নিম্ন-মধ্যবিত্তদের একমাত্র ভরসা হকার্স মার্কেট

 

মাজেদুল হক মানিক: মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব হচ্ছে ঈদ। ঈদকে বর্ণিল ও আনন্দময় করতে সাধ্যমতো কেনাকাটার চেষ্টা করেন বেশিরভাগ মানুষ। বিশেষ করে নতুন পোষাক ছাড়া ঈদ আনন্দ যেন অসম্পূর্ণ। কিন্তু সাধ ও সাধ্যের সমন্বয় বলে কথা। পরিবারের সদস্যদের পোষাকের চাহিদা মেটাতে গিয়ে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষের এখন নাভিস্বাস। গত কয়েক বছরের চেয়ে এবারে কয়েকগুন দর বৃদ্ধির কারণে নতুন পোষাকের আশা ফিকে হয়ে যাচ্ছে। নিম্নবিত্ত মানুষেরা সাধ্যনুযায়ী কেনাকাটা করে মন ভরাচ্ছেন তাদের ছেলেমেয়েসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের। শুধু নিম্নবিত্ত নয়, এখানে ভিড় রয়েছে মধ্যবিত্ত মানুষেরও।

গাংনী বাস স্ট্যান্ড এলাকায় রয়েছে ফুটপাতে পোষাকের দোকান। দুই সারিতে প্রায় ১৩টি দোকানে বিভিন্ন বয়সী ব্যবসায়ীরা পোষাকের ডালি সাজিয়ে বসেছেন। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত অবধি বেচাকেনার কোনো শেষ নেই। সকাল হলেই নারী ও শিশুদের ভিড় পড়ে এখানে। পছন্দের পোষাক কিনে মনের আনন্দে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন শিশুরা। ক্রেতারা জানান, গাংনী ও বামন্দীসহ বিভিন্ন স্থানে যে বিপণীবিতানগুলো রয়েছে তাতে উচ্চ ও মধ্যবিত্তদের দখলে। পোষাকের উচ্চমূল্য তাই নিম্মবিত্ত খেটে খাওয়া মানুষের পক্ষে কেনা সম্ভব নয়। কিন্তু ঈদ বলে কথা। পরিবারের শিশুরা তো আর ধনী-গরিব বোঝে না। তারা বোঝে প্রতিবেশীদের মতোই নতুন জুতা-জামা-কাপড় কিনতে হবে। তাই এসব ফুটপাতের দোকান গরীব মানুষের জন্য আশির্বাদ বয়ে এনেছে।

গাংনী হকার্স মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। এর বেশিরভাগড় নারী ক্রেতা। মেয়েদের পোষাক বেশি পরিমাণে বেচাবিক্রি বলে জানান ক্রেতা। দেশের বিলাসবহুল মার্কেটগুলোতে যেমনি লেহেঙ্গা জাতীয় পোষাকের কদর, তেমননি ফুটপাতেও রয়েছে লেহেঙ্গা। গরীব মানুষের ক্রয় ক্ষমতার কথা চিন্তা করেও হয়তো পোষাক তৈরিকারকরা দর নির্ধারণ করেছেন। প্রতিটি লেহেঙ্গা ৩শ থেকে ৭শ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। এ মার্কেটে প্রতিদিনের বেচা-বিক্রির এক বড় অংশ জুড়ে রয়েছে লেহেঙ্গার নাম। এছাড়াও ফ্রগ ও টেপ প্রতি সেট ৮০ টাকা থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এর পরে রয়েছে ছোট ছেলেদের পোষাক। তিন মাস বয়সী থেকে শুরু করে ছয় বছর বয়সী ছেলেদের জন্য জামা সেট, গেঞ্জি সেট, ফতুয়া ও জিন্স প্যান্ট। ছেলেদের বয়স ভেদে প্রতিটি জিন্স প্যান্ট ৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৪শ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।

শুধু শিশুদের জন্যই নয়, বয়স্ক পুরুষদের পাঞ্জাবি ও শার্ট বিক্রি হচ্ছে। চাহিদাও বেড়েছে। রোজার শুরু থেকেই সব ধরণে পোষাকের ব্যাপক চাহিদা বলে জানান ক্রেতারা। এখানকার দোকানগুলোতে প্রতিটি পাঞ্জাবি ১৮০ থেকে ৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও ফুল ও হাফ হাতা বিভিন্ন মানের শার্ট রয়েছে। সুতি ১২০-১৫০, লিলেন ১৫০-২৫০ এবং ব্যান্ডের শার্ট ৪০০-৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ফুটপাতের দোকানদাররা জানান, গত কয়েক বছরের চেয়ে এবার ক্রেতাদের ভিড় বেড়েছে কয়েকগুণ। রমজানের শুরু থেকেই বেচা-বিক্রি বেশ ভালো। এবারে ভাল লাভের আশায় বুক বেধেছেন তারা। মার্কেটগুলোতে উচ্চ মূল্যের কারণে ফুটপাতের দোকানের কদর বেড়েছে বলে মনে করছেন হকার্স মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। কয়েকজন ক্রেতা জানান, প্রতিষ্ঠিত দোকানে গেলে পোষাকের মান যাই হোক দর কম নেই। একজনের পোষাক কিনতেই যে খরচ হচ্ছে তা ফুটপাতে কিনতে পরিবারের সবার খরচ মিটে যাচ্ছে। তাছাড়া আকাশচুম্বি দামের কারণে সেখানে নিম্নবিত্ত ও খেটে খাওয়া মানুষের প্রবেশের কোনো সুযোগ নেই। তাই সাধারণ মানুষের কাছে ফুটপাতেরই দোকানই একমাত্র ভরসা।