ফুটফুটে কিশোর ফিরোজকে সুস্থ করার নামে দিনভর ওঝা রেখা বেগমের নাটক

চুয়াডাঙ্গার আকন্দবাড়িয়ায় চিকিৎসার নামে দীর্ঘদিন ধরে কথিত কবিরাজ মসলেম আলীর চলছে অপচিকিৎসা

 

স্টাফ রিপোর্টার: ১৩ বছর বয়সী ফুট ফুটে ফিরোজের চলাচলের ক্ষমতা হারিয়েছে। কেন? কেউ বলেছে- পলিও, কেউ বলেছে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ। কবিরাজসহ কুসংস্কার বিশ্বাস করা সাধারণ মানুষের বিশ্বাস বাতাস লেগেছে, বান মেরেছে। এ কারণেই কিশোর ফিরোজের চিকিৎসা ওঝা কবিরাজের ওপরই ছেড়ে দেয়া হয়েছে। আর এ সুযোগে ঝাঁড়ফুঁক, জিন হাসিলের নামে দীর্ঘদিন ধরেই চলছে অপচিকিৎসা। করা হচ্ছে নাটক।

ফিরোজকে সুস্থ করে দেয়ার কথা বলে গতকাল রেখা বেগম নামের এক মহিলা সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নাটক করেছে। সেই নাটকের দর্শক ছিলো চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের আলুকদিয়া আকন্দবাড়িয়াসহ এলাকার অনেকে। অবশ্য নাটকের নাটকীয়তা বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছেন ৬/৭ মাস ধরে চিকিৎসা করা ইব্রাহিমপুর গুচ্ছ গ্রামের কথিত কবিরাজ মসলেম আলী। রেখা যেমন বিভ্রান্তিকর কথা বলে ফিরোজের পিতাকে একটি খাসি ছাগল মেরে খাওয়াতে বাধ্য করেছে, তেমনই মসলেম আলীও বিভ্রান্তিমূলক কথা বলে ফিরোজকে বাস্তবসম্মত চিকিৎসা দিতে দীর্ঘদিন ধরেই প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে রেখেছে। অথচ সমাজের সচেতনমহল নীরব দর্শক!

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের আলুকদিয়া আকন্দবাড়িয়ার জালাল উদ্দীনের ছেলে ফিরোজ (১৩)। গত ৬/৭ মাস আগে হঠাত করেই সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। তার পা অবশ যায়। চলাচলের স্বাভাবিক ক্ষমতা হারায়। তাকে সুস্থ করে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ইব্রাহিমপুর গুচ্ছগ্রামের কথিত কবিরাজ মসলেম আলী চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা দিয়ে আসছে। ফিরোজের সুস্থতা দূরাস্ত, দিন দিন অসুস্থতা বাড়ছে। এরই এক পর্যায়ে আকন্দবাড়িয়ারই মৃত মুকুল মণ্ডলের স্ত্রী রেখা খাতুন জিন হাসিল করা ওঝা বলে ঘোষণা দিয়ে বসেন। তিনি কিশোর ফিরোজকে সুস্থ করে দেয়ার দায়িত্ব নিয়ে বলেন, বৃহস্পতিবার ‘বার’ (জিনভর করা) হবে। এদিন জিনের দেয়া চিকিৎসায় ফিরোজ সুস্থ হয়ে উঠবে। জিনকে খুশি করতে হলে ফিরোজের পিতাকে খাসি মেরে খাওয়াতে হবে। সে মতে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় রেখা শুরু করে জিন হাসিলের নাটক। অপরদিকে ফিরোজের পিতা খাসি মেরে খাওয়ানো শুরু করেন। ঘড়ির কাঁটা ঘুরতে থাকে। বেলা গড়িয়ে বিকেল হয়। রেখার ওপর জিন আর ভর করে না। অপরদিকে এ খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে উৎসুক জনতা ভিড় জমাতে থাকে। ভিড় বাড়ার সাথে সাথে উত্তেজনাও দানা বাধে। এরই মাঝে ওই কথিত কবিরাজ মসলেম হাজির হয়। তিনিই বান মেরে জিন আসতে দিচ্ছে না বলে রেখা দাবি করলে উত্তেজনার মাত্রা তীব্রতর হয়। সন্ধ্যায় ফিরোজকে রেখার আস্তানা থেকে বাড়ি ফিরিয়ে নেয়া হয়। মসলেম উদ্দীনও নিরাপদেই বাড়ি ফেরেন। ফিরোজের নিকটজনদের কয়েকজন দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন, রেখা যে এভাবে ঠকাবে বুঝিনি। আর মসলেম তো গত কয়েক মাস ধরেই ঠকাচ্ছে। প্রতিকার মিলছে না।

ফিরোজকে আধুনিক চিকিৎসাকেন্দ্রে নেয়া হচ্ছে কেন? কেন তাকে ওই ওঝা কবিরাজের অপচিকিৎসার ওপরই ফেলে রাখা হয়েছে? এসব প্রশ্নের সন্তষজনক জবাব মেলেনি। বলেছে, বাতাস লেগেছে। ডাক্তারখানায় নিয়ে তো হবে না, তাই কবিরাজের চিকিৎসা দিয়েই সুস্থ করা হচ্ছে। এ কথায় স্থানীয় যুবকদের মাঝে হতাশার দীর্ঘশ্বাস বাড়লেও ফিরোজের অভিভাককদের মধ্যে অবশ্য ওই ভ্রান্তধারণাই রয়েছে। মসলেম ও রেখার পর এখন হয়তো ওরা নতুন কোনো কবিরাজ ওঝার খোঁজ করছে। এ খবর কি চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্যবিভাগ জানে?