পালিত মা তার পুত্র সন্তানের মতোই আগলে রাখছেন : দিচ্ছেন দুধ

সন্তান রেখে সটকানো শিউলীর হদিস মিলছে না

স্টাফ রিপোর্টার: পাচার থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পাওয়া নবজাতকের প্রকৃত মা শিউলী খাতুন বিউটির হদিস মিলছে না। অপরদিকে পালিত মা পড়েছেন হুমকির মুখে। শিশু পাচার মামলায় গ্রেফতরকৃত দু নারীর লোকজন পালিত মায়ের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে গতকাল বৃহস্পতিবার জোর গুঞ্জন থাকলেও শেষ পর্যন্ত তারা তা করেনি।

                পালিত মা স্ট্যাম্পে লিখিতভাবে শিউলী খাতুন বিউটির নিকট থেকে তার সদ্য ভুমিষ্ঠ হওয়া কন্যাসন্তানকে নেন। একই সাথে প্রসব করা পুত্রসন্তানের সাথে দত্তক নেয়া কন্যাকে আগলে রেখেছেন তিনি। আদরে আদরে ভরিয়ে রাখছেন। বুকের দুধ দেয়ার পাশাপাশি কোটের দুধও খাওয়ানো শুরু করেছেন। পালিত মা বলেছেন, শিউলী খাতুন বিউটি এখন কোথায় তা তো বলতে পারবো না।

                শিউলী খাতুন বিউটি চুয়াডাঙ্গা রেলবস্তিতে বসবাস করতো। তিনি দরিদ্র। রোগাক্রান্ত। গত ঈদের দিন চুয়াডাঙ্গা মাতৃসদনে কন্যাসন্তান প্রসব করেন। সন্তান ফেলে চলে যাওয়ার সময় পাশের বিছানায় থাকা পুত্রসন্তান প্রসব করা মা বিষয়টি জানতে চাইলে শিউলী খাতুন বিউটি ওই কন্যাসন্তান নিতে অনাগ্রহ দেখিয়ে বলে, আমিই বাঁচতে পারছিনে, ওকে নিয়ে যাবো কোথায়? এ কথা শুনে নবজাতকের প্রতি মায়া হয়। পাশের শয্যার প্রসূতি তার পুত্রসন্তানের সাথে সাথে কন্যাসন্তানকে মানুষ করার স্বপ্ন দেখেন। তিনি একটি স্ট্যাম্পে শিউলী খাতুন বিউটির স্বাক্ষর নিয়ে চিকিৎসাবাদ ১০ হাজার টাকাও দেন। সেই টাকা নিয়ে শিউলী খাতুন বিউটি রেলবস্তির বাড়িতে ফেরে। ক’দিন পরই পার্শ্ববর্তী হকপাড়ার কাশেম আলীর স্ত্রী আকলিমা ও তার বাড়ির ভাড়াটে নয়ন ওরফে মজনুর স্ত্রী হাজেরা খাতুন ফুঁসলাতে শুরু করে। বিউটি তার সন্তানকে দত্তক নেয়া ওই মায়ের নিকট থেকে নিয়ে আকলিমা ও হাজেরার নিকট দেয়। এরা গত মঙ্গলবার নবজাতককে নিয়ে কোচযোগে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়। কোচযাত্রী, কোচের মালিক ও হেলপার-সুপারভাইজারদের সহযোগিতায় চুয়াডাঙ্গা পুলিশ দু নারীকে পাকড়াও করে। উদ্ধার করে পাচারমুখি নবজাতককে। অপরদিকে প্রকৃত মা শিউলী খাতুন বিউটি রেলবস্তি থেকে লাপাত্তা হয়ে যায়। নবজাতককে অবশ্য তার পালিত মায়ের কাছেই দেয়া হয়েছে। তিনি তার টিঅ্যান্ডটিপাড়ার বাড়িতেই রেখেছেন। তিনিই বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ এ মামলায় হাজেরা ও আকলিমাকে গতপরশু আদালতে সোপর্দ করে। বিজ্ঞ আদালত দুজনকেই জেলহাজতে প্রেরণের আদেশ দেন। গতকাল অবশ্য তাদের জামিনের আবেদন করা হয়। বিজ্ঞ আদালত আবেদন নামঞ্জুর করেন বলে সংশ্লিষ্টসূত্র জানিয়েছে।

                এদিকে গতকাল দিনভর নবজাতকের প্রকৃত মা শিউলী খাতুনকে খোঁজ করেও তার প্রকৃত ঠিকানা জানা সম্ভব হয়নি। তবে রেলবস্তিতে তার এক সতিন বসবাস করছেন। শিউলীর স্বামী আমিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ শোনা গেলেও পরে অবশ্য পুলিশের তরফে বলা হয়েছে, আমিরুল দাগি হলেও অতো বড় সন্ত্রাসী নয়। সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত হাজেরা খাতুনের স্বামী নয়ন ওরফে মজনু। এই মজনুকে দীর্ঘদিন ধরে পুলিশ খুঁজচ্ছে। তার বাড়ি আলমডাঙ্গার পল্লি হাকিমপুরে। বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছে বলেও পুলিশ তথ্য পেয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আবুল খায়েরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেছেন, মামলার জোর তদন্ত চলছে। শিশু পাচারকারীচক্রের অন্য সদস্যদের খোঁজা হচ্ছে। ঢাকায় যেখানে ওই শিশুকে বিক্রি করার প্রস্তুতি নেয়া হয়, সেখাই ঠিকানা জানার চেষ্টাও অব্যাহত রয়েছে। এসব জানার জন্যই হাজেরা ও আকলিমা খাতুনকে রিমান্ডের আবেদন জানানো হচ্ছে।