ঝিনাইদহ বেতাই চ-িপুর গ্রামে পিতার নির্যাতনের শিকার ৪ সন্তান মাকে নিয়ে বাড়ি ফিরলো

গিয়াস উদ্দীন সেতু: ঝিনাইদহে সদর উপজেলার বেতাই চ-িপুর গ্রামে পিতার দ্বারা শারীরক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তারই ১৯ বছরের প্রতিবন্ধী কন্যাসহ ৪ সন্তান। যৌতুকের কারণে স্ত্রীর-সন্তানদেরকেও মারধর করা হতো। বর্ববর ও নির্মম এই ঘটনায় পিতা বজলুর রহমানকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। প্রতিবন্ধীর মা গৃহবধূ সাবিনা ইয়াসমিন (৪০) এ ঘটনায় ঝিনাইদহ সদর থানায় একটি মামলা করেছেন।
বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার ঝিনাইদহ ইউনিটের সভাপতি সাংবাদিক আমিনুর রহমান টুকু খবরের সত্যতা নিশ্চত করে জানান, ১৯৯২ সালে সদর উপজেলার ডাকবাংলা মাগুরাপাড়া গ্রামের এহসানুল হকের মেয়ে সাবিনার বিয়ে হয় বেতাই চ-িপুর গ্রামের মৃত রমজান কাজীর ছেলে বজলুর রহমানের সাথে। বিয়ের সময় বজলুকে যৌতুক হিসেবে নগদ এক লাখ টাকা দেয়ার কথা থাকলেও ৫০ হাজার টাকা দেয়া হয়। পরবর্তীতে বাকি পঞ্চাশ হাজার টাকা ও পিতার ফারাজের জমি বিক্রি করে সাবিনা খাতুন ২০১৪ সালে আরও দুই লাখ টাকার যৌতুক দেয় বজলুকে। এরপরও থামেনি বজলুর লালসা। নারী নির্যাতনকারী বজলুর বিরুদ্ধে বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার ঝিনাইদহ ইউনিটের সহযোগিতায় চার সন্তানের জননী সাবিনা বাদী হয়ে আদালতে মামলা করেন। প্রায় ৩ বছর মামলা চলার পর বজলুর রহমানের খপ্পরে পড়ে সাবিনা মামলা তুলে পুনরায় সংসার করার স্বপ্ন দেখে। কৌশলে মামলা তুলে বজলুর রহমান আবার নির্যাতন শুরু করে স্ত্রী ও কন্যাদের ওপর। এমনকি বজলুর অসভ্য আচরণের শিকার হতে বাদ পড়েনি তার ১৯ বছরের প্রতিবন্ধী কন্যা শারমিন।
মানবাধিকার কর্মী আমিনুর রহমান টুকু জানান, বাবা হয়ে প্রতিবন্ধী কন্যার সাথে এমন অসভ্য বর্বর আচরণ দেখে ফেলে স্ত্রী সাবিনা ও মেজ মেয়ে শারজিনা খাতুন। তারা ঘটনার প্রতিবাদ করেন। শুরু হয় স্ত্রী সন্তানদের ওপর নতুন করে নির্যাতন। গত ১৩ জুলাই বিকেলে স্ত্রী সন্তানদের ঘরে আটকিয়ে শারিরিকভাবে নির্যাতন করে এবং সন্ধ্যার দিকে তাদের বাড়ি থেকে বের করে দেন বজলুর রহমান। নিরুপায় হয়ে গৃহবধূ সাবিনা ৪ সন্তান নিয়ে রাতে মানবাধিকার সংস্থার ঝিনাইদহ অফিসে আসেন। সংস্থার ঝিনাইদহ ইউনিটের সভাপতি আমিনুর রহমান টুকু ও কর্মী বাবলু কু-ু ভিকটিমদের নিয়ে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করেন। তিন দিন হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে তাদেরকে সংস্থার অফিসে রাখা হয়। নির্যাতিত ভাসমান পরিবারটিকে আইনী সহায়তা এবং বাড়ি দিতে মানবাধিকার কর্মী বাবলু কু-ু ও মেহেরুনেছা (মিনু) ভিকটিমদের নিয়ে গত মঙ্গলবার সদর থানায় যান। ঝিনাইদহ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এমদাদুল হক শেখ বিষয়টি শুনে তাৎক্ষণিক একটি এজাহার মামলা হিসেবে গ্রহণ করেন এবং আসামি বজলুকে গ্রেফতারের ব্যবস্থা করেন। এই মামলায় এখনো ৩ জন আসামি গ্রেফতার বাকি আছে। পুলিশি সহায়তায় নির্যাতিত পরিবারটি নিজ বাড়িতে ফিরেছে।
এ বিষয়ে ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি এমদাদুল হক শেখ জানান, পরিবারটির ওপর ব্যাপক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়েছিলো সত্য তবে প্রতিবন্ধী কন্যার ওপর পিতার অসভ্য আচরণের ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে। তিনি জানান, এক বছর আগে নাকি এমন কিছু এটা ঘটেছিলো। আমরা তদন্ত করে দেখছি। তদন্তে অগ্রগতি পেলে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে ওসি জানান।