতে

 

আলম আশরাফ: প্রস্তুত ঈদের বাজার। অভিজাত বিপণী বিতান ও শপিংমল থেকে শুরু করে পাড়া-মহল্লার ছোট বড় মার্কেট, সব দোকানই এখন বাহারি পণ্যে ঠাসা। এখন শুধু মরসুমি ক্রেতাদের কেনাকাটা শুরুর প্রতীক্ষা। যদিও ঈদের ভিড় এড়াতে ক’দিন আগেই অনেকে কেনাকাটাতে নেমে পড়েছেন; ঘুরে বেড়াচ্ছেন বিভিন্ন মার্কেটে। কেউ কেউ হয়তোবা ছোটখাটো কিছু কেনাকাটা এরই মাঝে সেরেও ফেলেছেন। তবে তাদের সংখ্যা একেবারেই হাতেগোনা। দোকানিরা বলছেন, ঈদ কেনাকাটা মূলত শুরু হবে ১০ রোজার পর থেকে। এ সময় চাকরিজীবীরা বেতন-বোনাস পাবেন। এছাড়াও ঈদের লেটেস্ট কালেকশনের জন্য তরুণ-তরুণীরা এ সময়টুকু ঘোরাঘুরিতেই সময় কাটাবেন। তাই সবাই এখন সেই মহেন্দ্রক্ষণের প্রতীক্ষায়।

ঈদের মার্কেটগুলো ঘুরে দেখা গেছে যেন, কেনাকাটার আবহ বইছে চুয়াডাঙ্গার বিপণী বিতানগুলোতে। দোকানগুলোতে শোভা পাচ্ছে থরে থরে সাজানো নামিদামি ব্র্যান্ড ও বিদেশি পোশাকের পসরা। ফ্যাশনের বৈচিত্র্যের পাশাপাশি গ্রাহকতুষ্টির দিকে খেয়াল রেখে দোকানের সাজসজ্জাতেও এসেছে নান্দনিক পরিবর্তন। এক কথায় ভেতরে-বাইরে সবখানেই প্রস্তুতির ছোঁয়া। নিউমার্কেট, প্রিন্সপ্লাজা মাকের্ট, মুনসুপার মার্কেট ও পুরাতনগলিসহ সব এলাকার মার্কেটের চিত্র প্রায় অভিন্ন।

বিক্রেতারা বলছেন, সারাবছর কেনাকাটা থাকলেও তাদের প্রধান বিক্রি মরসুম পবিত্র ঈদুল ফিতরকেন্দ্রিক। সবাই তাই পুরো বছর ধরে অপেক্ষায় থাকেন এ সময়টার জন্য। রমজানের শুরু থেকেই ক্রেতারা ঈদবাজারে ঢু মারতে শুরু করেন। যারা একটু নিরিবিলি কেনাকাটা সারতে চান তারা প্রথম ১৫ দিনের মধ্যেই তা সারেন। তবে শেষ ভাগেই বেশি জমজমাট হয় বাজার। মূলত এ মাসটিই তাদের আয়ের প্রধান মরসুম। অনেকেই এ মাসের আয় দিয়ে বছরের অন্য সময়ের খরচও তুলে নেন। তাই ঈদের প্রস্তুতিতে কোনো ছাড় নয়। নিউমার্টেকের নন্দন ফ্যাশনের বিক্রেতা সুমন রেজা বলেন, পাইকারি বাজার থেকে পছন্দের পোশাক আনা হয়েছে। দোকান সাজানোও প্রায় শেষ। এখন ক্রেতাদের জন্য অপেক্ষা। তবে রোজার প্রথম কয়েকদিন ক্রেতারা দেখে বেশি, কেনে কম। এ সময় তাদের চাহিদার ও চাওয়ার কথা মাথায় রেখে আরো কিছু পোশাক আসবে।

বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, এবার গরমের প্রকোপ একটু বেশি। সে চিন্তা করে বিক্রেতারা দেশি, আরামদায়ক ও সুতির রুচিসম্মত পোশাকের চলন বেশি। মহিলা ও তরুণীদের ক্ষেত্রে দেশি-বিদেশি টেলিভিশন সিরিয়ালের জনপ্রিয় চরিত্রগুলোর পোশাকের প্রভাব ও আন্তর্জাতিক ফ্যাশন ধারার বজায় রেখে ওই ঘরানার পোশাকও তুলেছেন বিক্রেতারা। আবার পুরুষদের ফ্যাশনে এবার শর্ট পাঞ্জাবি ছেড়ে মাঝারি, মিনি লং বা সেমি লং পাঞ্জাবির চলনই বেশি। গতবারের তুলনায় এবার ক্রেতাদের মাঝে এসেছে কিছু ভিন্নতা ভারতীয় বাংলা সিরিয়ালের চেয়ে হিন্দি সিরিয়াল ও সিনেমার বিভিন্ন নায়িকাদের নামানুসারে থ্রিপিসের পাশাপাশি এবার নতুন আইটেম যোগ হয়েছে মাহেশমাতি, জাজবা, তামাশা, শ্যাঙ্খচুইসহ বেশ কয়েকটি নতুন পোশাক। এছাড়াও বাজরাঙ্গি ভাইজান, বাহুবল, দিলওয়ালে, বাজিরাও মাস্তানি, সুলতানিয়া, ফ্লোরটার্চ, মাসাক্কালি, আশিকি, আনারকলি ও লং কামিজ। শিশুদের পোশাকের মধ্যে জাজবা, তামাশা, শ্যাঙ্খচুই, পাখি, নীলপরি, জয়া, রামলীলা, লেটপার্টি, রোহী ইত্যাদি নানা নামের বাহারি রঙ-বেরঙের পোশাক। এছাড়া ভারতীয় সিরিয়ালের নামে কিরণমালা, ইস্কেলিলা, বিন্দাস, কটকটি, বজ্রমালা, হদিসমালা, ফ্লোরটার্চ, জলপরি, ইচ্ছেনদী, পারি, ঝিলিক, রাজকন্যা, লাবণ্য, ঝিলমিল, পাটিয়ালি, শঙ্কমালা, নন্দিনী, পাখি, জলনুপুর উল্লেযোগ্য। বিক্রেতারা জানান, এবার বাহুবল-২’র মাহেশমাতি পোশাক বড়দের এবং জাজবা, তামাশা, শ্যাঙ্খচুই ছোটদের নজর কাড়বে।

এছাড়াও ভারতীয় ডিজাইনের কাপড় ও শাড়ির সংগ্রহ লক্ষ্য করা গেছে। ভারতের কাশ্মীরি ডিজাইন, সিকোয়েন্সের কাজ, জরি-সুতোর বাহারি নকশার শাড়ি, পাকিস্তানি ঝলমলে কাপড়ে বাহারি সুতোর কাজ করা কাপড়, উজ্জ্বল রঙের জর্জেট, টিস্যু প্রভৃতি কাপড়ে জরি, চুমকি, সুতি কাপড়ে দেশীয় আল্পনার সুতো, এপিক ও স্ক্রিন-ব্লুক-বাটিকের পোশাক সম্ভার দারুণ আকর্ষণ করবে ক্রেতাদের। ঈদের অন্যতম পোশাক ছেলেদের পাঞ্জাবি। মূলত ১৫ রোজার পরই এসব পাঞ্জাবি বিক্রি শুরু হয়। নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্তের ভরসার জায়গা ফুটপাতের বিক্রেতারাও ব্যস্ত ঈদের কেনাকাটা ঘিরে। এক্ষেত্রে দেশি ব্রান্ডের মধ্যে ফেইথ-১১, ক্যাটস আই, মনসুনরেইন, নেক্সট, শীতল, পাস পয়েন্ট, রঙ, রেক্স, সপুরা সিল্ক, হ্যান্ডিবাজার, প্রভৃতির সাথে ভারত-পাকিস্তানের নানা ডিজাইনের পাঞ্জাবি, চীন-থাইল্যান্ডের বিভিন্ন ডিজাইনের শার্ট-প্যান্ট ও টি-শার্টের সমাহার উল্লেখ করার মতো। স্বল্প আয়ের মানুষরা সাধ্যের মধ্যে কেনাকাটার জন্য বেছে নেন ফুটপাতকে।

এদিকে ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে নির্বিঘ্নে কেনাকাটায় পুরো রমজানে বিভিন্ন মার্কেটগুলোতে নিরাপত্তা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে পুলিশ। ছিনতাই, চাঁদাবাজি, অজ্ঞান ও মলমপার্টি প্রতিরোধে রমজান ও ঈদে মোতায়েন থাকবে শাদা পোশাকে ও ইউনিফর্মে বিশেষ টিম। বিভিন্ন মার্কেট পুলিশ নিরাপত্তা দেবে। পাশাপাশি মার্কেটের নিরাপত্তার জন্য মার্কেট মালিক সমিতিকে সিসিটিভি, আর্চওয়ে, এক্সেস কন্ট্রোল মেশিনসহ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।