দীর্ঘ অপেক্ষার পর ঈদে ঘরে ফেরার অগ্রিম টিকিট

স্টাফ পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঘরমুখো মানুষের জন্য ট্রেন ও বাসের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। সোমবার রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে ভোর থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিটের জন্য অপেক্ষা করেছেন যাত্রীরা। তবে দীর্ঘ অপেক্ষা ও ভোগান্তির পর প্রথম দিনেই বাড়ি ফেরার টিকিট পেয়ে অনেক খুশি তারা।

সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল ৮টা থেকে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়ে চলে বিকাল ৫টা পর্যন্ত। প্রথম দিন বিক্রি হয়েছে হয়েছে ২১ জুনের টিকিট। আর ওই দিন বুধবারের টিকিট বিক্রি করায় তেমন একটা ভিড় হয়নি। এছাড়া হঠাৎ বৃষ্টিতে অনেক যাত্রীই যেতে পারেননি। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ঘুরে দেখা যায়, টিকিট বিক্রির শুরুতে কমলাপুর রেলস্টেশনে যাত্রীদের ভিড় থাকলেও বেলা বাড়ার সোথ সাথে কমতে থাকে যাত্রীদের উপস্থিতি। বেলা ১১টার পর একটি কাউন্টার ছাড়া বাকিগুলোতে টিকিট প্রত্যাশীদের কোনো লাইন দেখা যায়নি। ভিড় না থাকলেও অপেক্ষমাণ যাত্রীরা টিকিট পাওয়ার আগ পর্যন্ত উৎকণ্ঠায় ছিলেন। অনেকের চোখেমুখে ছিলো আতঙ্কের ছাপ। আর কাঙ্ক্ষিত টিকিট পেয়ে গেলেই সীমাহীন আনন্দে ভেসেছেন তারা। এ সময় অনেকেই টিকিট নামক সোনার হরিণ পেয়ে সেলফিও তুলেছেন। সাথে সাথে তা আবার পোস্ট করেছেন ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

প্রথম দিনের টিকিট বিক্রির সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন ম্যানেজার শিতাংশু চক্রবর্তী বলেন, সকাল ৮টা থেকে যাত্রীরা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট সংগ্রহ করেছে। কোনো ঝামেলা নেই। আজ (গতকাল) ২১ জুনের টিকিট দেয়া হয়েছে। প্রথম দিনে যাত্রীদের তুলনামূলক চাপ কম। বৈরী আবহাওয়া এবং ২১ জুন বুধবার হওয়ায় অনেকেই যাচ্ছে না। টিকিট না শেষ হওয়া পর্যন্ত গতকাল যখনই যাত্রী আসবে আমরা দেব। স্টেশন ম্যানাজার আরো বলেন, ট্রেনের স্পেশাল সার্ভিস ২৩ জুন থেকে চালু হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু এই স্পেশাল সার্ভিস ২২ জুন থেকে চালু করার প্রক্রিয়া চলছে। সরেজমিনে গিয়ে সকাল সাড়ে আটটা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ২৩টি কাউন্টারে টিকিট বিক্রি করেছে। ভোর থেকে লাইনে যাত্রীদের ভিড় থাকলে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রী কমতে থাকে। ১১টার দিকে রাজশাহীগামী কাউন্টারে কিছুটা ভিড় ছিলো। আর বাকি কাউন্টারগুলোতে যাত্রী নেই। হঠাৎ হঠাৎ দুই-একজন এসে টিকিট নিয়ে যাচ্ছেন।

