দ্রুত কমে যাচ্ছে আবাদী জমি : মেহেরপুরে গড়ে উঠছে ফলজ ও বনজ বৃক্ষের বাগান

মেহেরপুর অফিস: কৃষি উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি এবং গাছ লাগানো লাভজনক হওয়ায় মেহেরপুরে প্রতি বছর কৃষি জমিতে গড়ে উঠছে ফলজ ও বনজ বৃক্ষের বাগান। ফলে দ্রুত কমে যাচ্ছে আবাদী জমির পরিমাণ। জেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, নতুন নতুন বাগান আর বসত বাড়ি গড়ে ওঠার কারণে প্রতি বছর শতকরা ২ ভাগ হারে আবাদি জমি কমে যাচ্ছে। ফলে মেহেরপুরে খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কা করছেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা।

মেহেরপুর জেলায় মোট আবাদ যোগ্য জমির পরিমাণ ৫৭ হাজার হেক্টর। যার মধ্যে আবাদি জমি ৫৬ হাজার ৬৬ হেক্টর। কিন্তু প্রতি বছরই কমে যাচ্ছে আবাদি জমির পরিমাণ। তবে কি পরিমাণ কমেছে তার কোনো সঠিক হিসেব নেই কৃষি বিভাগের কাছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত না হলে উৎপাদিত খাদ্য জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়। জমি উর্বর ও সমতল হওয়ায় এ জেলায় সব ধরনের ফসলের উৎপাদন ভালো হয়। ২৫ থেকে ৩০ ভাগ আবাদি জমিতে বছরে ৩ বার ফসল উৎপাদন হয়। বর্তমানে বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে চাষাবাদ শুরু হওয়ায় একটি আবাদের সাথে সাথী ফসল হিসেবে অন্য ফসলের চাষ হচ্ছে ব্যাপক হারে। কিন্তু সারসহ কৃষি উপকরণের আকাশ ছোঁয়া দামের কারণে অনেকে আবাদ ছেড়ে আবাদ জমিতে গড়ে তুলছেন ফলজ ও বনজ গাছের বাগান। মেহেরপুরের অনেক বাগানকারী জানান, বাগানে শ্রম দিতে হয় কম, খরচও কম। মাঝে মাঝে একটু পরিচর্যা করলেই হয়। আবার ব্যবসায়ীরা ফলজ বাগানের ফল আগাম কিনে নেয়। ফলে এককালীন মোটা অঙ্কের টাকা পাওয়া যায়। আর আগাম লিজ দিলে ব্যবসায়ীরাই বাগানের পরিচর্যা করে। যার কারণে অনেকে চাষি নিজের চাহিদা অনুযায়ী জমিতে ফসলের চাষ করে বাকি জমিতে বাগান গড়ে তুলছেন। তাছাড়াও প্রবাসীরা আবাদি জমি কিনে বাগান করে ফেলে রাখছেন। পাশাপাশি গড়ে উঠছে নতুন নতুন বসত বাড়ি। এতে গড়ে প্রতি বছর প্রায় ১ হাজার ১শ’ হেক্টর আবাদি জমি কমে যাচ্ছে। এভাবে কমতে থাকলে আগামী ১০ বছর পর জেলায় খাদ্য ঘাটতি দেখা দিতে পারে বলে আশয়্কা করছেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা।

জেলা কৃষি অধিদপ্তরের উপপরিচালক জানান, বাগান গড়ে ওঠার কারণে জেলায় আবাদি জমি কমে যাচ্ছে। এতে দানাদার ফসলের উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে। তবে ফলজ বাগান গড়ে ওঠার কারণে পুষ্টির চাহিদা মিটছে এবং মানুষ আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হচ্ছে। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বাগানে সাথী ফসল হিসেবে হলুদ-আদাসহ অন্যান্য ফসল চাষ করার জন্য চাষিদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

আবাদী জমি সংরক্ষণে সুষ্ঠু নীতিমালা প্রণয়ন করে বা তা প্রয়োগের পাশাপাশি কৃষি উপকরণের দাম কৃষকের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসতে পারলে এ সমস্যা থেকে উত্তরণ সম্ভব বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন কৃষি সংশ্লিষ্টরা।