ফলোআপ : আলমডাঙ্গার নতিডাঙ্গায় পোড়া লাশ উদ্ধার : স্বামী তানসেন আটক : চলছে জিজ্ঞাসাবাদ

স্টাফ রিপোর্টার: আলমডাঙ্গা নতিডাঙ্গার দু সন্তানের জননী বুলবুলিকে হত্যা করা হয়েছে। এরকমই সন্দেহে বুলবুলির স্বামী পোলতাডাঙ্গার  তানসেন ওরফে তানভীর হোসেনকে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে। তাকে মুক্ত করতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ ক্ষমতাসীনদলের অনেকেই উঠেপড়ে লেগেছে। অবশ্য পুলিশ কোনো তদবিরে কান না দিয়ে বুলবুলি খাতুনের মৃত্যু রহস্য উন্মোচনে তদন্ত অব্যাহত রেখেছে। সন্দেহের কারণেই তানভীর ওরফে তানসেনকে আটক করে থানা কাস্টডিতে নেয়া হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার বাড়াদী ইউনিয়নের নতিডাঙ্গা কাচিকাটাপাড়ায় নিজঘরে আগুনে পুড়ে গৃহবধূর মৃত্যুর জট খোলেনি। সন্দেহমূলকভাবে গৃহবধূর স্বামী তানসেনকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করেছে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ।

জানা গেছে, আলমডাঙ্গার বাড়াদী ইউনিয়নের নতিডাঙ্গা গ্রামের তানসেনের স্ত্রী দু সন্তানের জননী বুলবুলির (২৮) মৃত্যু রহস্যের জট খোলেনি। গৃহবধূ বুলবুলি পারিবারিক কলহের জের ধরে শরীরে পেট্রোল ঢেলে আত্মহত্যা করেছে। এ ব্যাপারে গতকাল সকালে বুলবুলির স্বামী তানসেনকে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ সন্দেহমূলকভাবে আটক করে আদালতে সোপর্দ করেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টার দিকে বাড়াদী ইউপি চেয়ারম্যান তোবারক হোসেন, পদ্মবিলা ইউপি চেয়ারম্যান আবু তাহেরসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গদের নিয়ে আলোচনা করে আপস-মীমাংসা হয়েছে। গৃহবধূ বুলবুলির দু সন্তানের কথা ভেবে তাদের নামে আড়াই বিঘা জমি ও চাকরি দেয়ার কথা বলে ৪ লাখ টাকার মধ্যে আড়াই লাখ টাকা ফেরত দিতে হবে বলে আপস-মীমাংসা হয়েছে।

সরেজমিন নিহতের স্বামী তানভীর হোসেন (৩৫), শ্বশুর আবু তালেব (৬০), ননদ চুমকি খাতুন (১৮), ছেলে তাজুল ইসলাম (১০), উদ্ধারকারী দেবর বকুল হোসেন (২৫), উপস্থিত আলমডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত  কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম ও প্রতিবেশীদের সাথে কথা হয়। স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজনের দাবি বুলবুলি জ্বলন্ত কেরোসিন কুপি নিয়ে ঘরে ঢুকলে তা থেকে মোটরসাইকেলে আগুন লেগে যায় এবং ওই আগুনে পুড়ে তার মৃত্যু হয়।

