দৌলৎগঞ্জ স্থলবন্দর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান

আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে আবার ক্ষমতায় আনলে এ বন্দরের ব্যাপক উন্নয়ন করা হবে

 

এমআর বাবু/সালাউদ্দীন কাজল: জীবননগর উপজেলার দৌলৎগঞ্জ স্থলবন্দরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। গতকাল শনিবার বিকেল তিনটায় নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ স্থলবন্দরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

জীবননগরের চ্যাংখালী সীমান্তে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান এমপি বলেন, জীবননগরের জীবন ফিরে এসেছে। এ জীবন আপনাদের ধরে রাখতে হবে। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে দেশের বিভিন্ন স্থানে চালু থাকা ১২টি স্থলবন্দরের মধ্যে ৯টি বন্ধ করে দিয়েছিলো। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর এসব বন্দরগুলো চালুসহ নতুন করে আরো ১০টি স্থলবন্দর চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। আপনারা যদি এ এলাকার উন্নয়ন চান এবং এ বন্দরের পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম চালু করতে চান তাহলে আপনাদের এমপি আলী আজগার টগরকে  আগামীতে আবারও ভোট দিয়ে ক্ষমতায় আনুন। মন্ত্রী বলেন, মহাজোট সরকার যদি ক্ষমতায় না আসে তাহলে এ বন্দরগুলো অস্তিত্ব থাকবে না। বিএনপি-জামায়াত সরকার এলে বন্ধ করে দেবে। আগামীতে আওয়ামী লীগকে আবার ভোট দিয়ে ক্ষমতায় আনলে এ বন্দরের ব্যাপক উন্নয়ন করা হবে। এর আগে মন্ত্রী স্থলবন্দর কার্যালয় এলাকায় ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন।

বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান অতিরক্তি সচিব জীবননগর উপজেলার সাবেক ইউএনও মোয়েজ্জদ্দীন আহম্মেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন, চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য মো. আলী আজগার টগর, বাংলাদেশ আভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের পরিচালক চুয়াডাঙ্গার সাবেক জেলা প্রশাসক ভোলা নাথ দে, চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মো. দেলোয়ার হোসাইন, চুয়াডাঙ্গা-৬ বিজিবি কমানডিং অফিসার লে. কর্নেল গাজী মো. আসাদুজ্জামান, পুলিশ সুপার মো. আব্দুল রহিম শাহ্ চৌধুরী ও জীবননগর উপজেলা চেয়ারম্যান মো. গোলাম মোর্তূজা। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন জীবননগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাজেদুর রহমান।

