দামুড়হুদার উজিরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আঙিনা জলাবদ্ধ

পচা দুর্গন্ধযুক্ত জলাবদ্ধে মশার বসবাস : শিক্ষার্থীদের দর্ভোগ চরমে

তাছির আহমেদ: আমাদের দেশের সব মানুষের জন্য পাঁচটি মৌলিক অধিকারের মধ্যে শিক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি মানুষের শিক্ষা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে সরকার বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া সত্ত্বেও তা বাস্তবায়ন হয় না সময়মতো। তার প্রতিফলন দামুড়হুদা উপজেলার উজিরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোমলমতি স্কুল শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে। এখানে শিক্ষার পরিবেশ দারুণভাবে বিঘ্নিত হলেও যেন গুরুত্বের সাথে দেখছে না কেউ! শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের এমন অভিযোগে গত রোববার সকাল ১০টার দিকে সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, এ স্কুলের কোমলমতি শিক্ষর্থীরা স্কুলমাঠের জলাবদ্ধ পচা দুর্গন্ধযুক্ত পানিতে দাঁড়িয়ে অ্যাসেম্বলি করছে। অ্যাসেম্বলি শেষে স্কুলরুমে ফিরতে যেয়ে, পিছলে পড়ে যাওয়ার ভয়ে অনেক শিক্ষার্থীই হিমশিম খাচ্ছে। শিক্ষার্থীরা পচা পানির সংস্পর্শে পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাসহ শিক্ষার পরিবেশ যে বিঘ্নিত হচ্ছে তার যথেষ্ট প্রমাণ মেলে এ স্কুলের বারান্দায় গিয়ে।

দামুড়হুদা-চুয়াডাঙ্গা সড়কের কোল ঘেঁষে দামুড়হুদা সদর ইউনিয়নের একটি বড় গ্রামের নাম উজিরপুর গ্রাম। এ গ্রামের একটু ভেতরেই অবস্থিত উপজেলার ৩৮ নং উজিরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে স্কুলটি স্থাপিত হওয়ার পর থেকে দীর্ঘদিন যাবত সুনামের সাথেই পরিচালিত হয়ে আসছে। বর্তমানে স্কুলটিতে অধ্যয়নরত ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৬১৮ জন। উপস্থিতির হার শতকরা ৮৫ ভাগ। চলতি বছরে সরকারি নীতিমালার আওতায় স্কুলটি ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে ৮ম শ্রেণিতে উত্তীর্ণকরণ করা হয়েছে। তাই ৬৬ শতক জমির ওপর দাঁড়িয়ে থাকা এ স্কুলটি গ্রামের অনেকের কাছে নতুন করে শ্রদ্ধার্জন করতে শুরু করেছে।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. শরিফ উদ্দিন জানান, স্কুল আঙিনার শেষ সীমানার সামনে দিয়ে চলে গেছে গ্রামের প্রধান রাস্তা। রাস্তাটি প্রায় তিন বছর আগে সংস্করণের সময় বেশ উঁচু করে পিচকরণ করা হয়। যে কারণে বর্ষাকালে বৃষ্টির পানি বিভিন্ন দিক থেকে গড়িয়ে এসে স্কুল আঙিনায় জমা হয়। এ জমাকৃত পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় পুরো আঙিনা ২০ হাজার বর্গফুট জায়গা জুড়ে ১/২ ফুট উচ্চতায় দিনের পর দিন পানি জমে থাকে। শিশুদের মেধা বিকাশে পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলা প্রয়োজন। কিন্তু এ জলাবদ্ধতা শিক্ষার্থীদের চলাফেরা ও খেলাধুলার চরম বিঘ্নিত করে। মাঝে মাঝে শিশুরা অসুস্থ হয়েও পড়ে।

স্কুলের ১ম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফাতিমা, সুমাইয়া ও তাহসীন, ২য় শ্রেণির শিক্ষার্থী মিনা ও সুমন, ৩য় শ্রেণির শিক্ষার্থী চম্পা ও সোহাগ, ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী মহাম্মদ ও রুমিয়া, ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী সেলিনা ও সৌরভ জানায়, একটুখানি বৃষ্টি হলেই স্কুলের সামনে পানি জমে। টিফিনের সময় খেলা করা যায় না। অনেক সময় ক্লাসেই বসে থাকতে হয়। কখনও কখনও পিছলে পড়ে বই খাতা ভিজে গেলে মা বকুনি দেয়, আবার মারেও। পানির মধ্যে দাঁড়িয়ে অ্যাসেম্বলি করতে হয়। স্কুলমাঠে খুব বেশি পানি জমলে সেদিন অ্যাসেম্বলি হয় না। মেলা দিন পর এই পানি থেকে গন্ধ বেরুলে স্যারেরা পানিতে নামতে নিষেধ করেন।

স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি নুর আলম লাভলু বলেন, স্কুলমাঠে বৃষ্টির পানি জমে জলাবদ্ধতার কথা চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ হাজি মো. আলী আজগর টগরের নিকট জানানো হয়েছে। স্কুলের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগের বিষয়টি নিরসনে এমপি আশস্ত করেছেন এবং অতি শিগগিরই তা প্রতিফলিত হবে বলে তিনি জানান। স্কুলমাঠটি রাস্তা থেকে উঁচু করে মাটি ভরাট করলে প্রতিবছর বর্ষাকালের এ জলাবদ্ধতা একেবারে দূর হবে। সেই সাথে সীমানা পাঁচিল দিলে স্কুলটির ভৌত অবকাঠামো জোরদারসহ শিক্ষার মান আরও উন্নত হবে।