স্বামী তানভীর ওরফে তানসেন হোসেন জানান, মাঠে কাজ করা  অবস্থায় খবর পান স্ত্রী পুড়ে মারা গেছে। বাড়ি এসে জানতে পেরেছেন, আগুনে পুড়ে স্ত্রী মারা গেছেন। এর বেশি কিছুই জানেননা।  তানভীরের পাসে বসা ছেলে তাজুল জানায়,রাস্তা থেকে খেলাধুলা করে বাড়ি আসলে মা তাকে ভাত খেয়ে স্কুলে যেতে বলেন। এরপর একটি লম্প (কেরোসিন কুপি) নিয়ে ভাত দেওয়ার জন্য  ঘরে ঢুকলে প্রথমে মোটরসাইকেল ও পরে মায়ের গায়ে আগুন লেগে যায়। ওই সময় চিৎকার দিলে প্রতিবেশি বকুল চাচা এসে আগুন নেভায়। কিন্তু,মা মারা যায়। ( এই প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলার সময় তাজুল বারবার বাবার দিকে তাকাচ্ছিল)।  বকুল হোসেনের  (তানভীরের চাচাতো ভাই) দাবী , মাঠের শ্রমিকদের জন্য  রাস্তা দিয়ে যাবার সময় তানভীরের ঘরে মোটরসাইকেলে আগুন জ্বলতে দেখা যায়। এরপর বাইরে থেকে পানি নিয়ে গিয়ে মোটরসাইকেলের আগুন নেভানো হয়। মোটর সাইকেলের আগুন নেভানোর পর খেয়াল করেন, বুলবুলির মরদেহ খাটের উপর পড়ে আছে।  ভাতিজা তাজুলের বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বকুল আরো জানান, তাজুলসহ সকলেই তখন বাড়ির বাইরে ছিলেন। তানভীরের মা সালেমা বেগম  নাতিছেলে তাজুলকে খুঁজতে বাড়ির বাইরে গিয়েছিলেন। বকুলের বক্তব্যে যথেষ্ট গরমিল থাকলেও তাঁর কথার সাথে একমত পোষণ করেন , নিহতের শ্বশুর আবু তালেব ও  ননদ চুমকি খাতুন। তবে, নিহতের বাবা বাহার আলী ও মা হাসিয়ারা এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য করতে চাননি।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ঘরে দরজা ও একাধিক জানালা  থাকার পরও বেলা ১০ টায় কেরোসিন কুপি নিয়ে প্রবেশের কোন কারণ নেই। যেই কেরোসিন কুপি থেকে আগুনের সূত্রপাত; বাড়িতে সেই কুপি পাওয়া যায়নি। কুপি থেকে মোটরসাইকেল এবং তা থেকে গৃহবধুবর গায়ে আগুন ধরার দাবী করা হয়। অথচ, গৃহবধু পুড়ে অঙ্গার হলেও  মোটরসাইকেলটির সিট কভারের উপরিভাগে সামান্য অংশ ছাড়া আর কোথাও পোড়েনি। বকুল হোসেন পানি দিয়ে আগুন নেভানোর দাবী করলেও ঘরের মেঝেতে কোন পানির দাগ পাওয়া যায়নি। পেট্রোলের আগুন পানিতে নেভানোর দাবীও যথার্থ নয়। তাজুল তার মায়ের  গায়ে আগুন জ্বলতে দেখেছে দাবী করলেও অন্যরা বলছেন তাজুলসহ বাড়ির সকলেই তখন বাইরে ছিল । নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রতিবেশিরা জানান, একজন জীবন্ত মানুষ আগুনে পুড়ে মারা যাচ্ছে,ঠিক সে সময়ে বাড়ির সকলেরই রহস্যজনক বাইরে অবস্থানই প্রমাণ করে এটা আবার কেমন তরো কথা। পুলিশ আন্তরিক হলে মৃত্যুর সঠিক চিত্র উন্মোচন করতে পারবে। স্থানীয়রা প্রকৃত নেপথ্য উন্মোচনের প্রতিক্ষায়।

উল্লেখ্য গত পরশু আলমডাঙ্গার নতিডাঙ্গার গ্রামের তানসেনের স্ত্রী দু সন্তানের জননী বুলবুলি খাতুনের (২৮) আগুনে পোড়া মৃত দেহ উদ্ধার করা হয়। আত্মহত্যা নাকি পরিকল্পিত হত্যা? এই নিয়ে চলতে থাকে রশি টানাটানি। পুলিশ লাশের ময়না তদন্ত করতে চাইলে গৃহবধুর নিকট আত্মিয় সজন ও তার স্বামীর বাড়ির লোকজনের সাথে লাশ নিয়ে পুলিশের টানাটানি চলতে থাকে। বুলবুলির আত্মিয়রা ময়না তদন্ত করতে না চাইলে সন্দেহ আরো দানা বেধে উঠে। এ সময় আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জের গঠন মুলক বক্তব্যে তারা শান্ত হয়। গত পরশু সন্ধায় লাশের ময়না তদন্ত শেষে নতিডাঙ্গা গ্রামের পারিবারিক কবর স্থানে দাফন কাজ সম্পন্ন করা হয়।