Minister copy

পরে নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান বন্দরইয়ার্ড এলাকায় জনসভায় ভাষণ দেন। উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি জীবননগর উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম মোর্তূজার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জনসভায় প্রধান অতিথি নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খাঁন বলেন, শেখ হাসিনার সরকার এ জীবননগর তথা চুয়াডাঙ্গা জেলায় যে উন্নয়নের ধারা সূচিত করেছে তার ধারা অব্যাহত রাখতে হতে আওয়ামী লীগ সরকারকে আবার ক্ষমতায় আনতে হবে। বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এক জনসভায় বলেছেন, বিএনপি যদি আগামীতে ক্ষমতায় আসে তাহলে আওয়ামী লীগ যা যা করেছে সর বাতিল করে দেয়া হবে। তিনি জনগণের উদ্দেশ্য বলেন, আগামীতে আওয়ামী লীগ যদি ক্ষমতায় না আসে তাহলে এ পোর্টটি কি বাতিল হয়ে যাবে? আপনারা কি চান এ পোর্টটি বাতিল হয়ে যাক। তিনি বলেন, শোকের মাস আগস্ট মাস। আজ থেকে ৩৮ বছর আগে আমাদের শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হয়েছিলো। সেই হত্যাকাণ্ডের মধ্যদিয়ে জেনারেল জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসেছিলেন। জেনারেল জিয়াউর রহমান স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির সাথে আঁতাত করে ক্ষমতায় টিকে থাকার চেষ্টা করেন এবং তাদের প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু তাদের সেই প্রচেষ্টা শেষ পর্যন্ত সফল হয়নি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আমরা করেছি। প্রধান আতিথি নৌ-মন্ত্রী  আরো বলেন, মানুষ একবার জন্মায়। প্রমাণপত্র দেখিয়ে তিনি বলেন, বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া পাঁচবার জন্মগ্রহণ করেছেন। তিনি স্কুল সার্টিফিকেট, বিয়ে, সংসদ বই ও পাসপোর্টে ভিন্ন-ভিন্ন জন্ম তারিখ উল্লেখ করেছেন। এ মিথ্যাচার কেন করলো আজ এটাই প্রশ্ন? বিএনপি-জামায়াত জোট আজ মিথ্যাচারে নেমেছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরুর পর দেশে বিএনপি-জামায়াতচক্র দেশে অরাজকতা শুরু করে। ইতোমধ্যে ১২ জন পুলিশকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। এমনি করে একের একের হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে চলছে। তিনি বিভিন্ন উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরে আওয়ামী লীগের নৌকায় আবারও ভোট প্রার্থনা করেন। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন বলেন, জীবননগরবাসীর প্রাণের দাবি আজ পূরণ হলো। আপনাদের দীর্ঘদিনের দাবি মহাজোট সরকার পূরণ করেছে। আপনারা আগামীতে আওয়ামী লীগ সরকারকে আবার ক্ষমতায় এনে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখুন। চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলী আজগার টগর বলেন, আপনাদের সার্বিক সহযোগিতায় আজ আমি এ বন্দরের উদ্বোধন করতে পেরে আনন্দিত। তিনি বলেন, আপনারা ২১ বছর ধরে যে আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে আসছিলেন আমাদের সরকার তার বাস্তব রুপ দান করলো। তিনি এলাকার সার্বিক উন্নয়নে আগামীতেও এলাকাবাসীর সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন। ঝিনাইদহ-৩ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাড. শফিকুল আজম খাঁন এ স্থলবন্দরটি চালুর ফলে আমার এলাকার মানুষও সুফল ভোগ করবে।

আব্দুস সালাম ঈশার উপস্থাপনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন- জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক দামুড়হুদা উপজেলা চেয়ারম্যান আজাদুল ইসলাম আজাদ, চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়র রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন, কালীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ারুল আজিম আনার, দামুড়হুদা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউপি চেয়ারম্যান জাকারিয়া আলম। এছাড়াও স্থানায়ী নেতবৃন্দের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জীবননগর পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি আবু মো. আব্দুল লতিফ অমল, উপজেলা যুবলীগ আহ্বায়ক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান হাফিজ, পৌর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন, উপজেলা আওয়ামী লীগ সহসাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, উথলী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সোহরাব হোসেন খাঁন প্রমূখ।

গতকাল জীবননগর উপজেলাসহ চুয়াডাঙ্গা জেলাবাসীর দীর্ঘদিনের কাঙ্ক্ষিত দাবি পূরণ হওয়ায় এলাকাবাসীর মনে উৎসবের আমেজ বিরাজ করে। অতিথিদের সম্মানে সড়ক-মহাসড়ক জুড়ে বিপুল পরিমাণ গেট ও তোরণ নির্মাণ করা হয়। টানানো হয় ব্যানার ফেস্টুন।

উল্লেখ্য, দৌলৎগঞ্জ-মাঝদিয়া শুল্ক স্টেশন ও আন্তর্জাতিক চেকপোস্টের কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৪৭ সালে। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের সময় এ চেকপোস্টের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। তবে কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেলেও ১৯৭২ সাল পর্যন্ত এখানকার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বসে বসে বেতন-ভাতা উত্তোলন করেন। পরে এ শুল্ক স্টেশনের লোকবল অন্যত্র স্থানান্তর করা হয়। ২০০৮ সালে এ স্থলবন্দরটি পুররায় চালু করার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। সর্বশেষ গত ৩১ জুলাই সরকার এটিকে স্থলবন্দর হিসেবে গেজেটভুক্ত করে।

গতাকাল বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হলো। তবে ভারতীয় অংশে মাঝদিয়া স্থলবন্দরের কোনো উদ্বোধন হয়নি। এ কারণে স্থলবন্দরের কার্যক্রম এখনই চালু হচ্ছে না। ভারতীয় সরকারের অনুমোদন মিললে উভয় দেশ যৌথভাবে এ স্থলবন্দরের উদ্বোধন করার পর এ স্থলবন্দরের কার্যক্রম পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।