দর্শনা প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন কেন্দ্রে ভিএস পদে চার বছর ধরে কর্মকর্তা না থাকায় ফুঁসে উঠেছে দামুড়হুদাবাসী

দামুড়হুদা অফিস: চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদার দর্শনায় উপজেলা প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন কেন্দ্রে (ইউএলডিসি) দীর্ঘ ৪ বছর ধরে ভেটেরিনারি সার্জনের পদ শূন্য থাকায় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে উপজেলা কার্যালয় দামুড়হুদা থেকে দর্শনায় স্থানান্তরের খবরে তোলপাড় শুরু হয়েছে। উপজেলা কার্যালয় দামুড়হুদায় এবং দর্শনা ইউএলডিসিতে ভেটেরিনারি সার্জন নিয়োগের দাবিতে ফুঁসে উঠেছে দামুড়হুদাবাসী।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,  উপজেলা ব্যবস্থা প্রচলনের আগে থেকেই দামুড়হুদায় উপজেলা (তৎকালীন থানা) প্রাণিসম্পদ দপ্তর  এবং দর্শনায় উপজেলা প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন কেন্দ্র (ইউএলডিসি)  অবস্থিত। প্রথম থেকেই দামুড়হুদায় উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ইউএলও) এবং দর্শনায় ভেটেরিনারি সার্জন (ভিএস) প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ভেটেরিনারি সার্জন ডা. আনন্দ কুমার অধিকারী বদলির পর বিগত চার বছর ধরে দর্শনা ইউএলডিসিতে ভেটেরিনারি সার্জনের পদ শূন্য থাকায় সেখানে প্রাণিসম্পদের চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। এমতাবস্থায় উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাগণ নিজ দপ্তরের বাইরে দর্শনায় অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করে আসছেন। বর্তমানে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আ.হ.ম শামীমুজ্জামান দর্শনায় ভেটেরিনারি সার্জন হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন।

২০০৭-০৮ অর্থ বছরে দর্শনায় উপজেলা প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন কেন্দ্রের নিজস্ব ভবন তৈরি হলেও দামুড়হুদায় উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরে কার্যক্রম পরিত্যক্ত ভবনে চলছিলো। গত বছরের নভেম্বরে খুলনা বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তরের উপপরিচালক ডা. মৃণাল কান্তি মিত্র সরেজমিন পরিদর্শনকালে উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের বেহালদশা দেখে দপ্তরের কার্যক্রম দর্শনায় স্থানান্তরের নির্দেশ দেন। গত বছরের ২৯ নভেম্বর উপজেলা পরিষদের মাসিক সভায় প্রাণিসম্পদ দপ্তর স্থানান্তর বন্ধ ও ভেটেরিনারি সার্জনের শূন্যপদে লোক নিয়োগে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ফেব্রুয়ারি মাস থেকে  উপজেলা চেয়ারম্যান আজাদুল ইসলামের মৌখিক নির্দেশে তার নামে বরাদ্দকৃত সরকারি দোতলা বাসভবনের নিচতলায় উপজেলা প্রাণি সম্পদ দপ্তরের কার্যক্রম চলে আসছে।

এদিকে খুলনা বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তরের উপপরিচালক ডা. মৃণাল কান্তি মিত্র গত ১২ ফেব্রুয়ারি চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন যে, দামুড়হুদায় একজন ভেটেরিনারি মাঠকর্মী (ভিএফএ) ও একজন মাঠ সহকারী (এফএ ) রেখে মূল উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর দর্শনা ইউএলডিসি ভবনে স্থানান্তর করতে হবে। এজন্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে ১৭ জানুয়ারি নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আ.হ.ম শামীমুজ্জামান ১৮ ফেব্রুয়ারি উপপরিচালকের নির্দেশের বিষয়টি উপজেলা  চেয়ারম্যানকে অবগত করেন। ২৮ ফ্রেব্রুয়ারি উপজেলা পরিষদের মাসিক সভায় প্রাণিসম্পদ দপ্তর স্থানান্তর না করার বিষয়ে অনুরোধ জানিয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

ইউএনও সোনিয়া আফরিন ১০ মার্চ প্রাণিসম্পদ দপ্তরের উপপরিচালককে লিখিত এক পত্রে জানান, দর্শনায় দপ্তরটি স্থানান্তরিত হলে কেবলমাত্র দর্শনা পৌরবাসী উপকৃত হবেন। কিন্তু, সাতটি ইউনিয়নের জন-সাধারণকে দূর-দুরান্ত থেকে দর্শনায় যেতে হবে। এতে আর্থিক ক্ষতিসহ প্রাণিসম্পদের বড় ধরনের ক্ষতি হবে। তাই দপ্তরটি  স্থানান্তর না করতে অনুরোধ করা হয়। এরপরও ১০ এপ্রিল উপপরিচালক আরো একটি পত্রে দপ্তরটি দর্শনায় স্থানান্তরের জন্য ইউএলওকে নির্দেশ দেন।

দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোনিয়া আফরিন জানান, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ঘর দেয়া হবে। বৃহত্তর স্বার্থে এ দপ্তর স্থানান্তর করতে দেয়া হবে না।

দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আজাদুল ইসলাম জানান, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ীই বাসভবন পয়লা সেপ্টেম্বরের আগে প্রাণিসম্পদ কার্যালয়টি খালি করে দিতে বলা হয়েছে। জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. কোহিনুর ইসলাম বলেন, আশা করা যায় দর্শনায় খুব শীঘ্রই ভিএসপদে লোক নিয়োগ দেয়া হবে।

খুলনা বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ উপপরিচালক ডা. মৃণাল কান্তি মিত্র জানান, দপ্তর দর্শনায় স্থানান্তরিত হলেও দামুড়হুদায় যে দুজন থাকবেন, তারাই ৮০ শতাংশ কাজ চালিয়ে নিতে পারবেন। যা করা হয়েছে ভালো বিবেচনা করেই করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, দর্শনায় ভিএস দিলেও ইউএলওকে দর্শনায় থাকতে হবে। ৮ কিলোমিটারের বাইরে দায়িত্ব পালন করার জন্য টিএডিএ পাবেন।