পাটনির জীবন প্রবাহ : যেখানে রাত সেখানেই কাত

 

তাছির আহমেদ: রাস্তা-ঘাটের রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে শুকরের পাল চরিয়ে চলে পাটনির জীবন। এরা কি শুধু অসহায়, নাকি সমাজের চোখে ঘৃণিত। শুকরের পাল নিয়ে দেশের এক স্থান থেকে অন্য স্থানের কোনো নিরিবিলি এবং খোলামেলা স্থানে রাত কাটিয়ে পার করে এরা যাযাবরের জীবন। আবার ভোর হলে শুরু হয় পথচলা আর হাতের লাঠির ইশারায় শুকরের পালকে শৃঙ্খলার সাথে পথ চলার শাসন। নিত্যদিনের এ চলতি পথে যেখানে রাত হয় সেখানেই তাদের পালাক্রমে ঘুম আর রাত জেগে নিজেদের পালকে পাহারা দিতে হয়। কারণ ভয়, হঠাৎ কোনো রাত চরা হিংস্র পশু এসে যদি তাদের পালের ছোট সদস্যকে ঘাট মটকে ধরে নিয়ে যায়!

এ পালের পাটনি হরিপদ সবসময় চলে আগে-আগে। আর পিছে চলে পাটনি নিমাই। ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার শ্যামকুড় গ্রামের কলোনিপাড়ার এ হরিপদ আর নিমাই এক পাল শুকর নিয়ে তাদের নিজ বাড়ি থেকে বেরিয়েছে মাসখানেক আগে। গত মঙ্গলবার দুপুরে তাদের সাথে দেখা হয় দামুড়হুদা আব্দুল ওদুদ শাহ ডিগ্রি কলেজের নিকটে। এ সময় হরিপদ জানান, মাসপ্রতি হাজার পাচেক টাকায় এ কাজ করে থাকি। খালবিল আর বনবাদাড়ে জন্মানো কচু আমাদের পালের প্রধান খাদ্য। কিন্তু এখন এরা নিরুপায়।

এ পালের আরেক পাটনি শুকমার জানান, পথে ঘাটে ঘুরতে ঘুরতে যেখানে হয় রাত, সেখানেই হতে হয় কাত। শুকরেরা পথ চলে চলে বেশ ভালো বড় হয়, আবার পথেই নেয় এরা জন্ম। ১টি মেয়ে শুকর বছরে দুবার দু-তিনেক বাচ্চা দেয়। অনেক সময় চলতি পথে এরা বিক্রি হয়। ৩ বছর বয়সের ১টি শুকরের দাম পড়বো প্রায় ৮ হাজার টাকা। খ্রিস্টান ও হিন্দু সম্প্রদায়ের ম্যাথররাই মূলত এদের প্রধান ক্রেতা। তিনি আরো জানান, তার দুটি ছেলেমেয়ে আছে তারা স্কুলে লেখাপড়া করে। পাটনির এ কাজ করে বউ-বাচ্চাদের নিয়ে কোনোরকমে বেঁচে আছি। ঘরে ফিরবো কবে সে আসায় ওরা পথ পানে চেয়ে বসে থাকে।