ঝিনাইদহের ৪টি আসনে বড় দু দলেই আসতে পারে নতুন মুখ

টালমাটাল রাজনীতির পরিণতি নিয়ে নানা সমীকরণের চেষ্টা সম্ভাব্য প্রার্থীদের

 

ঝিনাইদহ অফিস: দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে মাঠপর্যায়ের রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা শেষ মুহূর্তে টালমাটাল রাজনীতির নানা সমীকরণের চেষ্টা করছেন। তাদের ভাবনা নির্বাচন হবে কি-না হলে কীভাবে, জোটবদ্ধ না প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো একক নির্বাচনে যাবে। জোটবদ্ধ নির্বাচন হলে অনেক প্রার্থীর হিসাব বদলে যাবে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্তবর্তী জেলা ঝিনাইদহেও এসব ভাবনা সম্ভাব্য প্রার্থীদের মাঝে। জেলার ৪টি আসনে বড় দু দলেই আসতে পারে নতুন মুখ। এ জেলার সম্ভব্য প্রার্থীরা কেন্দ্রে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরতে এখন দলীয় কর্মসূচি পালনের দিকেই মনোযোগ দিয়েছেন। তবে Jhenidah Election Photo.এসবের ফাঁকে চাররঙা ছবি, ডিজিটাল পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন  শহর-গ্রামের মোড়ে মোড়ে ঝুলিয়ে ভোটারদের মাঝে পরিচিত হবার চেষ্টা করছেন। এদিকে বড় দু দলের প্রার্থী কারা হচ্ছেন, এ নিয়ে হাট-বাজার, চায়ের দোকানে ভোটারদের মধ্যেও চলছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। ঝিনাইদহের ৪টি নির্বাচনী এলাকায় ইতোমধ্যে মহাজোট ও ১৮ দলীয় জোটের নতুন মুখসহ প্রায় ৬০ প্রার্থী মানুষের সাথে গণসংযোগ শুরু করেছেন। দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্র“তি। আর বিগত সময়ের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাজের কঠোর সমালোচনা করে ব্যস্ত সময় পার করছেন। অনেকে আবার এলাকায় নতুন করে পরিচিতি সভা করে নিজেকে তুলে ধরছেন। দলের ক্ষত দূর করে সবাইকে এক কাতারে আসার আহ্বানও জানাচ্ছেন কোনো কোনো প্রার্থী। পুরোনোদের অনেকে আবার অতীতের ভুলভ্রান্তির জন্য ক্ষমা চেয়ে আবারও সুযোগ দেয়ার জন্য ভোটারদের আশীর্বাদ প্রার্থনা করছেন।

মূলত জেলার ৪ নির্বাচনী এলাকা বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত হলেও গত ২০০৮ সালের নির্বাচনে সবগুলোতেই মহাজোট প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়। বর্তমানে ৪ আসনেই বিএনপি ও আওয়ামী লীগের চরম কোন্দল রয়েছে। এছাড়া জেলায় গত নির্বাচনে জামায়াতের দাবিকৃত একটি আসনে বিএনপি ছাড় না দেয়ায় জামায়াতের সাথে বিএনপির ভেতরে ভেতরে চলছে ঠাণ্ডা লড়াই।

প্রধান দু দলের রাজনৈতিক অবস্থা: ঝিনাইদহের ৪ নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থা মোটেও ভালো নয়। ব্যক্তি ইমেজ সৃষ্টি করতে পারেনি অধিকাংশ নেতা। গত ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচন, পৌরসভা নির্বাচন, উপজেলা নির্বাচন ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জেলার সব উপজেলায় আওয়ামী লীগ থেকে দুটি গ্র“প থেকেই আলাদা আলাদা প্রার্থী দেয়া হয়। সরকারী দল হওয়ায় সুযোগ-সুবিধা নিয়ে আরো বেশি লবিং গ্র“পিং শুরু হয় প্রথম থেকেই। সাধারণ নেতাকর্মীরাও দ্বিধাবিভক্তি হয়ে পড়েছে। ধস নেমেছে দলের ইমেজে। ঝিনাইদহ-১ (শৈলকুপা) আসনটিতে আওয়ামী লীগের শক্ত দুটি গ্র“পের একটিতে রয়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শিকদার মোশারফ হোসেন সোনা অপরটিতে উপজেলা চেয়ারম্যান নায়েব আলী জোয়ার্দ্দার, পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি পৌর মেয়র আশরাফুল আজম। ঝিনাইদহ-২ (সদর-হরিণাকুণ্ডু) আসনে আওয়ামী লীগে সবচেয়ে বেশি কোন্দল। এখানে একাধিক গ্র“পের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বর্তমান সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম অপু, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. আজিজুর রহমান, পৌরমেয়র কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা সাইদুল করিম মিন্টু এবং উপজেলা চেয়ারম্যান কনক কান্তি দাস। ঝিনাইদহ-৩ (কোটচাঁদপুর-মহেশপুর) আসনে দুটি গ্রুপ রয়েছে। কোটচাঁদপুর ও মহেশপুর উপজেলা নিয়ে এ আসন গঠিত হলেও মহেশপুরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব চলে। একটি গ্রুপে বর্তমান সংসদ সদস্য অ্যাড. শফিকুল আজম খান চঞ্চল অপরটিতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান সাজ্জাতুজ জুম্মা চৌধুরী। ঝিনাইদহ-৪ (কালীগঞ্জ ও সদর উপজেলার আংশিক) আসনটিতে আওয়ামী লীগের দ্বন্দ্ব চরমে। আওয়ামী লীগের উপজেলা সভাপতি বর্তমান সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নান এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ারুল আজীম আনার পৃথক দুটি গ্রুপ নিয়ন্ত্রণ করছেন।

