প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা : অধিকাংশ চালক শিশু ও অদক্ষ অটোবাইকে নাকাল চুয়াডাঙ্গাবাসী

 

রহমান রনজু/জহির রায়হান সোহাগ: চুয়াডাঙ্গায় অটোবাইক চলাচল বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। জেলা শহরের প্রধান প্রধান সড়কে তাদের অবাধ চলাচল বিষিয়ে তুলেছে জনজীবনকে। তাদের দৌরাত্ম্যে নাকালদশা চুয়াডাঙ্গাবাসীর। দিনের অধিকাংশ সময়জুড়ে জেলা শহরে অটোবাইকের জ্যাম লেগে থাকে। এদের হাতে দুর্ঘটনা নিত্য দিনের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন নারী-শিশুসহ অনেকেই। অসংখ্য মানুষের হয়েছে অঙ্গহানি। আপাত দৃষ্টিতে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থার ইঙ্গিত চোখে পড়ছে না। বরং দিন যতোই যাচ্ছে ততোই বৃদ্ধি পাচ্ছে এর সংখ্যা।

অভিযোগকারীরা জানান, ২০১০ সালে চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরে ব্যাটারিচালিত অটোবাইক চলাচল শুরু হয়। সে সময় জেলা প্রশাসন ও পৌর প্রশাসন তেমন আমল দেয়নি। কিন্তু পরবর্তীতে তাদের বেপরোয়া চলাচল সবাইকে ভাবিয়ে তোলে। অটোবাইকের দৌরাত্ম্যে স্বাভাবিক চলাচলের কোনো সুযোগ নেই জেলা শহরে। একটু বেখেয়াল হলেই নির্ঘাত দুর্ঘটনার কবলে পড়ছেন পথচারীরা। তাছাড়া অধিকাংশ চালকই আনাড়ি ও শিশু। কারোরই কোনো প্রশিক্ষণ নেই অটোবাইক চালনায়। তারা নতুন অটোবাইক কিনেই রাস্তায় নেমে পড়ছেন যাত্রী নিয়ে। ট্রাফিক নিয়ম-কানুন না জানার কারণে তাদের হাতে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। অনেকেই পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। শহরের শহীদ আবুল কাশেম, শহীদ রবিউল হক, শহীদ আলাওল ও হাসপাতাল সড়কে অটোবাইকের বেপরোয়া চলাচলের কারণে পা ফেলার জো থাকে না। এছাড়া কলেজ রোড, কবরী রোড, কোর্ট রোড, ফেরিঘাট রোড ও ইমার্জেন্সি রোডও দিনের বেলায় চলে যায় তাদের দখলে। ট্রাফিক পুলিশও হিমশিম খায় তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে। স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা যাওয়া-আসার পথে চরম দুর্ভোগের শিকার হয় অটোবাইকের জ্যামের কারণে। চুয়াডাঙ্গা বড় বাজারে প্রায়ই দেখা যায় পুলিশ অটোবাইকের পেছনে দুমদাম করে লাঠাচ্ছে তাদের সরিয়ে দিতে। চুয়াডাঙ্গা অটোবাইক মালিক ও শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সভাপতি ওমর আলী জানান, প্রায় ২ হাজার অটোবাইক বিভিন্নভাবে জেলা শহরে চলাচল করে। অনেকেই অভিযোগ করে বলেন শুধু অটোবাইক নয়, অবৈধ পাখিভ্যান, রিকশা, আলমসাধু, নসিমন, করিমন, লাটা হাম্বার ও পাওয়ারটিলারের অবাধ চলাচলে জেলা শহর স্বাভাবিক চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। শহরে বসবাসকারী অনেকেই বলেছেন, অবৈধ যানবাহনের কারণে জেলা শহরে চলাচল খুবই বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। প্রশাসনের উচিত জেলা শহরের প্রধান প্রধান সড়ক থেকে এদের সরিয়ে দেয়া। এ ব্যাপারে চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়র ওবাইদুর রহমান চৌধুরী জিপু বলেন, চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরে যেসব অটোবাইক চলাচল করছে তাদের লাইসেন্স দেয়ার ব্যাপারে আমরা ভাবছি। তবে এখনও কাউকে দেয়া হয়নি। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, পুলিশ এদের কাছে এখন অসহায়। পারা যাচ্ছে না। মানুষের প্রয়োজনে সবাই এদের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। পুলিশও প্রয়োজনে অটোবাইক ব্যবহার করছে। চুয়াডাঙ্গার ফকিরপাড়া ও হাতিকাটা মোড়ে পুলিশ দিয়ে এদের নিয়ন্ত্রণ করা হয়, যাতে বাইরের অটোবাইক জেলা শহরে ঢুকতে না পারে। তারপরেও তাদের বেপরোয়া চলাচল রোধ করা যাচ্ছে না। তবে এদের নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে আমরা ভাবছি।