দর-মান যাই হোক ভারতীয় নামের প্রতি ক্রেতারা অন্ধ

মেহেরপুর জেলার ঈদ বাজারে ভারত নামীয় পোষাকের প্রতি আস্থা :

মাজেদুল হক মানিক: ভারতীয় টিভি সিরিয়ালের নায়ক-নায়িকাদের নিয়ে গত কয়েক বছরে ঈদের কেনাকাটায় মাথা নষ্ট ছিলো বাঙালিদের। এবার সেই প্রীতিতে ভাটা পড়লেও ভারতীয় নামের প্রতি আস্থা অটুট রয়েছে। মান ও দাম যাই হোক ভারতীয় হলেও আর কথা নেই। অন্ধের মতো কেনাকাটা করছেন অনেক অন্ধ ভারতীয় পোষাক ভক্ত ক্রেতা। আর এসব অন্ধদের চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশি পোষাক ভারতীয় বলে চালিয়ে দিচ্ছেন বিক্রেতারা।

রমজানের শুরু থেকে মেহেরপুর জেলা শহর, গাংনী শহর, বামন্দী ও কেদারগঞ্জ বাজার এলাকায় জমে উঠেছে ঈদ বাজার। বাবা মায়ের সাথে শিশুরাও ছুটছেন দোকানে দোকানে। কিনছেন পছন্দের পোশাক। বিগত বছরের ন্যায় এবারও বাজার দখলে ভারতীয় পোশাকের। তবে এবারে রুচির ভিন্নতা লক্ষ্য করা গেছে। ভারতীয় টিভি সিরিয়ালে আসক্ত নারীরা ছাড়া পাখি, কিরণমালার প্রতি আর আরো কদর নেই। গত বছর এসব নায়িকাদের নামীয় পোষাকের জন্য পাগল ছিলেন স্টাল জলসার প্রতি আসক্তরা। কিরণমালা পোষাক কিনতে না পেরে দেশের বেশ কিছু স্থানে কয়েকজন তরুণী আত্মহত্যাও করেছিলো। তবে এবারে সারারা নামের একটি পোষাকের প্রতি কিছুটা টান রয়েছে তরুণী ও গৃহিনীদের। তবে মান ও দর যাই হোক ভারতীয় পোষাক না হলে ক্রেতাদের সন্তুষ্টি পুরোপুরি অর্জনে ব্যর্থ হচ্ছেন বিক্রেতারা।

কয়েকজন ক্রেতা জানান, ভারতীয় থ্রি-পিস, শার্ট, প্যান্ট, পাঞ্জাবির প্রতি ক্রেতাদের আস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এসব পোষাকের দর যাই হোক টেকসই তাই ক্রেতাদের আকর্ষণ করতে পেরেছে। তাই দেশীয় পোষাক বাদ দিয়ে ভারতীয় পোষাকের প্রতিই তাদের বেশি খেয়াল।

বিপণীবিতানগুলোতে ভারতীয় সব বাহারি পোশাক শোভা পাচ্ছে। ক্রেতাদের চোখ এসব বাহারি পোশাকের দিকেই। যুগের সাথে তাল মেলাতে তরুণ-তরুণী ক্রেতারা ঝুঁকছেন এসব পোশাকের দিকে। গুণগত মান যাই হোক, শুধু নামের কারণে চড়া দামে এ পোশাক বিক্রি হচ্ছে। দাম নিয়ে অভিজাত মানুষের কোনো অভিযোগ না থাকলেও বাজারে এসে হিমশিম খেতে হচ্ছে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের মানুষের।

এদিকে পোষাকের প্রতি দেশপ্রেমও রয়েছে। বিভিন্ন বাজারে বেশ কিছু দেশপ্রেমিক ক্রেতার সাথে কথা হয়। তারা জানালেন, দেশীয় পোষাকের মান অবশ্যই ভাল। তবে সব পোষাকের এক মান ও দর নয়। সব ধরণের পোষাক বাজারে রয়েছে। এসব মান ও দরের কারণে সকল শ্রেণির ক্রেতারা তাদের সামর্থ অনুযায়ী পোষাক কিনতে পারছেন। তবে ভারতীয় পোষাকের প্রতি অতি উৎসাহী না হয়ে দেশের পোষাক শিল্পের কথা চিন্তা করে দেশীয় পোষাকে ফিরে আসার আহ্বান জানান দেশীয় পোষাক ক্রয় করা কয়েকজন।

এদিকে ভারতীয় পোষাকের প্রতি ক্রেতাদের অতি আকর্ষণের কারণে বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, দেশীয় ব্যান্ড ও ননব্যান্ডের অনেক পোষাক ঈদ বাজারে রয়েছে। যার গুণগত মান ভারতীয় পোষাকের চেয়ে অনেক বেশি এবং দামও অনেকটাই কম। কিন্তু  দেশীয় পোষাক শুনলে বেশিরভাগ ক্রেতা নিতে চাইছেন না। নাক সিটকাচ্ছেন। এ কারণে বেশ কিছু দেশীয় পোষাক ভারতীয় বলেই বিক্রি করা হচ্ছে। এছাড়াও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন পাইকার মার্কেটে দেশীয় পোষাক দেদারসে ভারতীয় বলেই বিক্রি করা হচ্ছে।

গাংনী সিদ্দিকীয় সিনিয়র আলিম মাদরাসার ক্রীড়া শিক্ষক আহসান হাবীব জানান, তিনি মার্কেট ঘুরে দেশীয় পোষাক কিনেছেন। ভারতীয় পোষাকে অনেকেই গা এলিয়ে দিলেও তিনি দেশীয় পোষাকে বিশ্বাসী। কেননা দেশের অনেক মানসম্মত পোষাক রয়েছে। তবে বরাবরের মতো দাম দিয়ে প্রশ্ন তুললেন তিন। গত বছরের চেয়ে এবারে অস্বাভাবিক হারে দর বৃদ্ধির বিষয়টি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি।

পোশাকের দাম বেশির কথা স্বীকার করে মেহেরপুর বড় বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি জামান বস্ত্রালয়ের সত্ত্বাধিকারী মনিরুজ্জামান দিপু জানান, আমদানি শুল্ক দ্বিগুনের কারণে আমদানীকৃত পোষাদের দর বেড়েছে। বেড়েছে পরিবহন ভাড়া। সব মিলিয়ে খুচরা বিক্রিতে প্রভাব পড়েছে।