দামুড়হুদার পল্লিতে ৭০ বছরের প্রতিবন্ধী গফুর মাত্র ৩৩ ইঞ্চি লম্বা

অসহায় জীবনযাত্রা আর চালচলনের ভাব দেখলে কেঁদে উঠবে মন

 

তাছির আহমেদ/এমআর কচি: দামুড়হুদার পীরপুরকুল্লা গ্রামের একদম শেষ মাথার রাস্তায় খুব ছোট ছোট কদমে হাঁটছেন উপজেলার সবচেয়ে বয়স্ক এবং ক্ষুদ্রতম প্রতিবন্ধী আব্দুল গফুর। দুটি লাঠির সাহায্যে তার এ যাত্রার উদ্দেশ্য মসজিদে জামায়াতের সাথে জুমার নামাজ আদায় করা। ঘড়ির কাটা তখন বেলা ১১টা ৩৭ মিনিট। হাতে সময় নিয়ে তিনি ইচ্ছে করে বাড়ি থেকে বের হয়েছেন। কারণ ২শ কদমের পথ আমাদের কাছে পাঁচ মিনিটের হলেও এ মানুষটির কাছে তা অনেক। আমাদের উপস্থিতির কারণ জানতে পেরে তিনি আবার বাড়ি ফিরলেন। এ সময় স্থিরতার সাথে ভালো করে পরখ করলাম, তার চলার সাথী ছোট ছোট ওই লাঠি দুটি তার কত প্রয়োজন। এভাবেই আব্দুল গফুর জীবনের ৭০টি বছর পার করেছেন। তার উচ্চতা মেপে দেখা গেলো তিনি প্রায় ৩৩ ইঞ্চি লম্বা। বয়সের ভারে তার উচ্চতা ২ ইঞ্চি কমে গেছে।

চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদার কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী পীরপুরকুল্লা গ্রামের বয়স্ক এ ক্ষুদ্রতম প্রতিবন্ধী ব্যক্তিটি দুঃসহ জীবনের ৭০টি বছর পার করে এখন বড্ড ক্লান্ত। তার পিতা মৃত আপেল উদ্দিন ও মাতা খাদিজা খাতুন। আব্দুল গফুর জানান তার বয়স যখন ৫ বছর তখন একদিন সন্ধ্যার দিকে এক অমঙ্গল বাতাস তার জীবন তছনছ করে দেয়। গ্রামেরই ইছারুদ্দির মেয়ে পিরিছনের সাথে ৫০১ টাকা দেনমোহরে প্রায় ৪০ বছর আগে বিয়ে করেন। তার ৪ মেয়ে ১ ছেলে রয়েছে। ছেলে-মেয়েরা সবাই সুস্থ স্বাভাবিক। ছোট মেয়ে সহিদা খাতুন ছাড়া সকলেই সংসার ধর্ম করছে। মাটির ঘরে পরিবারের সবাইকে সাথে নিয়ে বর্তমানে তিনি বাস করছেন। একমাত্র ছেলে আসুবর কামলা খেটে সংসারের ঘানি টানে। বাড়ির আঙিনায় বসে নিয়মিত তিনি নামাজ পড়েন। চোখে ঝাপসা দেখেন, পথ চলতে দম লাগে, অধিকাংশ দাঁত পড়ে গেছে, চুল ও মুখের দাড়ি পেকে একদম সাদা। পিঠের মেরুদণ্ড কিছুটা বেঁকে গেছে, তাই দু হাতে দুটি লাঠির সাহায্যে তিনি চলাফেরা করেন। আব্দুল গফুরের স্মরণশক্তি খুব ভালো, শুনে শুনে মুখস্থ করেছেন কোরআন শরিফের দু পারা।

সংসারে অভাব থাকলেও খুব বেশি ভয় পান না আব্দুল গফুর। তার অসহায় জীবনযাত্রা আর চালচলনের ধরন দেখলে যে কোনো মানুষের মন কেঁদে উঠবে। তার আক্ষেপ তিনি এতো কষ্ট করে জীবনের শেষ প্রান্তে এসেছেন তবুও ৩ মাস পরপর ৯শ টাকা প্রতিবন্ধী ভাতা ছাড়া আর কোনো সহযোগিতা পান না। শুধু ছোট মেয়ে সহিদার বিয়ে নিয়ে চিন্তায় আছেন তিনি। সমাজের বিত্তবান ব্যক্তি, সরকারি-বেসরকারি কোনো সংস্থা অথবা সরকারের পক্ষ থেকে সাহায্য সহযোগিতার আশা করেন তিনি।