দামুড়হুদার বহুল আলোচিত নুর ইসলামের কালো মাজন

ঘুমাও তুমি নিশ্চিন্তে : আমরা আছি জেগে

 

তাছির আহমেদ: ‘ওই রাত ঘুমালো, ওই চাঁদ ঘুমালো, নিভে গেছে, একে একে, সব আলো। আমি জেগে আছি একা, ঘুম নেই চোখে, ঘুম নেই চোখে। নিশ্চুপ রাত কাটে একা নীরবে, অসহ্য কষ্টের ঝড় ওঠে এই বুকে। দুঃখ গড়িয়ে পড়ে শুধু এ দু চোখ বেয়ে, আসে না তো ঘুম, শুধু যায় ফাঁকি দিয়ে।’ জনপ্রিয় ব্যান্ডশিল্পী আইয়ুব বাচ্চুর নব্বই দশকের জনপ্রিয় এ গানের কথার সাথে মিল খুঁজে পাওয়া যাবে দামুড়হুদার বহুল আলোচিত নুর ইসলামের জীবনচিত্র। কালো মাজন খ্যাত এই নুর ইসলাম প্রায় পাঁচ বছর দামুড়হুদা বাজারের পথে পথে দিন কাটালেও তাকে নিয়ে কেউ কখনও বিশেষভাবে ভাবেনি। এ কারণে এ পাঁচটি বছরের মধ্যে সে কখনও পেটপুরে খেতেও পায়নি।

দামুড়হুদা উপজেলার আমডাঙ্গা গ্রামের বশির শাহের একমাত্র ছেলে এ কালো মাজনখ্যাত নুর ইসলাম (৫০)। জেলা উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় মজার মজার কথার সাথে বিভিন্ন কৌশল মিশিয়ে মজমা বসিয়ে দাঁতের রোগ ও পরিষ্কারের জন্য বিশেষ গুণাবলির নিজ হাতে তৈরি করা কালো মাজন বিক্রির উপার্জিত অর্থ দিয়ে সে তার স্ত্রী ও একমাত্র সন্তান মহিবুলকে নিয়ে বেশ খুশির ফোয়ারায় দিন কাটাতেন। কিন্তু কেন আজ সে পথে পথে? পেটটি ভরে কেন সে একবেলা খেতে পায় না? আমরা তাকে খেতে না দিলে কেন সে চেয়ে খায় না? এ সকল প্রশ্নের উত্তর আমরা কেউ না জানলেও এ কালো মাজন বিক্রেতা নুর ইসলাম জানে।

গত রোববার সকাল ১০টার দিকে বাবু খান গ্রুপের দামুড়হুদা বিএনপি খুলনার উদ্দেশে যখন রওনার শেষ প্রস্তুতি নিচ্ছে- খালেদা জিয়ার সালাম নিন, ধানের শীষের পক্ষ নিন স্লোগানে চারিদিকে গুমগুম করছে, ঠিক তখনও ছন্দা ইলেকট্রনিক্সের ওয়ালটন শোরুমের দেয়ালে এ নুর ইসলাম হেলান দিয়ে নিত্য ব্যবহার্য জিনিসগুলো শরীরের বিভিন্ন অংশ চাপা দিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে। গতকাল মধ্যরাতে তাকে দেখা যায়, সেই একই জায়গায় বসে, টিনের কৌটা আর বাঁশের কাবারি দিয়ে নিজ হাতের তৈরি সাধের একতারাটি টুংটাং আওয়াজ ছড়িয়ে মনের আনন্দে মৃদুস্বরে গুনগুন করছে। কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম কেমন আছেন? মাথা উঁচু করে একবার দেখে নিয়ে আবার গুনগুন আরম্ভ করলেন। চকচকে ২০ টাকার একটি নোট তার দৃষ্টি আকর্ষণ করালে, তিনি একতারার টুংটাং শব্দ আর গুনগুন আওয়াজ বন্ধ করেন। এবার ফাঁসির কাঁঠগড়ায় সাক্ষাতকার দিতে প্রস্তুত। উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের নিচে আমডাঙ্গা গ্রামের বশির শাহের সাত মেয়ে ও এক ছেলে নুর ইসলাম। নতুন হাউলীর মোসা করিমের মেয়ে মাজেদার সাথে সাংসারিক জীবনে জন্ম নেয় এক পুত্রসন্তান। নাম তার মহিবুল। বছর দশেক আগে দশমীর এক যুবক তার স্ত্রী মাজেদাকে কেড়ে নেয়। এ কারণে তার সন্তানটি হারিয়ে যায়। স্ত্রী-সন্তান হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ে নুর ইসলাম। দুঃখ কষ্ট আর বেদনায় আজ তার এ দশা। সে এখন জানেনা তার পিতা-মাতা বেঁচে আছেন নাকি মরে গেছেন। স্ত্রী-সন্তান কোথায় কীভাবে আছে তাও সে জানে না। ২০ টাকা পকেটে গুজে টুপলা টুপলি আর একতারা হাতে নিয়ে উঠে পড়লো কোথাও কিছু খোঁজার আশায়।