প্রসঙ্গত, আজ মঙ্গলবার বিক্রি হবে ২২ জুনের টিকিট। প্রতিদিন কমলাপুর স্টেশন থেকে বিভিন্ন রুটে ২২ হাজার ১২২টি টিকিট দেয়া হবে। এর মধ্য ২৫ শতাংশ মোবাইলে বিক্রির জন্য নির্ধারিত। ৫ শতাংশ ভিআইপি ও ৫ শতাংশ রেলের কর্মচারীদের জন্য নির্ধারিত। এদিকে আগাম টিকিট পেতে তুমুল বৃষ্টি উপেক্ষা করে সোমবার সকাল থেকেই গাবতলী-কল্যাণপুরসহ রাজধানীর বাস কাউন্টারগুলোতে ভিড় করেছে টিকিট প্রত্যাশীরা। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বৃষ্টি বাড়তে শুরু করার পর অধিকাংশ বাস কাউন্টার ফাঁকা হয়ে যায়। এদিকে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াতে না হলেও বৃষ্টির কারণে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি ছিল চরমে। তবে সব ভোগান্তি ফিকে হয়ে গেছে স্বপ্নের টিকিট হাতে পাওয়ায়।

সকাল থেকে বিভিন্ন টিকিট কাউন্টার ঘুরে দেখা গেছে, বৃষ্টি উপেক্ষা করে ঈদে বাড়িফেরার জন্য অগ্রিম টিকিট সংগ্রহ করেছেন রাজধানীবাসী। বৃষ্টির হাত থেকে যাত্রীদের রক্ষায় বিভিন্ন কাউন্টারের সামনে সাটানো হয়েছে বৃষ্টি নিরোধক কাপড় (শামিয়ানা)। তবে সকালের দিকে লাইনে দাঁড়ানো মানুষের সংখ্যা শামিয়ানাকেও ছাড়িয়ে যায়। অনেকে ছাতা নিয়ে বা সম্পূর্ণ ভিজে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট সংগ্রহ করে। পানির মধ্যে দাঁড়িয়ে টিকিট কিনতে বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয় তাদের । তবে ভোগান্তি হলেও টিকিট পাওয়ার পর সবাইকে হাসিমুখে ফিরতে দেখা গেছে। অল্প সময়ের মধ্যে টিকিট পাওয়ায় উচ্ছ্বাসও প্রকাশ করেছেন অনেকে। দুপুর ১২টার পর থেকে কাউন্টারগুলোতে টিকিট প্রত্যাশীদের সংখ্যা নাটকীয়ভাবে কমে যায়। মূলত তুমুল বৃষ্টির কারণে লোকজন বের হতে পারেনি বলেই মনে করছেন পরিবহনগুলোর লোকেরা। বাসের টিকিট মূলত আগে আসলে আগে পাবেন ভিত্তিতে দেয়া হচ্ছে। এ কারণে টিকিট নিতে আসাদের মধ্যে একটু বেশিই উৎসাহ ছিলো। ২০ থেকে ২৫ জুনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি করছে পরিবহনগুলো। ২৬ তারিখে ঈদ ধরে কাউন্টারগুলো কাজ করছে বলে জানিয়েছে। তবে ২২ ও ২৩ তারিখের টিকিটের দিকেই আগ্রহ বেশি টিকিট প্রত্যাশীদের। শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার জানান, ২২ ও ২৩ তারিখের টিকিটই বেশি বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিনের টিকিট তুলনামূলক কম নিচ্ছে সাধারণ মানুষ। ২২ তারিখে রাজধানী ছেড়ে খুলনার উদ্দেশ্যে রওনা হবেন কলেজ শিক্ষক আহম্মদ পাশা। তিনি বলেন, সকাল ১০টায় এসে অল্প সময়ের মধ্যেই টিকিট পেয়েছেন। বৃষ্টির জন্য আসতে পথে বেশ কষ্ট পেতে হয়েছে। তবে টিকিট পেয়ে তাকে বেশ খুশিই মনে হলো। অনেক পরিবহনের ২২ ও ২৩ জুনের টিকিট এরই মধ্যে শেষ হয়ে গেছে বলেও জানা গেছে। হানিফ পরিবহনের গাবতলিস্থ একটি কাউন্টার থেকে জানানো হয়, তাদের ২২ তারিখের টিকিট শেষ হয়ে গেছে। ২৩ তারিখের টিকিটও শেষের পথে। তবে ভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন পরিবহন প্রতিবছরই প্রথম দিকে কিছু টিকিট বিক্রি করে বাকি টিকিট রেখে দেয়। মূলত বেশি দামে টিকিট বিক্রির জন্য এ কাজ করা হয় বলেও জানা গেছে। আবার কালোবাজারিদের কাছেও টিকিট ছেড়ে অধিক দামে টিকিট বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। তবে পরিবহনগুলো এসব অভিযোগ অস্বীকার করে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে বলে দাবি করেছে। এ বিষয়ে সোহাগ পরিবহনের ম্যানেজার মো. সোলায়মান হোসেন বলেন, ‘বৃষ্টির কারণে টিকিট প্রত্যাশীর সংখ্যা বেশ কম রয়েছে। তবে ২২ ও ২৩ তারিখের সব টিকিট এরই মধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে। ২০, ২১, ২৪, ২৫ তারিখের বিপুলসংখ্যাক টিকিট এখনো রয়েছে। আশা করছি, আবহাওয়া ভালো থাকলে খুব শিগগিরই তাও বিক্রি হয়ে যাবে।’ টিকিট বিক্রিতে কালোবাজারি বা বেশি দাম নেয়া প্রসঙ্গে মো. সোলায়মান বলেন, ‘মালিক ও সরকারের মধ্যকার সমঝোতার ভিত্তিতে যে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে, তাই রাখা হচ্ছে। কোথাও যেন বেশি ভাড়া না নেয়া হয়, সে জন্য সব কাউন্টারকে নির্দেশ দেয়া আছে।’

