বাবুই পাখির আবাসনস্থল নির্বিচারে ধ্বংস ॥ হারিয়ে যাচ্ছে পাখি ও তার বাসা

আগের মতো বাবুই পাখির কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত হয় না গ্রামীণ জনপদ

সাইদুর রহমান: আবহমান গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী নিপুণ বাসা তৈরির দক্ষ কারিগর বাবুই পাখি বিলুপ্তির পথে। কালের বিবর্তনে প্রাকৃতিক বয়ন শিল্পী ও তার বাসা এখন আর আগের মতো চোখে পড়ে না। বিলুপ্ত প্রায় বাবুইর বাসা শহরের বিভিন্ন ড্রয়িং রুমে শোভা পাচ্ছে। বাবুই পাখি ও তার বাসা টিকিয়ে রাখতে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে মনে করেন সচেতন মহল। নির্বিচারে তালগাছ কর্তন, পরিবেশ বিপর্যয়, জলবায়ু পরিবর্তন, বন উজার, নতুর বনায়নে বাসযোগ্য পরিবেশ ও খাদ্যের অভাব, অসাধু শিকারীর ফাঁদসহ বহুবিধ কারণে কালের আবর্তে প্রাকৃতিক স্থপতি, বয়নশিল্পী এবং সামাজিক বন্ধনের প্রতিচ্ছবি বাবুই পাখি ও এর দৃষ্টিনন্দন বাসা ক্রমান্বয়ে হারিয়ে যাচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গা জেলার চার উপজেলার শহরে কিংবা গ্রামঞ্চলের কোনো জায়গায় আর চোখে পড়ে না বাবুই পাখির বাসা। তাল গাছে দেখা যায় না খড়, তালপাতা, ঝাউ ও কাশবনের লতাপাতা দিয়ে নির্মিত বাসা ঝুলার দৃশ্য। জেলার বিভিন্ন গ্রামঞ্চলে সারি সারি উঁচু তালগাছে বাবুই পাখির দৃষ্টিনন্দন বাসা দেখা যেতো। এখন তা আর সচরাচর চোখে পড়ে না। ১৫-২০ বছর আগেও গ্রামগঞ্জে ব্যাপকভাবে বাবুই পাখি ও এর বাসা চোখে পড়তো। কিচিরমিচির শব্দ আর এদের শৈল্পিক বাসা মানুষকে পুলকিত করতো। আগের মতো বাবুই পাখির কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত হয় না এখন আর গ্রামীণ জনপদ।
আলমডাঙ্গার ভালাইপুর গ্রামের শত বছর বয়স্ক প্রবীণ ব্যক্তি আবদার মল্লিক ও আওলাদ ম-ল গল্পের ছলে বলেন, বাবুই পাখি বাসা তৈরির পর সঙ্গী খুঁজতে যায় অন্য বাসায়। সঙ্গী পছন্দ হলে স্ত্রী বাবুইকে সঙ্গী বানানোর জন্য নানাভাবে প্রেম নিবেদন করে। বাসা তৈরির কাজ অর্ধেক হলে কাক্সিক্ষত স্ত্রী বাবুইকে সেই বাসা দেখায়। বাসা পছন্দ হলেই কেবল সম্পর্ক গড়ে। স্ত্রী বাবুই পাখির বাসা পছন্দ হলে বাকি কাজ শেষ করতে পুরুষ বাবুইর সময় লাগে আরও সপ্তাহখানেক। স্ত্রী বাবুই পাখির প্রেরণা পেয়ে পুরুষ বাবুই মনের আনন্দে বাসা তৈরির কাজ শেষ করে।
এদিকে গোকুলখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বিল্লাল হোসেন ও প্রধান শিক্ষক আব্দুর রজ্জাকসহ ফরিদ হোসেন বলেন, বাবুই পাখি হারিয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হলো শিকার করা। নির্বিচারে এ পাখির আবাসনস্থল ধ্বংস করা। যার ফলে আজ এই পাখি আর চোখে পড়ে না আগের মতো। তবে বিলুপ্তি ঠেকাতে প্রথমত দরকার হলো জনসচেতনতা আর সরকারিভাবে প্রজননের মাধ্যমে বাবুই পাখি বিলুপ্তি ঠেকানো সম্ভব। পাখির অবাদ বিচরণের ব্যবস্থা করতে পারলে আগের মতোই গ্রামবাংলায় শোনা যাবে এ বাবুই পাখির কলতান।