নানা সমস্যায় দিন কাটছে মেহেরপুর তেরঘোরিয়া আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দাদের

 

মহাসিন আলী: নির্মাণের ১৬ বছর পরও যথাযথ সংস্কার ও উন্নয়ন না হওয়ায় মেহেরপুর সদর উপজেলার তেরঘোরিয়া আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দারা নানা সমস্যা মাথায় নিয়ে অতিকষ্টে দিনাতিপাত করছেন। সময়ের দীর্ঘ সূত্রতায় সংসারে লোক বাড়লেও বাড়েনি তাদের থাকার ঘর। রয়েছে আর্সেনিকমুক্ত পানির অভাব। সংস্কার করা প্রয়োজন বাথরুমগুলো ও চলাচলের রাস্তা।

মেহেরপুর শহর থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নে ভারত সীমান্তের কাছাকাছি তেরঘোরিয়া আশ্রয়ন প্রকল্পটিতে ৬ শতাধিক লোকের বাস। যাদের মধ্যে ভোটার সংখ্যা প্রায় ৪শ। এলাকার ছিন্নমূল ভাসমান মানুষদের আশ্রয় করে দিতে ১৯৯৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের শাসন আমনে ৫৫ ব্যাটালিয়নের মেজর ইলিয়াস কাঞ্চনের নেতৃত্বে প্রকল্পটি গড়ে তোলা হয়। বর্তমানে প্রকল্পটির ১০টি ব্যারাকের প্রত্যেকটিতে ১০টি করে মোট একশটি পরিবার বসবাস করছেন। যাদের মধ্যে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের ২৭টি পরিবারকে আশ্রয় দেয়া হয়।

তেরঘোরিয়া আশ্রয়ন কমিটির চেয়ারম্যান আবুল বাশার জানান, ২০০০ সালের বন্যার পর তেরঘোরিয়া প্রকল্পে প্রবেশের জন্য পাকা রাস্তা করে দেয়া হয়। এছাড়া প্রকল্পবাসীর গোসল ও মাছ চাষের জন্য একটি ৩ বিঘার ও একটি দেড় বিঘার পুকুর খনন করে দেয়া হয়। এছাড়া প্রতি ১০টি পরিবারের জন্য ৪টি করে পায়খানা ও মোট ৪টি আর্সেনিকমুক্ত টিউবওয়েল স্থাপন করা হয়।

সরেজমিনে তেরঘোরিয়া আশ্রয়ন প্রকল্পে গিয়ে এসবের অস্তিত্ব খুঁজে পেলেও দেখা যায় এসবের অধিকাংশ নষ্ট হয়ে গেছে। প্রকল্পবাসীরা জানালেন- সুপেয় পানির জন্য ২০০২ সালে আশ্রায়ণ প্রকল্প এলাকায় ৪টি আর্সেনিকমুক্ত টিউবওয়েল স্থাপন করে দেয়া হলেও তার মধ্যে ৩টি নষ্ট হয়ে গেছে। দীর্ঘদিনেও এগুলো মেরামত করার কোনো উদ্যোগ নেই। ১৬ বছর আগের তৈরি টিনের ঘেরা ও ছাউনি ব্যারাকে মরিচা ধরেছে। গত বছর সরকার ছাউনি টিন ও নষ্ট নাট-বোল্ট পাল্টে দিলেও মরিচা ধরা ঘেরা টিন পাল্টে দেয়া হয়নি। ১০টি পরিবারে ৪টি করে একশতটি পরিবারের জন্য ৪০টি বাথরুম থাকলেও নষ্ট এসব বাথরুম মেরামত করা হয়নি। আশ্রয়ন প্রকল্পের রাস্তা কাঁচা হওয়ায় বর্ষায় কর্দামক্ত রাস্তা দিয়ে যাতায়াতের অসুবিধাও প্রচুর। পুকুর দুটি দীর্ঘদিনেও সংস্কার না হওয়ায় ময়লা মাটিতে ভরে গেছে। এতে গোসলের সমস্যা হচ্ছে আশ্রয়ন প্রকল্পবাসীর। অর্থাভাবে নির্মাণ করতে না পারায় পাটকাটির বেড়া ও টিনের ছাউনির নিচে চলছে আশ্রয়ন প্রকল্প মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি সংঘ ক্লাবটি।

প্রকল্প এলাকায় স্থাপিত একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৪ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা জ্ঞানের আলো জ্বালতে প্রায় ২শ শিক্ষার্থীকে নিয়মিত পাঠদান করছেন। টিনের বেড়া ও ছাউনির বিদ্যালয়টির সাইনবোর্ডে তেরঘোরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় লেখা কিন্তু তারা সরকারিভাবে বেতন-ভাতাদি পাচ্ছেন না। সে আমলের সরকারি সহযোগিতা ১০ হাজার টাকার ব্যাংক ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি না করা হলে নিজেদের উন্নয়ন সম্ভব নয় বলেও জানালেন তারা।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব মর্জিনা খাতুন জানালেন, প্রায় দেড়যুগ আগের পাওয়া ২০ ফুট দৈর্ঘের ও ৯ ফুট প্রস্থের একটি কক্ষে বর্তমানে ৩ ছেলে ও এক নাতি নিয়ে কীভাবে বাস করা সম্ভব? ছেলেদের বিয়ে হয়েছে। ঘরে বউ এসেছে। এখন কষ্ট অনেক বেড়েছে। আশ্রয়ন প্রকল্পবাসীর অনেকের দাবি গত ১৬ বছরে সন্তান বেড়েছে; তারা বড় হয়েছে। কিন্তু কোনো ঘর বাড়েনি। তাদের দাবি ঘর সংস্কার, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জাতীয়করণ, পুকুর ২টি পুনঃখনন, স্থায়ী কবরস্থান, প্রকল্পের রাস্তা পাকাকরণ ও বাথরুম সংস্কার এবং নিরাপদ পানির অভার পূরণ করা। সরকারের কাছে তাদের আরো দাবি- পাশের বিজন বিলের ওপর একটি ব্রিজ করা হলে আপদে-বিপদে তারা দ্রুত তেরঘোরিয়া গ্রামবাসীর সাথে যোগাযোগ করতে পারতো ও তাদের সহযোগিতা লাভ করা যেতো।

তেরঘোরিয়া আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দাদের সমস্যা আছে স্বীকার করে প্রকল্পের চেয়ারম্যান মেহেরপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মঈনুল হাসান জানান, সম্প্রতি খুলনা বিভাগীয় কমিশনার আব্দুস সামাদ তেরঘোরিয়া আশ্রয়ন প্রকল্প পরিদর্শন করেন এবং ৫টি ব্যারাকে ১০টি করে আরো ৫০টি নতুন ঘর নির্মাণ করে আশ্রয়ণবাসীর মধ্যে বণ্টন করা হবে বলে তিনি ঘোষণা দেন। এছাড়া অন্যান্য ভৌত অবকাঠামো সংস্কার ও উন্নয়ন করার আশ্বাস দেন তিনি।