প্রেমিক জুটির সুখ-দুঃখের সাক্ষী ঝিনাইদহের কোটচাদপুরের অমরেশ মাঝি

 

শিপলু জামান: প্রায় ৩০ বছর ধরে নৌকা বাইতে গিয়ে কতো প্রেমিক যুগলের প্রেমের গল্প শুনেছি।  নানান মানুষের প্রেম বিরহের সাক্ষী আমি, আমার নৌকা আর এই বলুহর বাওড়। অনেক বছর পরে স্ত্রী সন্তান নিয়ে আবারও এসেছে তাদের অনেকে, বখশিস দিয়েছে, নতুন জীবনের গল্প শুনিয়েছে। একা এসেছেন অনেকে, স্মৃতি বিজড়িত স্থান ঘুরে সামান্য প্রশান্তি পেতে, শুনিয়েছেন কষ্টের কথা। বৈঠা বাইতে বাইতে কথাগুলো বলেন, ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার বলুহর বাওড়ের অমরেশ মাঝি। তিনি বলেন, বহু প্রেমিক জুটির সুখ-দুঃখের সাক্ষী আমি। এই বাওড় থেকে আমি অনেক কিছুই পেয়েছি। বাওড় আমাকে অর্থ, সম্মান ও ইজ্জত দিয়েছে। তাই ৭০ বছর বয়সেও নৌকা বাইছে। শুধু অমরেশ নয় নিতাই, হরেন সমরেশসহ অনেক মাঝির সচ্ছলতা এনে দিয়েছে বলুহর বাওড়। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত তারা বাওড়ে জাল পেতে ছোট ছোট মাছ ধরে বিক্রি করেন। বিকেলে প্রেমিক যুগলকে নিয়ে বাওড় ঘুরে দেখান। বিকেলে নৌকা বেয়ে যা আয় করেন তা দিয়ে ভালোভাবেই সংসার চলে যায়।

অমরেশ জানান, বলুহর প্রজেক্ট ঘাট থেকে নৌকা বেয়ে বাওড়ের পশ্চিম তীর কাগমারি ঘাটে যাত্রী পারাপার করেন। তবে যাত্রী পারাপার থেকে বেশি আয় হয় না। এখানে বেড়াতে আসা লোকজন ঘণ্টা চুক্তিতে বাওড় ঘোরে। এতে ভালো পয়সা পাওয়া যায়। তিনি আরও জানান, প্রতিদিন নৌকা বেয়ে দেড়শ থেকে দুইশ টাকা আয় হলেও উৎসবের দিনে আয় হাজার টাকাও ছাড়িয়ে যায়। অমরেশ মাঝি বলেন, একটি নতুন নৌকা তৈরি করতে প্রায় ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়। নতুন নৌকা ৭ থেকে ৮ বছর ভালো থাকে। অমরেশ মাঝির চাওয়া বলুহর বাওড় টিকে থাকুক হাজার বছর, থাকুক দখলমুক্ত ও দূষণমুক্ত। তাহলে বাঁচবে হালদা সম্প্রদায়ের মানুষ। আর যান্ত্রিক জীবনে ব্যস্ত মানুষ পাবে পরম প্রশান্তি।