দামুড়১০ বছর বয়সী শিশুকে গাঁজা খাওয়ানোর প্রতিবাদ করায় নেশাখোর স্বামীর লাঠির আঘাতে স্ত্রী মৃত্যুশয্যায়

 

দামুড়হুদা/হাউলী প্রতিনিধি: দামুড়হুদায় ১০ বছর বয়সী শিশুকে গাঁজা খাওয়ানোর প্রতিবাদ করায় পিংকি (২৩) নামের এক গৃহবধূকে বাটাম দিয়ে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করেছে নেশাখোর পাষণ্ড স্বামী বিপ্লব। এক সন্তানের জননী আহত গৃহবধূকে বেহুশ অবস্থায় দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। তার মাথায় একাধিক সেলাই দেয়া হয়েছে। এছাড়া তার সারা শরীরে কালশিরা আঘাতের চিহৃ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় আহত গৃহবধূর পিতা বাদী হয়ে স্বামী, শাশুড়ি ও ননদকে আসামি করে দামুড়হুদা মডেল থানায় মামলা দায়ের করেছেন। গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার নতুন বাস্তুপুর গ্রামে ওই ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার নতুন বাস্তুপুর গ্রামের আবু বকরের মেয়ে পিংকির সাথে প্রায় ৪ বছর আগে প্রতিবেশী দরুদ আলীর ছেলে আল-মামুন বিপ্লবের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়েরন কিছুদিন পর বিপ্লব নেশার জগতে পা বাড়ায়। সে প্রায়ই মদ খেয়ে বাড়ি ফিরতো। এ নিয়ে স্ববামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্যসহ সংসারে প্রায়ই অশান্তি গেলে থাকতো। মেয়ের নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে এক পর্যায়ে পিংকিকে ছাড়িয়ে নেয়ারও সিদ্ধান্ত নেয় মেয়ের পরিবারের লোকজন। নেশা ছেড়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতিতে শেষমেষ উভয় পরিবারের মুরব্বিদের মধ্যস্থতায় সে যাত্রায় টিকে যায় পিংকি-বিপ্লবের সংসার। এরই মাঝে তাদের সংসারে একটি পুত্র সন্তান জন্ম নেয়। আসাদ নামের ওই শিশু পুত্রের বয়স আড়াই বছর। বিপ্লব সম্প্রতি বাড়ির সামনে একটি মুদিদোকান দিলেও ছাড়তে পারেনি নেশা। বিপ্লব গোপনে প্রায়ই মদ গাঁজা খেতে শুরু করে। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রতিবেশী মৃত শহিদুলের ১০ বছর বয়সী শিশু ছেলে গাফ্ফারকে গ্রামের হুনুমানডাঙ্গা মাঠে নিয়ে যায় এবং গাঁজা সেবন করায়। শিশু গাফ্ফার গাঁজা সেবন করে মাঠে প্রায় ২/৩ ঘন্টা বেহুশ হয়ে পড়েছিল। গাফফারের ফুপাতো ভাই হযরত ওই সময় মাঠে গিয়ে তাকে বেহুশ হয়ে পড়ে থাকতে দেখে। সে তাৎক্ষণিকভাবে ভাড়ে করে পানি নিয়ে এসে তার মাথায় ঢেলে তার জ্ঞান ফেরায় এবং বাড়ি পৌছে দেয়। এ ঘটনার জের ধরে শিশু গাফফারের নানা আনছার আলী গতকাল সকালে বিপ্লবদের বাড়িতে আসেন এবং বিষয়টি তার পরিবারের লোকজনকে জানায়। ঘটনাটি জানার পর এক সন্তানের জননী গৃহবধূ পিংকি তার স্বামীকে বলে তুমি নিজে নেশা করে সংসার ধ্বংস করছো আবার বাপ মরা একটি শিশুকে মাঠে নিয়ে গিয়ে গাঁজা খাইয়েছো। সে যদি মারা যেতো তাহলে কী হতো তা একবার ভেবে দেখেছে। তোমার সংসারেও তো একটি শিশুসন্তান জন্ম নিয়েছে। তার কথা কী তুমি একবারও ভাববে না। তুমি মানুষ না অন্য কিছু? এ কথা বলার সাথে সাথে মাতাল স্বামী বিপ্লব বাটাম দিয়ে স্ত্রী পিংকিকে বেধড়ক পিটিয়ে জখম করে। লাঠির একটি আঘাত মাথায় লাগলে স্ত্রী জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। মাথা ফেটে প্রচুর রক্তক্ষরণ হতে থাকে। লাঠির আঘাতে গৃহবধূর সারাদেহ থেতলে দেয়া হয়। তার সারা শরীর জুড়ে শুধুই আঘাতের কালো চিহৃ। এরই একপর্যায়ে প্রতিবেশীরা ঠিক পেয়ে তাকে বেহুশ অবস্থায় দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে (চিৎলা হাসপাতালে) ভর্তি করে।