ঝিনাইদহে উৎপাদিত হচ্ছে জিংক সমৃদ্ধ ধান

 

 

শাহনেওয়াজ খান সুমন: নতুন উদ্ভাবিত জিংক সমৃদ্ধ ধান পরীক্ষামূলকভাবে ঝিনাইদহে উৎপাদিত হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা এ ধানের নাম দিয়েছেন ব্রি-৬২। সংশ্লিষ্টদের দাবি, বাংলাদেশ রাইস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (ব্রি) উদ্ভাবিত এ ধানের আবাদ বাংলাদেশে এটাই প্রথম। চলতি আমন মরসুমে ঝিনাইদহের আবহাওয়ায় নতুন জাতের এ ধানের ভালো ফলন হবে বলে আশা করছেন কৃষকরা।

ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কুশাবাড়িয়া, ঘোড়শাল, কালা লক্ষ্মীপুর, আড়মুখ, কালীগঞ্জ উপজেলার নাটোপাড়া, তালিয়ান, দুলালমুন্দিয়া মাঠসহ আশপাশের এলাকার আড়াইশ চাষি এবার পরীক্ষামূলকভাবে জিংক সমৃদ্ধ ধান আবাদ করেছে। এ ধান আবাদে কৃষকদের প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়েছে এগ্রিকালচারাল অ্যাডভাইজারি সোসাইটি (আস) ও হারভেস্ট প্লাস বাংলাদেশ। গবেষকদের দাবি, জিংকসমৃদ্ধ ধান মানুষের বিশেষ করে শিশুদের রোগ প্রতিরোধের পাশাপাশি মেধা ও শারীরিক বিকাশের বিশেষ ভূমিকা রাখবে। তাই পর্যায়ক্রমে দেশের মাটি ও আবহাওয়ায় সহিষ্ণু উচ্চ ফলনশীল অন্যান্য ধানেও জিংক সংযুক্তির মাধ্যমে সকল ধানকেই জিংক সমৃদ্ধ করা যাবে। জিংক সমৃদ্ধ ধান আবাদে প্রযুক্তিদানকারী প্রতিষ্ঠান এগ্রিকালচারাল অ্যাডভাইজারি সোসাইটির (আস) নির্বাহী পরিচালক হারুন অর রশীদ জানান, চলতি আমন মরসুমে জেলার আড়াইশ কৃষককে বীজ ও প্রযুক্তি সরবরাহ করা হয়েছে। তিনি জানান, জিংক সমৃদ্ধ ধানের উপকারিতা সম্পর্কে জানানোর পাশাপাশি কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।

এ জাত উদ্ভাবনকারী বিজ্ঞানীবাংলাদেশ রাইস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (ব্রি) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলমগীর হোসেন জানান, মানবদেহে জিংকের অভাব পূরণ করতে এই ধানে জিংকের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এই ধানে অন্য ধানের চেয়ে দ্বিগুণ পরিমাণ জিংক রয়েছে। এই ধানের ভাত খেলে মেধা বিকাশের পাশাপাশি শারীরিক বৃদ্ধি ঘটবে। ড. আলমগীর বলেন, সাধারণ ধানে ৯ থেকে ১২ মিলিগ্রাম জিংক থাকলেও এ জাতের (জিংক সমৃদ্ধ) ধানে জিংক রয়েছে ২৪ মিলিগ্রাম। এ ধানের উদ্ভাবনকারী আরেক বিজ্ঞানী হারভেস্ট প্লাস বাংলাদেশ এর কান্ট্রি ম্যানেজার ড. মো. খায়রুল বাসার বলেন, পৃথিবীর মধ্যে বাংলাদেশেই প্রথম জিংক সমৃদ্ধ ধান উৎপাদন করা হয়েছে। এটিই পওথম উচ্চ ফলনশীল জিংক সমৃদ্ধ জাত।

এবিষয়ে গতকাল শুক্রবার ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ঘোড়শাল ইউনিয়ন পরিষদ মিলনায়তনে কৃষকদের নিয়ে এক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় এই ধানের চাষপদ্ধতি, বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণ কৌশল, গুণাগুণ এবং ফলন সম্পর্কে কৃষকদের অবহিত করা হয়। ঘোড়শাল ইউপি চেয়ারম্যান পারভেজ মাসুদ লিল্টনের সভাপতিত্বে কর্মশালায় প্রশিক্ষক ছিলেন সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ড. খান মনিরুজ্জামান, প্রাক্তন কৃষি কর্মকর্তা এবিএম ফজলুর রহমান, এগ্রিকালচারাল অ্যাডভাইজারি সোসাইটির (আস) নির্বাহী পরিচালক হারুন অর রশিদ, প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম ও হারভেস্ট প্লাস বাংলাদেশের ওআরডিও মজিবুর রহমান। এতে ৪০ কৃষক অংশ নেন। ইউনিসেফের বরাত দিয়ে প্রশিক্ষণ কর্মশালায় জানানো হয়, দেশের ৪৫ ভাগ শিশুর জিংকের অভাবে মেধা ও শারীরিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়, যা জিংক সমৃদ্ধ ধানের ভাত খাওয়ার মাধ্যমে পূরণ করা সম্ভব। এছাড়া এ ধানে রয়েছে সর্বোচ্চ নয় ভাগ প্রোটিন।

কৃষি কর্মকর্তারা জানান, ব্রি-৬২ কোনো হাইব্রিড ধান নয়। দেশী ধানের সাথে পরাগায়নের মাধ্যমে এই জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। ঝিনাইদহ জেলায় এ বছরই প্রথম ১০০ একর জমিতে এই বিশেষ জাতের ধান চাষ হচ্ছে। এই ধানচাষে হেক্টর প্রতি প্রায় পাঁচ টন চাল উৎপাদিত হবে বলে তারা আশা প্রকাশ করেন।ধানচাষি মোহাম্মদ আলী, আহাম্মদ আলী এবং ওমর আলী জানান, অন্যান্য ধানের মতোই জিংক সমৃদ্ধ ধানের চাষাবাদ খরচ একই। তবে উৎপাদন সময় কম লাগায় চাষিরা এ ধান আবাদ করে খুশি। তাদের মতে, অন্য জাতের ধান উৎপাদনে ১২০ থেকে ১৬০ দিন লাগলেও জিংক সমৃদ্ধ ব্রি-৬২ জাতের ধান উৎপাদনে সময় লাগে ১০০ দিন। চাষিরা জিংক সমৃদ্ধ ধান আবাদ সম্পর্কে জেনে অনেকেই এ ধান আবাদে আগ্রহী হচ্ছেন।