দামুড়হুদার চিৎলায় ছেলেকে কুপিয়ে হত্যার দায় 

স্বীকার করে পাষাণী মায়ের আদালতে জবানবন্দি

দামুড়হুদা প্রতিনিধি: দামুড়হুদার চিৎলা গুচ্ছগ্রামপাড়ায় মায়ের কোলে ঘুমিয়ে থাকা শিশুসন্তান আলামিনকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানন্দি দিয়েছেন পাষাণী মা হাসিনা বেগম। গতকাল শনিবার চুয়াডাঙ্গার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাফিজুর রহমান ঘাতক মা হাসিনা বেগমের জবানবন্দি রেকর্ড করেন বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দামুড়হুদা মডেল থানার এসআই উত্তম ভট্টাচার্জ। তিনি বলেছেন, নিহত কিশোর আলামিন মায়ের কাছে ডিম ভাজি করে দেয়ার আবদার করে। মা হাসিনা বেগম তাকে ডিম ভাজি করে না দেয়ায় ওই রাতে মায়ের ওপর অভিমান করে, দু এক মুঠো ভাত খেয়েই ঘুমিয়ে পড়ে। তিনি আরও বলেছেন, মা হাসিনা বেগম ছেলেকে হত্যার জন্য হেঁসো হাতে ১০/১২ বার পায়চারি করেন। শিশু আলামিন অন্যান্য রাতে একবার ঘুমিয়ে পড়লে আর ওঠে না। কিন্তু ওই রাতে কোপ মারার আগে সে ঘুম থেকে উঠে বসে এবং কিছুক্ষণ পর আবার ঘুমিয়ে পড়ে। এর পরপরই ঘাতক মা তাকে হোঁসো দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে।

উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে স্বামীর অনুপস্থিতির সুযোগে মায়ের কোলে ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় বড় ছেলে আলামিনকে (১২) নৃশংসভাবে কুপিয়ে খুন করে দায় অন্যের ঘাড়ে চাপাতে নাটক সাজান মা হাসিনা বেগম। তিনি পুলিশকে জানান, প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বাইরে বেরুলে ৩ ব্যক্তি বাড়িতে ঢুকে ছেলে আলামিনকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করে। ওই তিনজনের মধ্যে আমি দুজনকে চিনতে পারি। অপরজনের মুখ বাঁধা ছিলো বিধায় চিনতে পারিনি। পরে তার দেয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করে পুলিশ একই গ্রামের ইব্রাহিম ও জহুরুল নামের দুজনকে গ্রেফতার করে। এছাড়া নিহত আলামিনের মা হাসিনা খাতুনের আচরণ সন্দেহজনক হওয়ায় তাকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নেয়া হয়। দীর্ঘ ১৬ ঘণ্টা পর জিজ্ঞাসাদের একপর্যায়ে গত শুক্রবার বিকেলে কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং ছেলে আলামিনকে কুপিয়ে হত্যা করেছে মর্মে পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন মা হাসিনা বেগম। জিজ্ঞাসাবাদের এক  পর্যায়ে হাসিনা বেগম পুলিশকে জানান, ছেলে আলামিনের ওপর অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন তিনি। তার পাগলামি সহ্য করতে না পেরে শেষমেশ তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় নিহত শিশু আলামিনের পিতা আজিবার রহমান বাদী হয়ে ঘাতক স্ত্রী হাসিনাকে আসামি করে শুক্রবার সন্ধ্যায় দামুড়হুদা মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। নিহত শিশু আলামিনের লাশের ময়নাতদন্ত শেষে রাত ৮টার দিকে নিজ গ্রামের কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন করা হয়। এলাকাবাসী বলেছেন, হাসিনা বেগম পুলিশকে বিভ্রান্ত করার জন্য মিথ্যা গল্প সাজালেও সন্দেহের তীর প্রথম থেকেই ছিলো মায়ের দিকে। তারা আরও বলেছেন পৃথিবীর সবচেয়ে নিরপদ স্থান হচ্ছে মায়ের কোল। সেই মায়ের কোলেই নির্মমভাবে খুন হতে হলো শিশু আলামিনকে। যা কেউ কখনও কল্পনাও করতে পারে না। দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি আবু জিহাদ বলেছেন, মায়ের সাথে অন্য কেউ জড়িত ছিলো কি-না সেটিও আমলে নিয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।