দামুড়হুদার রায়সার বিলে উন্মুক্ত জলাশয়ে পাতিহাঁস পালনে স্বাবলম্বী

তাছির আহমেদ: দামুড়হুদার রায়সা বিলের উন্মুক্ত জলাশয়ে ঝিনাইদহ মহেশপুরের গঞ্জের আলী পাতিহাঁস লালনপালন করে সাড়া জাগিয়েছেন। তিনি উপজেলার দর্শনা-মুজিবনগর সড়কের কুডুলগাছি স্কুলপাড়ার এসেছিলেন মাস তিনেক আগে। সেই থেকে রায়সা বিলের আনন্দবাজার এলাকায় বিলের ধারে এবং রাস্তার পাশে একটি ঝুঁপড়ি ঘরে বসবাস শুরু করেন। স্থানীয় লোকজনের সার্বিক সহযোগিতায় রায়সা বিলের মুক্ত জলাশয়ে পাতিহাঁস লালনপালন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন।

গঞ্জের আলী বলেন, নিজের মূলধন না থাকায় চুয়াডাঙ্গার কুলপালার জাকির নামের এক হ্যাচারি মালিকের সাথে অর্ধেক লাভে এ পাতিহাঁস লালনপালন শুরু করি। শর্ত মোতাবেক হ্যাচারি মালিক পাতিহাঁসের বাচ্চা দেয় আর আমি তা লালনপালন করে খরচ খরচা বাদে নীট আয়ের অর্ধেক তাকে দিই। বর্তমানে তার অধীনে ৬শটি ডিম দেয়া হাঁস রয়েছে। এরা এখন প্রতিদিন গড়ে ডিম দেয় প্রায় ৩শটি। ৬শ হাঁসের প্রতিনিয়ত দেখাশোনা করার জন্য নিজের একার পক্ষে সম্ভব না হওয়ায় গ্রামের জামাত আলী নামের এক রাখাল রেখেছি ৫ হাজার টাকা দিয়ে। সকালে হাঁসগুলো বিলে ছেড়ে দিয়ে সারাদিন সে দেখাশোনা করে। সন্ধ্যা হলে তাদের নিজ ঝুঁপড়ি ঘরের পাশে একটি ঘরে নিরাপদ হেফাজতে রাখে। সকালে ডিম নেয়ার পর আবার ছেড়ে দেয়া হয় রায়সা বিলের মুক্ত জলাশয়ে। বিলে খাবার কমে যাওয়ার কারণে ডিমের পরিমাণ ও কমে গেছে। তাই প্রতিদিন প্রায় আড়াই মণ ধান এদের জন্য পানিতে ছিটিয়ে দিয়ে খেতে দিতে হয়। বর্তমান দর হিসেবে তার সব মিলিয়ে তার আড়াই লাখ টাকার হাঁস রয়েছে। হাঁসের ডিমগুলো বাজারে সাড়ে আট টাকা দরে পাইকারি বিক্রি করে দেয়া হয়।

গঞ্জের আলী আরও বলেন, খাল-বিল, হাওড়-বাঁওড়, নদী-নালা ও মুক্ত জলাশয়ে এরা দল বেধে চলাচল করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। গ্রামীণ জনপদে শেয়াল তাদের বড় শক্র। শেয়াল সুযোগ বুঝে হামলা করে হাঁস ধরে নিয়ে যায়। হাঁস দল বেঁধে চলার কারণে কোনো প্রকার শত্রুর টের পেলে প্যাক প্যাক করে সবাইকে সর্তক করে দেয়। হাঁসের মাংস খেতে বেশ সুস্বাদ, শীতের সময় খুব চাহিদা থাকার কারণে শীতকালে বেশি বিক্রি হয়ে থাকে। প্রতিদিন তদারকিতে বয়োবৃদ্ধির সাথে সাথে এরা ডিম দেয়। দীর্ঘ ১৬টি বছর ধরে বিভিন্ন স্থানে এ ধরনের হাঁসপালন করে সফলতা আর অভিজ্ঞতা নিয়ে কাজ করে আসছি। তাই হাঁস পালন করে আজ আমি স্বাবলম্বী। এ এলাকায় হাঁস প্রথম পালন করেতে এসে দারুণ সফলতা পেয়েছি।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকতা ডা. এএইচএম শামিমুজ্জামান বলেন, হাঁসকে জলজপাখি বলা হয়। এরা খাল-বিল, পুকুর, হাঁওড় ও নদীর ছোট জলজ প্রাণী। এরা সারাদিন প্রাকৃতিক উৎস থেকে বিভিন্ন ধরনের খাদ্য যেমন ছোট মাছ, শামুক, জলজ উদ্ভিদসহ বিভিন্ন শস্যদানা ও কীটপতঙ্গ নিজেরাই সংগ্রহ খেঁয়ে বেঁচে থাকে। হাঁস তৃণলতা এবং খাবারের উচ্ছিষ্টাংশ খেতে পছন্দ করে। হাঁসের খাবারের সাথে পানি মিশিয়ে খাওয়াতে হয়। তারা শুষ্ক খাদ্যের চেয়ে ভেজা খাবার খেতে পছন্দ করে। এলাকার যে সব স্থানে পতিত জমি, খাল-বিল, নদী নালা রয়েছে সেখানে এ পদ্ধতি হাঁসপালন সবচেয়ে বেশি উত্তম ও লাভজনক। হাঁসকে সময়মতো টিকা ও কৃমিনাশক ট্যাবলেট খাওয়াতে হবে। তা না হলে হাঁস প্লেগ, কলেরা রোগে আক্রান্ত হতে পারে।