প্রতিবন্ধী সন্তান জন্ম দেয়ার অপরাধে গাংনীর এক গৃহবধূ নির্যাতিত!

 

গাংনী প্রতিনিধি: প্রতিবন্ধী সন্তান জন্ম দেয়ার অপরাধে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন মমতাজ বেগম নামের এক গৃহবধূ। নির্যাতনের ঘটনায় গৃহবধূর মামলার প্রেক্ষিতে শ্বশুর-শাশুড়িকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ঘটনাটি ঘটেছে মেহেরপুর গাংনী উপজেলার কাজিপুর গ্রামে। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে- কাজিপুর গ্রামের নাজির হোসেনের ছেলে মকবুল হোসেন (৫৫) ও তার স্ত্রী সাবিনা বেগম (৫০)।

জানা গেছে, গৃহবধূ মমতাজের কোলজুড়ে আসে একটি ফুটফুটে শিশু সন্তান। এখন তার বয়স ৬ বছর। কিন্তু সে শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী। সন্তান জন্মের পর থেকেই সে পরিবারের রোষানলে পড়ে। শিশুটির প্রতিবন্ধিতার কারণে মমতাজকে দায়ী করা হয়। মমতাজের স্বামী বিদেশে থাকায় ওই পরিবারে তিনি অসহায় হয়ে পড়েছিলেন। ওমানে অবস্থানরত তার স্বামী যোগাযোগও বন্ধ করে দেন। তাই অর্থাভাবে ছেলের চিকিৎসা করাতে পারেননি মমতাজ। মমতাজ বেগম বলেন, আমার পিতার পরিবার গরিব। পিতার সীমিত সাধ্যের মধ্যেও শিশুর চিকিৎসা চলছিলো। কিন্তু অর্থের প্রয়োজনে চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে শিশুটিকে নিয়ে অথই সাগরে পড়ি। মমতাজ আরো বলেন, শিশুর চিকিৎসা না করাতে স্বামীর পরিবার থেকে বারবার চাপ দেয়া হচ্ছিলো। কিন্তু আমি তো মা, সবাই তাকে ঘৃণা করলেও আমি তো তা করতে পারি না। স্বামীর পরিবারে অনেকটাই বন্দি জীবনের দুর্দশা বর্ণনা করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

২০০৯ সালের ১৫ জানুয়ারি কাজিপুর গ্রামের মকবুল হোসেনের ছেলে সেলিম রেজার সাথে পার্শ্ববর্তী বেতবাড়িয়া গ্রামের শাহজাহান আলীর মেয়ে মমতাজের বিয়ে হয়। প্রথম তিন বছর দাম্পত্য জীবন ভালো কেটেছে। এরপরে সেলিমের পিতামাতার কুপ্ররোচনায় সুখের সংসারে অশান্তি নেমে আসে। ১৪ মাস আগে ওমানে শ্রমিক হিসেবে পাড়ি জমান সেলিম। এতে আর্থিক সহযোগিতা দিয়েছিলেন মমতাজের গরিব পিতা। ওমানে গিয়ে কিছুদিন তার সাথে স্ত্রীর যোগাযোগ থাকার পরে তা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। পরিবারের সদস্যদের পরামর্শে স্ত্রী ও একমাত্র শিশু পুত্রের খোঁজ-খবর নেয়া বন্ধ করে দেয় সেলিম। এমনটি জানান গৃহবধূ মমতাজ। এদিকে মমতাজের মামলার প্রেক্ষিতে শুক্রবার রাতে নিজ বাড়ি থেকে মমতাজের শ্বশুর মকবুল হোসেন ও শাশুড়ি সাবিনা খাতুনকে গ্রেফতার করে গাংনী থানা পুলিশ। মামলার অপর আসামি মমতাজের দেবর আদম আলী পলাতক রয়েছে।

গাংনী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন জানান, বিষয়টি অতি মানবিক। গৃহবধূর মামলায় গ্রেফতার করে শ্বশুর-শাশুড়িকে মেহেরপুর আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা গাংনী থানার এসআই শঙ্কর কুমার ঘোষ জানান, নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের ধারায় মামলাটি দায়ের করেছেন গৃহবধূ। মামলার অপর আসামি দেবর আদম আলীকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। এদিকে প্রতিবন্ধী শিশু ও তার মায়ের প্রতি অমানবিক এই নির্যাতনের ঘটনায় এলাকাজুড়ে নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে।