দামুড়হুদায় জনতার হাতে দু ছাগল চোর আটক : আরো ৪ ছাগল চোর সনাক্ত : সালিশ বৈঠকে ১২ হাজার টাকা জরিমানা

স্টাফ রিপোর্টার: দামুড়হুদায় ছাগল চুরি করে পালিয়ে যাওয়ার সময় সুরুজ (২৪) ও সাইফুল (৩০) নামের দু ছাগল চোরকে আটক করে পুলিশে দিয়েছে জনগণ। সুরুজ চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের হেকমত আলীর ছেলে এবং সাইফুল জেলা শহরের দৌলাতদিয়াড়ের আয়ুব আলীর ছেলে। অবশ্য কেউ কেউ বলেছে সাইফুলের বাড়িও হাতিকাটায়। আটক সুরুজ নিজেদের ভদ্র পরিবারের সন্তান পরিচয় দিয়ে জানায়, সে একজন অটোচালক। গতকাল রোববার চুয়াডাঙ্গা থেকে যাত্রী নিয়ে জুড়ানপুরে যায়। ওখান থেকে চুয়াডাঙ্গা ফেরার পথে বিকেল ৩টার দিকে দামুড়হুদার ব্র্যাকমোড়ে পৌঁছুলে প্যান্ট শার্ট পরা টুকটুকে ফর্সা গোলগাল চেহারার এক ভদ্রলোক আমাদের বলে তোমরা কি আমার ছাগলটা চুয়াডাঙ্গা চৌরাস্তায় পৌঁছে দিতে পারবা। আমরা ৫০ টাকা ভাড়া চুক্তি করে একটি খাসি ছাগল অটোয় তুলে চুয়াডাঙ্গার উদ্দেশে রওনা হওয়ার সাথে সাথে পেছন থেকে ছাগল চোর বলে চিৎকার দিতে দিতে বেশ কয়েকজন লোক আমাদের অটো থামায় এবং পুলিশ ডেকে আমাদের পুলিশের হাতে তুলে দেয়। এ বিষয়ে দামুড়হুদা মডের থানার এসআই মনির বলেন, দামুড়হুদা ব্র্যাকমোড়স্থ অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য মিনহাজ উদ্দিনের একটি খাসি ছাগল চুরি করে নিয়ে যাওয়ার সময় জনগণ তাদেরকে আটক করে।
এ দিকে দামুড়হুদা দশমীপাড়ার তৈয়বের ছেলে আরিফুল, একই পাড়ার মালিথা বাড়ির মান্নান মালিথার ছেলে রিপন, ঘাটপাড়ার কুদ্দুসের ছেলে জাকির ও বসুতিপাড়ার নেংটের ছেলে আতিয়ার এই ৪ জনের বিরুদ্ধে ছাগল চুরি করে বিক্রির অভিযোগ ওঠেছে। অভিযোগ প্রমানিত হওয়ায় সালিশ বৈঠকে ওই ৪ জনের নিকট থেকে ১২ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
জানা গেছে, দামুড়হুদা গার্লস স্কুলপাড়ার বাসিন্দা মৃত খাদেম হোসেনের ছেলে প্রিন্সদের একটি খাসি ছাগল গত শুক্রবার জুম্মার নামাজ চলাকালিন সময় বাড়ির সামনে থেকে চুরি হয়ে যায়। নামাজ শেষে ছাগল না পেয়ে প্রিন্সসহ তার পরিবারের লোকজন ছাগল খোজাখুজি শুরু করে। এরই এক পর্যায়ে তারা জানতে পারে বিষ্ণুপুর গ্রামের এক অটোচালক ওই খাসি ছাগলটি অটোয় করে গোকুলখালী হাটে নিয়ে পৌঁছে দেয়। গতকাল রোববার প্রিন্স তার লোকজনকে সাথে নিয়ে বিষ্ণুপুরে যায় এবং ওই অটোচালককে খুজে বের করে। অটোচালককে ছাগলের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই বেরিয়ে পড়ে খলের বিড়াল। সে জানায় আমি ভাড়া চুক্তিতে ছাগল হাটে নিয়ে গিয়েছি। তারা ৪ জন ছিলো। ওর মধ্যে একজনকে আমি চিনি। সে দামুড়হুদা বাসস্ট্যান্ডের অটোর স্টাটার। তার নাম আতিয়ার। চোর শনাক্ত করতে ধরে নিয়ে আসা হয় ওই অটোচালককে। সে দামুড়হুদায় এসে আতিয়ারকে চিনিয়ে দেয়। আতিয়ারকে ওই ছাগল চুরির বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে বলে আমি একা ছিলাম না। আমার সাথে রিপন, জাকির ও আরিফুল ছিলো। শেষমেষ বিষয়টি দামুড়হুদা সদর ওয়ার্ড মেম্বার হাশেম মেম্বার ও দামুড়হুদা বাজর বনিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইউসুফকে জানানো হয়। তারা গতকাল সন্ধ্যায় সালিশ বৈঠকের মাধ্যমে ঘটনার বিস্তারিত শুনে ওই ৪ জনকে ১২ হাজার টাকা জরিমানা করেন। জরিমানার টাকা লোক মারফত বিচারকদের হাতে পৌঁছে দেয় ওই ৪ ছাগল চোর। বিষয়টি জানাজানি হয়ে পড়লে টক অব দি টাউনে পরিনত হয়।
এদিকে ওই ঘটনার পর দামুড়হুদার জুড়ানপুর, জয়রামপুর, হাউলী, দেউলীসহ আশপাশ বিভিন্ন গ্রাম থেকে দু মাসের ব্যবধানে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ টি ছাগল চুরি হয়েছে বলে এলাকাবাসিরা জানায়। অনেকেই ফোন করে বলেছেন, ওই ৪ জনের সাথে আরো ২/৩ জন আছে। পুলিশ ওদের ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই বাকি চোরদের নাম ঠিকানাসহ গডফাদারদেরও মুখোশ উম্মোচিত হবে।