ঝিনাইদহ ও চুয়াডাঙ্গা সওজের ঠেলাঠেলি  : মালিকবিহীন রাস্তা চলাচলের উপযোগী রাখছেন স্থানীয়রা

স্টাফ রিপোর্টার: ঝিনাইদহ ও চুয়াডাঙ্গা সড়ক বিভাগ ৪০০ মিটার সড়কের মালিকানা নিয়ে ঠেলাঠেলি করছে। তাই দীর্ঘদিনেও ওই রাস্তাটুকু সংস্কারের মুখ দেখেনি। বাধ্য হয়ে এলাকাবাসী ইট-বালু ফেলে সেটি চলাচলের উপযোগী করে রাখছেন। ঝিনাইদহের মহেশপুর ও চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার সীমান্তের এ সড়ক নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই রশি টানাটানি চলছে। ঝিনাইদহ সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ বলছে, মহেশপুরের খালিশপুর থেকে জিন্নাহনগর ভায়া মহেশপুর-দত্তনগর তাদের একটি সড়ক রয়েছে। কিন্তু সেটি ভাঙাচোরা ওই জায়গাটি থেকে কিছুটা দূরে। আর চুয়াডাঙ্গা সওজের দাবি, স্থানটি তাদের সীমানার বাইরে, ফলে তারা সেখানে কাজ করে না।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার দত্তনগর বাজারে বিএডিসির একটি কৃষি খামার রয়েছে। এই বাজারের উত্তর পাশে রয়েছে ৪০০ মিটার ভাঙাচোরা সড়ক। স্থানীয় বাসিন্দা আবদুর রশিদ বললেন, সড়কটি একাত্তর সালের আগে নির্মিত। দত্তনগর বাজারের উত্তর পাশের চুয়াডাঙ্গা জেলার সীমান্ত থেকে এটি করতোয়া নদীর সেতু পেরিয়ে পশ্চিমে ঝিনাইদহে প্রবেশ করেছে। কিন্তু একাত্তর সালে মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধের প্রয়োজনে সেতুটি ভেঙে দিয়েছিলেন। স্বাধীনতার পর যশোর সড়ক বিভাগ ওই সেতু থেকে ৪০০ মিটার দক্ষিণে সেতু নির্মাণ করে। তারা এই সেতুর দুই পাশে সড়ক নির্মাণ করে। ফলে তৎকালীন কুষ্টিয়া সড়ক বিভাগের সীমানা থেকে ৪০০ মিটার দূরে চলে যায় যশোর সড়ক বিভাগের সড়কটি। সেই থেকেই বিপত্তি শুরু। স্থানীয় বাকা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য রবিউল ইসলাম বলেন, এখন চুয়াডাঙ্গা সড়ক বিভাগ তাদের সীমানার শেষ স্থানে এসে উন্নয়নকাজ থামিয়ে দেয়। আর ঝিনাইদহ সড়ক বিভাগ নতুন সড়কের উন্নয়নকাজ করে। ফলে মাঝের ৪০০ মিটার সড়ক উন্নয়নের জন্য কোনো কর্তৃপক্ষ খুঁজে পাওয়া যায় না।

এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, অতীতে একবার দত্তনগর খামার কর্তৃপক্ষ নিজেদের প্রয়োজনে সড়কটি সংস্কার করেছিলো। সেটা ২৫-৩০ বছর আগের কথা। এরপর আর কেউ সড়কটির উন্নয়ন করেনি। মাঝে সড়কটির অবস্থা এতোটাই খারাপ হয়েছিলো যেকোনো যানবাহন চলাচল করতে পারছিলো না। এমন পরিস্থিতিতে এলাকাবাসী নিজেরা ইট-বালু ফেলে চলাচলের উপযোগী করেন। এখনো মাঝেমধ্যে তারাই ইট-বালু ফেলছেন।

সড়কটি চুয়াডাঙ্গার জীবননগর আর ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার বাসিন্দাদের যোগাযোগের একমাত্র সড়ক। সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন অন্তত ১৮টি ঢাকাগামী বাস চলাচল করে। আর স্থানীয়ভাবে বাস-ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন নিয়মিত চলাচল করে। ওই ৪০০ মিটার ভাঙাচোরা সড়ক নিয়ে তাদের ভোগান্তির শেষ নেই। স্থানীয় স্বরূপপুর ইউপির চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, সড়কটি ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু কারও দৃষ্টি নেই। চুয়াডাঙ্গা আর ঝিনাইদহ সড়ক বিভাগের ঠেলাঠেলিতে এলাকাবাসী উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

চুয়াডাঙ্গা সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী জিয়াউল হায়দার বলেন, তাদের কাজের একটা সীমানা রয়েছে। তার বাইরে তারা যেতে পারেন না। তারপরও তিনি খোঁজখবর নিয়ে দেখবেন। ঝিনাইদহ সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সেলিম আজাদ খান বলেন, স্থানটি ঝিনাইদহের মধ্যে হলেও তাদের যে সড়ক রয়েছে, ওই স্থানটি তার বাইরে পড়েছে। তবে বিষয়টি নিয়ে তিনি চুয়াডাঙ্গা সওজের সাথে কথা বলেছেন। তারা এটির উন্নয়নের কাজ করবে। দ্রুতই সমস্যার সমাধান হবে।