দখল হয়ে যাচ্ছে মহেশপুরের জিয়া খাল : বাড়িঘর ও ফসলি জমিতে জলাবদ্ধতার আশঙ্কা

মহেশপুর প্রতিনিধি: ঝিনাইদহের মহেশপুরে জিয়া খালের মাঝখান দিয়ে সীমানা পাঁচিল নির্মাণ করছে তুষার সিরামিক নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এলাকাবাসী বলছেন, এতে খাল দিয়ে পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে বর্ষা মরসুমে দুটি গ্রামের বাড়িঘর ও বড় দুটি ফসলি মাঠ পানিতে তলিয়ে যাবে।

গত শুক্রবার সরেজমিনে দেখা যায়, মহেশপুর উপজেলার পুরন্দপুর নামক স্থানে কালীগঞ্জ-জীবননগর সড়কের পাশেই জিয়া খাল। খালের দক্ষিণ পাশে তুষার সিরামিক কারখানার নির্মাণকাজ চলছে। কারখানার মূল ভবন নির্মাণের কাজ এখনো শুরু হয়নি। তবে এরই মধ্যে ছোট একটি টিনশেডের ঘর বানানো হয়েছে। সেখানে নির্মাণকাজের সাথে সংশ্লিষ্ট লোকজন থাকছেন। চারপাশে সীমানাপাঁচিল দিয়ে ঘিরে ফেলার কাজ চলছে দ্রুতগতিতে। খালের দিকে ইতিমধ্যে অনেকটা জায়গা পাঁচিল দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা আজাহার আলী বলেন, খালের ওপরের জমি ক্রয় করেছে পিঅ্যান্ডপি নামের একটি কোম্পানি। কিন্তু সীমানা পাঁচিল নির্মাণের নামে তারা এক মাস আগে থেকে খাল দখল শুরু করেছে। খালের আনুমানিক ৭০ শতাংশ তাদের সীমানা পাঁচিলের মধ্যে নিয়ে ফেলেছে। এখন দখলকারীরা মাটি দিয়ে ভরাট করলে খাল দিয়ে আর পানি নামবে না। সেটা হলে পাশের সড়াতলা ও পুরন্দপুর গ্রামের প্রায় ১৫ হাজার মানুষ বিপদে পড়বে। বর্ষা মরসুমে জলাবদ্ধতায় গ্রাম দুটির বাড়িঘর ও মাঠের ফসল তলিয়ে যাবে।

এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, ওই স্থানে খালের পাশে ৯০ বিঘা জমি কিনেছে কোম্পানিটি। তারা এখানে তুষার সিরামিক নামের একটি টাইলস তৈরির কারখানা করবে। কিন্তু কেনা জমির সবই চাষযোগ্য। আর খালের জায়গা দখল করে সীমানা পাঁচিল দেয়ায় এলাকাবাসী বেশি উদ্বিগ্ন।

ইউসুপ আলী নামের এক ব্যক্তি বলেন, সড়াতলা ও পুরন্দপুর গ্রামের মাঝ দিয়ে সড়কের ধারঘেঁষে জিয়া খালটি চলে গেছে কপোতাক্ষ নদে। খালটি শতাধিক ফুট চওড়া। শুষ্ক মরসুমে এ খাল শুকিয়ে যায়। তবে বর্ষা মরসুমে এই দুই গ্রামের সমস্ত পানি কপোতাক্ষে নিয়ে যায় খালটি। ফলে গ্রাম ও মাঠ দুটোই জলাবদ্ধতার হাত থেকে রক্ষা পায়।
তুষার সিরামিক কারখানার নির্মাণকাজের ব্যবস্থাপক বাবলুর রহমান বলেন, তারা যে পর্যন্ত সীমানা পাঁচিল দিচ্ছেন, সেটা ব্যক্তিমালিকানার। সরকারি কোনো জমি তারা দখল করেননি।

তবে এলাকাবাসী বলছেন, ওই সীমানা পাঁচিলটি যে খালের সরকারি জায়গার ভেতরে পড়েছে, সে বিষয়ে তারা নিশ্চিত। নিশ্চিত হয়েই তারা খালের জায়গা ছেড়ে নির্মাণকাজ করতে প্রতিষ্ঠানটিকে অনুরোধ করেছেন। কিন্তু তারা তা মানছে না। এ ব্যাপারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চান এলাকাবাসী।

মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশাফুর রহমান বলেন, বিষয়টি জানার পর তিনি সার্ভেয়ার (আমিন) পাঠিয়েছিলেন। সীমানা পাঁচিলটি খালের জায়গা দখল করে নির্মাণ করা হচ্ছে, এটা ঠিক। জায়গাটা কোনো ব্যক্তিমালিকানাধীন নয়। সেটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) জায়গা। ফলে তিনি বিষয়টি নিয়ে সওজের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলবেন।

ঝিনাইদহ সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী সেলিম আজাদ খান বলেন, তিনি বিষয়টি জানতেন না। তবে খোঁজ নিয়ে দেখবেন। সেটা সওজের জায়গা হলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।