দারিদ্র্যই যখন আতিয়ারের লেখাপড়ার অন্তরায়

 

হাসেম রেজা: পাতা ঝরার দিন। তপ্ত দুপুর। রোদ্দুরেও আতিয়ারের নেই অবসর। ক্যামেরায় ক্লিক করতেই আতিয়ার বলে উঠলো-‘বাড়িত খড়ি নাই, মায়ের ম্যালা কষ্ট। পান্তা খেয়েছি। তাই দুপুরের পাতা কুড়াবার জন্য বাহির হয়েছি।’ মানুষের অদম্য ইচ্ছে থাকলেও কিছু কিছু সমস্যা সেই ইচ্ছায় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। সে সকল বাধা অতিক্রম করে কিছু পরিবার ও সম্প্রদায় তাদের শিশুদের আলোকিত জীবনে এগিয়ে নিতে পারে না। তাদের অনেক আশা আকাঙ্ক্ষা থাকলেও দারিদ্র্যের কারণে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছুতে পারে না পরিবারের লোকজন। শুধু দারিদ্র্যেই এদের আলোকিত জীবনে যেতে বাধা হয়ে দাঁড়ায়, পাশাপাশি  এদের অনেক সমস্যা।

দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গার মিশনপাড়ার এক কিশোরকে ফকিরখালীর সড়কের দু ধারে গাছের শুকনো পাতা সংগ্রহ করে বস্তা ভরতে দেখে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি কি লেখাপড়া করো না? সে জানালো, ৬ষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছি। বয়স  অনুমান ১২ বছর। লেখাপড়া বাদ দিয়েছে এক বছর আগে। তার নাম আতিয়ার রহমান। সে কার্পাসডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করতো। পিতা-মাতার অভাবি সংসার লেখাপড়ার খরচ, স্কুল ড্রেস দিতে পারে না। পাশাপাশি স্কুলে যাওয়া-আসায় পথ খরচ হয় এবং প্রাইভেট স্যারের কোচিং ফি। এ কারণেই স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে সে। গ্রামীণ জনপদে এ রকম হাজার হাজার পরিবার প্রচণ্ড শীত-গরমে দুর্বিষহ জীবন-যাপন করে। তাই এসব সমস্যা মাথায় নিয়েও খড়কুটো, শুকনো পাতা সংগ্রহ করতে হয়। তারপরও তার চোখে-মুখে স্বপ্নের হাতছানি। মনে ছিলো আশা। বেঁচে থাকার জন্য নিরন্তর সংগ্রামে প্রতিনিয়ত দুঃখ-কষ্টকে সাথী করে নিয়েছে। এসব অভাবি সংসারের ছেলে-মেয়েরা অনেকেই ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাচ্ছে। আর কেউ কেউ এভাবেই বেঁচে থাকছে। সমাজের বিত্তবান ব্যক্তিরা যদি এই আতিয়ারদের পাশে দাঁড়ান, তাহলে সত্যি সত্যিই তাদের যেমন স্বপ্ন পূরণ হবে, তেমনি বাংলাদেশও একদিন কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছুবে।