দামুড়হুদায় আশঙ্কাজনক হারে দেখা দিয়েছে ডায়রিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব : এক সপ্তার ব্যবধানে শতাধিক শিশু আক্রান্ত

বখতিয়ার হোসেন বকুল: দামুড়হুদা উপজেলায় অনেকটা আশঙ্কাজনক হারে ডায়রিয়া রোগ দেখা দিয়েছে। এতে এক সপ্তার ব্যবধানে প্রায় শতাধিক শিশুসহ বৃদ্ধরা এ রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। বাসি পচা খাবার না খাওয়ানোর পাশাপাশি অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও অতিরিক্ত ঠান্ডা থেকে শিশু ও অতিবৃদ্ধদের দুরে রাখতে পরামর্শ দিয়েছেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার মোক্তারপুর গ্রামের ওসমানের ১ বছর ৩ মাস বয়সী শিশুকন্যা আফরিনা, ঠাকুরপুর গ্রামের শফিকুল ইসলামের ২ বছর বয়সী শিশুকন্যা ইয়াসমিন, কুড়ুলগাছি গ্রামের আল-মামুনের ১৬ মাস বয়সী ছেলে ফেরদৌস গতকাল শুক্রবার সকালে ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হয়। তাদেরকে দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রাখা হয়েছে। একইভাবে গত বৃহস্পতিবার দামুড়হুদা সদরের শাহিনের ৮ মাস বয়সী শিশুপুত্র আল রাফি, বদনপুর গ্রামের শামিমের ৭ মাস বয়সী শিশুপুত্র শাহিন, দুর্গাপুর গ্রামের মনিরুরের দেড় বছর বয়সী শিশুপুত্র আব্দুল্লাহ, হেমায়েতপুরের শহিদুলের ৬ মাস বয়সী শিশুপুত্র হৃদয়, হোগলডাঙ্গার স্বপনের ১ বছর বয়সী ছেলে ইয়ামিন, জুড়ানপুরের রেজাউল করিমের ১ বছর বয়সী শিশুকন্যা সুমাইয়া, দামুড়হুদার মসলেমের বৃদ্ধা স্ত্রী জাহারন (৭৫), গত বুধবার পুরাতন বাস্তুপুরের ফটিক বিশ্বাসের ছেলে হাকিম (৩৫) একই গ্রামের বখতিয়ারের স্ত্রী ময়না (৩০), জয়রামপুরের শাখাওয়াতের ১ বছর বয়সী শিশুকন্যা রাইসা, ছোট দুধপাতিলার হাসানের ২ বছর বয়সী মেয়ে শেফা, গত মঙ্গলবার দামুড়হুদা সদরের হায়দারের ১ বছর ৩ মাস বয়সী শিশুকন্যা তামান্না, একই গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে এমদাদুল (২৮), হাতিভাঙ্গা গ্রামের মমিনের স্ত্রী উম্মে হানি (১৬), ঠাকুরপুর গ্রামের আব্দুস সাত্তারের বৃদ্ধা স্ত্রী হাসিনা বেগম (৬৫), একই গ্রামের আক্তারুজ্জামনের ৯ মাস বয়সী ছেলে মুজাহিদ, কাদিপুরের ডালিমের ২ বছর বয়সী ছেলে ইছা, একই গ্রামের আবু সামার ১ বছর বয়সী শিশুকন্যা মরিয়ম, কার্পাসডাঙ্গার আব্দুর রহিমের ১০ মাস বয়সী শিশুকন্যা তাসমিরা, গত সোমবার চিৎলা গ্রামের মজিবারের স্ত্রী জাহানারা খাতুন (৩০), ঠাকুরপুরের হাসানের ৯ মাস বয়সী শিশুপুত্র ইসমাইল, মজারপোতা গ্রামের ইমরানের স্ত্রী ছালমা খাতুন (২০), একই গ্রামের ইমরানের ৯ মাস বয়সী শিশুপুত্র নিরব, পীরপুরকুল্লাহ গ্রামের আনোয়ারের ১ বছর বয়সী শিশুপুত্র মুজাহিদ, একই গ্রামের শহিদুলের ১ বছর ৪ মাস বয়সী ছেলে জুনাইদ, জয়রামপুরের আক্তারের স্ত্রী রাফিজা খাতুন (৩০), জুড়ানপুরের জমির উদ্দিনের ৮ মাস বয়সী ছেলে শিলন, ওসমানপুরের রেজাউল হকের ৯ মাস বয়সী শিশুকন্যা রিক্তা, কার্পাসডাঙ্গার রহিদুজ্জামানের ৩ মাস বয়সী শিশুপুত্র আহাদ, জয়রামপুরের সুজনের ১ বছর বয়সী ছেলে আশিক, গোবিন্দপুরের হারুনের স্ত্রী রাজিয়া খাতুন (৪০), কানাইডাঙ্গার আব্বাস আলীর ২ বছর বয়সী ছেলে জাহাঙ্গীর, একই গ্রামের রফিকুরের ১ বছর বয়সী মেয়ে নুসরাত জাহান, গত রোববার দামুড়হুদার শামসুলের স্ত্রী মর্জিনা খাতুন (৪৫), মোক্তারপুরের মৃত ফজলুর ছেলে রহিদ (৬৫) ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে চিৎলা হাসপাতালে ভর্তি হয়। এরমধ্যে বেশ কয়েকজনকে চিকিৎসা শেষে বাড়িতে নেয়া হয়েছে।
এদিকে অতিরিক্ত শিশু রোগীর কারণে অনেকেরই মেলেনি হাসপাতালের বেড। ফলে হাসপাতালের বারান্দায়ও থাকতে দেখা গেছে বেশকিছু রোগীকে। এ বিষয়ে দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. একরামুল হক জানান, ডায়রিয়া মূলত পানিবাহিত রোগ। ফুড পয়জনিং, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ এবং অতিরিক্ত ঠাণ্ডাজনিত কারণেও এ রোগ হয়ে থাকে। বিশেষ করে শিশু ও অতি বৃদ্ধদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। তাই এ রোগ শিশু ও বৃদ্ধদেরই বেশী আক্রমণ করে থাকে। পরামর্শ হিসেবে তিনি বলেন, বাসি-পচা খাবার না খাওয়ানোর পাশাপাশি অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও অতিরিক্ত ঠাণ্ডা থেকে শিশু ও অতিবৃদ্ধদের দূরে রাখতে হবে।