বাসের টিকিট বিক্রির বিষয়ে বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও হানিফ পরিবহনের মালিক কফিল উদ্দিন কালোবাজারি বা টিকিট না দেয়ার বিষয়ে বলেন, আমাদের সংগঠনের আওতায় দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে চলাচলকারী বাসের টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, সরকার নির্ধারিত হারে ভাড়া নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এর ব্যত্যয় ঘটলে নিজেরাই সে পরিবহন বা কর্মচারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বাসের টিকিট রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনাল ছাড়াও কল্যাণপুর, টেকনিক্যাল, শ্যামলী, কলেজ গেট, মালিবাগ, সায়েদাবাদ, মহাখালীসহ প্রায় ৩০টি স্থানে দেয়া হচ্ছে। বৃষ্টির পাশাপাশি এটিকেও অল্প লোক সমাগমের একটি কারণ হিসেবে ব্যাখ্যা করছেন পরিবহনগুলোর কর্মকর্তারা।

এদিকে গতকাল রাজধানীতে বাসের টিকিট বিক্রির বিষয়ে কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া শাখার ডিসি মাসুদুর রহমান এ বিষয়ে প্রতিবেদককে বলেন, বেশি ভাড়া নেয়া, কালোবাজারি বা টিকিট আটকে রাখার কোনো ধরনের খবর সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তাদের কাছে আসেনি। এ ধরনের কোনো তথ্য পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান মাসুদুর রহমান।

অনলাইনে বাসের টিকিট: এদিকে অনলাইন মাধ্যমে বিক্রি হচ্ছে বাসের অগ্রিম টিকিট। সহজ ডটকম নামের একটি প্রতিষ্ঠান এ সেবা দিচ্ছে। সহজ ডটকমের জ্যেষ্ঠ বিপণন ব্যবস্থাপক মির্জা মুহাম্মাদ ইলিয়াস গণমাধ্যমকে এ বিষয়ে বলেন, আমরা অনলাইন ও অ্যাপের মাধ্যমে টিকিট বিক্রি করছি। ভালো সাড়া পাচ্ছি। সকাল থেকে অনেক মানুষ এটি ব্যবহারের কারণে কিছুটা চাপ ছিলো। আজ প্রায় ৩০ হাজার মানুষ ওয়েবসাইট ও অ্যাপের মাধ্যমে টিকিট কেনার চেষ্টা করেছেন। তিনি জানান, তারা প্রায় ৪৩টি বাসের সাথে চুক্তি করে টিকিট বিক্রি করছেন।