বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপের অভিপ্রায় নেই ভারতের : বিবিসি

স্টাফ রিপোর্টার: ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজীনার সাম্প্রতিক দিল্লি সফরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে ভারত সরকারের সাথে তার আলোচনা হলেও ভারত এটা স্পষ্ট করে দিয়েছে যে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করার কোনো অভিপ্রায় তাদের নেই।

ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, মজীনা নিজে থেকেই দিল্লিতে এসে ভারতের মনোভাব বুঝতে চেয়েছিলেন, আর তাকে সেটা বুঝিয়েও দেয়া হয়েছে। ভারতের কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরাও বলছেন-  বাংলাদেশ প্রসঙ্গে ভারত ও আমেরিকার মূল্যায়ন সব ক্ষেত্রে এক রকম হওয়ার কথা নয়, আর তা হচ্ছেও না। যেটা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। বলা যেতে পারে অনেকটা নিজের আগ্রহেই গত বুধবারে দিল্লি সফরে যান বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজীনা। তিন দিনের সফরে তিনি সাউথ ব্লকে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সাথে বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেছেন, বুঝতে চেয়েছেন বাংলাদেশে বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে ভারত কী ধরনের ভূমিকা রাখতে চায়।

দিল্লি সফরে তার সাথে কথা হয়েছে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব সুজাতা সিংয়েরও, আর এ সব আলোচনার কয়েকটিতে হাজির ছিলেন দিল্লিতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ন্যান্সি পাওয়েলও। ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো জানিয়েছে, বন্ধুপ্রতিম বাংলাদেশে গণতন্ত্র সমুন্নত থাকুক এটা ভারত বরাবরই চেয়ে এসেছে, কিন্তু সে দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বা নির্বাচনে যে তারা কোনো মতেই হস্তক্ষেপ করতে রাজি নন, সেটা মজীনার কাছে তারা স্পষ্ট করে দিয়েছেন।

ঢাকায় ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত ও দিল্লির জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ স্টাডিজ প্রোগ্রামের প্রধান বীনা সিক্রি বলেন, প্রতিবেশী দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে নাক-না গলানো ভারতের বরাবরের নীতি, আর নিজেদের ব্যাপারেও তারা অন্যদের হস্তক্ষেপ পছন্দ করে না। বাংলাদেশেও একটি প্রাণবন্ত গণতন্ত্র আছে, তাদের নিজস্ব সংবিধান আছে। ভারত বিশ্বাস করে সেই সংবিধান অনুসারে, দেশের সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করেই তাদের গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তবে রাষ্ট্রদূত মজীনার সাথে আলোচনার অর্থ যদি কেউ করেন, ভারত আমেরিকার সাথে মিলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সঙ্কটের ব্যাপারে একটি অভিন্ন কৌশল প্রণয়ন করতে চাইছে, সেটা ভুল হবে বলেই মনে করেন মিস সিক্রি।

ঢাকায় ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত বীনা সিক্রি তার মতে, আমেরিকা-রাশিয়া বা এরকম বন্ধু দেশগুলোর সাথে প্রতিবেশীদের ব্যাপারে ভারতের আলোচনা প্রায়ই হয়ে থাকে, কিন্তু তার মানেই যে একসাথে মিলে কোনো পরিকল্পনার ছক কষা হচ্ছে এমনটা মোটেও নয়। বাংলাদেশ নিজে থেকে কোনো সাহায্য চাইলে অন্য কথা কিন্তু এক্ষেত্রে তো তা হয়নি, বরং সঙ্কট নিরসনে বাংলাদেশের ভেতরেই সংলাপ ও আলোচনার প্রয়োজন বলে মনে করা হচ্ছে।

এদিকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সরাসরি স্বীকার করছে, ভারতে জঙ্গি কার্যকলাপ দমনে ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের তৎপরতা রোধে বাংলাদেশের বর্তমান সরকার গত পাঁচ বছরে যেভাবে তাদের সাহায্য করেছে, তা তুলনাবিহীন। কিন্তু তার পরেও সেই সরকারের স্বার্থে ভারত বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করবে এমনটা কখনই হবে না বলে দাবি করছেন বীনা সিক্রি। সাবেক এ রাষ্ট্রদূত বলেন, ২০০৬-০৭ সালে যখন অনুরূপ সঙ্কট হয়েছিলো, ভারত কিন্তু তখন অন্যরকম কিছু করেনি। তখন বিএনপি সরকার ক্ষমতায় ছিলো। এখন গত পাঁচ বছরে নানা ক্ষেত্রে দুদেশের সহযোগিতা অনেক বেড়েছে, কিন্তু তাই বলে অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের প্রশ্নে ভারতের নীতি পাঁচ-সাত বছর আগে যা ছিলো, এখনো তাই আছে।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও বলছে, দিল্লিতে ড্যান মজীনার সফর ও তার বৈঠকগুলোকেও দেখতে হবে ঠিক এ দৃষ্টিভঙ্গিতেই যে ভারত অবশ্যই প্রতিবেশীদের ব্যাপারে মিত্র দেশগুলোর সাথে ভাবনার আদানপ্রদান করবে, কিন্তু তাই বলে প্রতিবেশি দেশের নির্বাচন কীভাবে হবে তা নিয়ে কোনো পরামর্শ বা উপদেশ দিতে যাবে না।