থানায় কিশোরী ধর্ষণ : ৫ পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা

ছাদেকুল ইসলাম রুবেল, গাইবান্ধা ঃ গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ থানা হেফাজতে এক কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগে পাঁচ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এ ঘটনা তদন্তে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।পুলিশ জানিয়েছে, ওই মেয়েটির বাড়ি ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলায়। তাকে গাইবান্ধা জেলা কারাগারে নিরাপত্তা হেফাজতে রাখা হয়েছে।অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোশাররফ হোসেন জানান, গোবিন্দগঞ্জের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতের নির্দেশে শনিবার পাঁচ পুলিশ সদস্যকে আসামি করে থানায় একটি মামলা হয়েছে। এই মামলাটি তদন্তের জন্য গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।এছাড়া ওই আদেশে গাইবান্ধার সিভিল সার্জনকে ওই কিশোরীর শারীরিক পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।সিভিল সার্জন ডা. আহাদ আলী জানান, রোববার সদর হাসপাতালে ওই কিশোরীর শারীরিক পরীক্ষা করা হয়েছে।পুলিশ জানায়, জ্যেষ্ঠ বিচারকি হাকিম মো. তারিক হাসান গত ২ অক্টোবর ওই কিশোরীর জবানবন্দি গ্রহণ করেন। তিনি ওই জবানবন্দিকেই এজাহার হিসেবে গণ্য করে গোবিন্দগঞ্জ থানার পাঁচ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা করার আদেশ দেন। থানা কর্তৃপক্ষ শনিবার মামলাটি রেকর্ড করে।ডিবি পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এম আহসান হাবীব জানান, অল্প সময়ের মধ্যেই তদন্ত কাজ শেষ করে প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হবে।পুলিশ জানায়, গত ২৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় স্থানীয় লোকজন গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের মাস্তা নামক স্থানে ওই কিশোরীকে কান্নাকাটি করতে দেখে থানায় খবর দেয়। পরে উপপরিদর্শক (এসআই) আকমল হোসেনের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল ওই রাতেই তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।পরদিন সকালে এ বিষয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। এরপর ৩০ সেপ্টেম্বর দুপুরে ওই কিশোরীকে গোবিন্দগঞ্জ জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে হাজির করা হয়। আদালত ওইদিন তাকে গাইবান্ধা জেলা কারাগারে নিরাপত্তা হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।কারাগার সূত্র জানায়, গত ১ অক্টোবর মঙ্গলবার ওই কিশোরী কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়ে। তখন কারা কর্তৃপক্ষের কাছে  কিশোরী জানায়, গোবিন্দগঞ্জ থানায় আটক রেখে পাঁচ পুলিশ সদস্য তাকে ধর্ষণ করেছে।এর পরদিন আবার তাকে গোবিন্দগঞ্জ জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে হাজির করে তার জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়। এ জবানবন্দিকে এজাহার হিসেবে গণ্য করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেন জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম।জেলা পুলিশ সুপার সাজিদ হোসেন বলেন, “ডিবি পুলিশ ছাড়াও জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের একটি তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে।”এদিকে থানায় কিশোরী ধর্ষণের ঘটনায় স্থানীয় বিভিন্ন সামাজিক ও নারী সংগঠনের নেতারা তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের জেলা শাখার সভাপতি আমাতুর নুর ছড়া ও সাধারণ সম্পাদক রিক্তু প্রসাদ বলেন, কিশোরীটিকে থানায় বিধিবর্হিভূতভাবে তিনদিন আটকে রাখা এবং যৌন নির্যাতনের যে খবর সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে তা সত্যি আমাদের উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। এ ঘটনা কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।তারা এ ঘটনার যথাযথ তদন্তের দাবি জানান।তারা জানিয়েছেন, মহিলা পরিষদের পক্ষ থেকে এ ঘটনার তদন্ত ও প্রকৃত দোষীদের শাস্তির দাবিতে সোমবার শহরে একটি মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হবে।