ফলোআপ : চুয়াডাঙ্গার বোয়ালিয়া গ্রামে শাড়িতে আগুন লাগিয়ে স্ত্রী হত্যা : এক মাসের মাথায় ঘটনাস্থল পরিদর্শনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার

 

বেগমপুর প্রতিনিধি: চুয়াডাঙ্গা সদরের বোয়ালিয়া গ্রামে পাষণ্ড স্বামী নাজমুল তার স্ত্রী লিমার শাড়িতে আগুন লাগিয়ে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত স্বামী নাজমুলকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। ঘটনার ১ মাসের মাথায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার। স্বামী নাজমুলের পরিবারের পক্ষ থেকে হত্যার কথা অস্বীকার করা হলেও মৃত্যুর আগে হাসপাতালের বেডে দেয়া লিমার রেকর্ড করা জবানবন্দি শোনানো হয় উপস্থিতিদের। এ হত্যাকাণ্ডের সাথে তার স্বামীই একাই জড়িত বলে জানিয়ে গেছেন লিমা।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার তিতুদহ ইউনিয়নের বলদিয়া মাদরাসাপাড়ার আলম আলীর মেয়ে লিমা আক্তার অন্তরার ৬ বছর আগে বিয়ে হয় নেহালপুর ইউনিয়নের বোয়ালিয়া বটতলা পাড়ার সানোয়ার মল্লিকের ছেলে ইজিবাইক চালক নাজমুল মল্লিকের সাথে। বিয়ের পর তাদের সংসার চলছিলো ঠিকঠাক মতোই। বিয়ের আগে নাজমুল তার মামির সাথে অনৈতিক সম্পর্ক ছিলো বলে অভিযোগ ওঠে। বিয়ের পর তা জেনেও মেনে নেয় লিমা। গত ১৩ মার্চ সকালে লিমা রান্নাঘরে রান্না করছিল। মসলা নিতে ঘরে গেলে পেছন থেকে শরীরের কাপড়ে আগুন ধরিয়ে দেয় স্বামী। দ্বাউ দ্বাউ করে জ্বলতে থাকে আগুন। স্বামী নাজমুল মল্লিক ঘরের দরজা দিয়ে সটকে পড়ে। কোনো রকম আগুন নেভায়। পরিবারের লোকজন উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়। ততোক্ষণে লিমার শরীরের  ৬০ শতাংশ ঝলসে যায়। প্রথমে সত্য বলতে শ্বশুরসহ তাদের লোকজন বারণ করে। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তির পর পরই কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নেয়ার পরামর্শ দেন। পরদিন তাকে ঢাকায় নেয়া বার্ন ইউনিটের ২৫ নং বেডে মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করে অবশেষে ১১ এপ্রিল মারা যায়। আগুন লাগানোর ৭ দিনের মাথায় লিমার বড় ভাই হাসান বাদী হয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় নাজমুল ও তার মামি সোনালী বেগমকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। মামলায় উল্লেখ করা হয়- নাজমুল মল্লিক তার মামি সোনালীর সাথে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলে দুজন মিলে হত্যার জন্যই লিমার শরীরে আগুন ধরিয়ে দিয়ে মেরে ফেলার অপচেষ্টা চালায়। মামলা দায়েরের ১৩ দিনের মাথায় অর্থাৎ ২৭ মার্চ রাত সাড়ে ১১টার দিকে হিজলগাড়ি ক্যাম্প পুলিশ নাজমুলকে তার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে।

অপরদিকে মেয়ের সুখের কথা ভেবে শত কষ্টের মাঝেও জামাই নাজমুলকে মোটরসাকেল এবং ইজিবাইক কিনে দেয় লিমার পিতা। তাতেও মন গলে না নাজমুলের। গত কয়েক মাস ধরে আবারও সেই মামি সোনালীর সাথে আবারও সম্পর্ক গড়ে তোলে নাজমুল। এ নিয়ে সংসারে অশান্তি দানা বাধে। শতচেষ্টা করেও নাজমুলকে সে পথ থেকে ফেরাতে পারে না স্ত্রী লিমা। পরকীয়া প্রেমে বাঁধা হওয়ায় এ হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে বলে পুলিশ ধারণা করছে। ঘটনার ১ মাসের মাথায় গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলায়েত হোসেন হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি নাজমুলের পরিবার এবং প্রতিবেশীদের কথা শোনেন। পরিবারের সদস্যরা লিমাকে নাজমুল হত্যা করেনি সে নিজেনিজেই শরীরে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে জোরালোভাবে জানালে তখন লিমা পুলিশের কাছে যে ভিডিও জাবানবন্দি দিয়েছিলো তা উপস্থিতিদের শোনান। যেখানে লিমা স্পষ্ট বলেছে, স্বামী নাজমুলই শাড়িতে হত্যার উদ্দেশে আগুন লাগিয়েছে। এ সময় বাড়িতে কেউ ছিলো না। শাড়িতে আগুন লাগিয়ে নাজমুল সটকে পড়ে। এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলায়েত হোসেন বলেন, মৃত্যুর আগে লিমা যে জাবানবন্দি দিয়ে গেছে তা স্পষ্টতই প্রমাণ করে নাজমুলই অপরাধী। কারণ মৃত্যু যন্ত্রণায় থাকা অবস্থায় কেউ মিথ্যা বলতে পারে না।