এদিকে জেলার ৬ উপজেলায় ৪ নির্বাচনী এলাকায় বিএনপি কোন্দল-গ্রুপিঙে জর্জরিত। কারও সাথে কারো মুখ দেখাদেখি পর্যন্ত নেই। প্রত্যেক উপজেলায় বিএনপির গ্রুপিঙের কারণে দলের কার্যক্রম একেবারেই ঝিমিয়ে পড়েছে। অনেক উপজেলায় নেই দলীয় কার্যালয়। শৈলকুপায় বিএনপির রাজনীতিও দু ভাগে বিভক্ত। একটি গ্রুপের নেতৃত্ব দেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল ওহাব, অপর গ্রুপে নেতৃত্বে রয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতা জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু। জেলা সদরে বিএনপির নেতৃত্ব দেন বিএনপির জেলা সভাপতি দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মসিউর রহমান। তিনি এককভাবেই দল নিয়ন্ত্রণ করছেন। তার মতামতেই অঙ্গসংগঠনের কমিটি হয়। এ নিয়ে বিরোধ রয়েছে কর্মীদের মধ্যে। মহেশপুর-কোটচাঁদপুরে একটি গ্র“পে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাবেক সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম মাস্টার, ইঞ্জিনিয়ার মোমিনুর রহমান এবং অপরটিতে রয়েছেন জনপ্রিয় কন্ঠশিল্পী জাসাস নেতা মনির খান। কালীগঞ্জেও ২টি গ্র“প বিদ্যমান। এখানে বিএনপির একটি গ্র“পের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাবেক সংসদ সদস্য এম শহিদুজ্জামান বেল্টু ও আইনাল হাসান এবং অপরটিতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন উপজেলা বিএনপি একাংশের আহ্বায়ক সাবেক পৌর মেয়র মাহাবুবার রহমান ও পৌরসভার প্যানেল চেয়ারম্যান যুগ্মআহ্বায়ক হামিদুল ইসলাম।

ঝিনাইদহ-১ আসন: জেলার শৈলকুপা উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়ন নিয়ে ঝিনাইদহ-১ আসন গঠিত। এ আসনে মোট ভোটার ২ লাখ ৪৯ হাজার ২৪২ জন। এর মধ্যে মহিলা ভোটার ১ লাখ ২৪ হাজার ৭৭৭ ও পুরুষ ভোটার ১ লাখ ২৪ হাজার ৪৬৫ জন। নতুন ভোটার ১৭ হাজার ৬৭৪ জন। সংখ্যালঘু ভোটার ৫৫ হাজার। এ আসনে এবার আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা হলেন- ঝিনাইদহ-১ আসনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন ১০ জন সম্ভাব্য প্রার্থী। তারা হলেন- বর্তমান সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী আব্দুল হাই, শৈলকুপা উপজেলা চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নায়েব আলী জোয়ার্দ্দার, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবেদ আলী, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্মসম্পাদক তৈয়ব আলী জোয়ার্দ্দার, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা রেজাউল ইসলাম রাজু, সাবেক যুগ্মসচিব মীর শাহাবুদ্দিন, ঢাকার মিরপুর আওয়ামী লীগ নেতা কাজী আজাদ, সুপ্রিম কোর্টের সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাড. মাসুদ রুমী, সাবেক যুবলীগ নেতা অধ্যক্ষ বাদশা আলম, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শামসুল ইসলাম জোহা ও অ্যাডভোকেট লিটন।

এ আসনে দলের নেতাদের লবিং গ্র“পিঙের প্রভাব তৃণমূল পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। গত সাড়ে ৪ বছরে গ্রামে গ্রামে আওয়ামী লীগ সমর্থক সামাজিক দলগুলোর মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন আওয়ামী লীগকর্মী নিহত এবং ২ শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। এছাড়া অনেকে হামলা মামলার স্বীকার হয়ে পথে বসেছেন। এসব কারণে ক্ষোভ সৃষ্টি হয় দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে। এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে আব্দুল হাই পরপর দু বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। সর্বশেষ তিনি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীও হয়েছিলেন। এবারও তিনি দলের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে এ আসন থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে তৃণমূল ভোটারদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে যাচ্ছেন। সভা-সমাবেশ করছেন গ্রাম পর্যায়ে। আব্দুল হাইকেই আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে দেখতে চান দলীয় নেতাকর্মীরা। অন্য সম্ভাব্য প্রার্থীরাও লবিং করে যাচ্ছেন বিভিন্নভাবে।

একইভাবে এ আসনে বিএনপির মধ্যেও রয়েছে তীব্র গ্র“পিং। দলীয় নেতাদের গ্র“পিঙের কারণে সাধারণ কর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়েছে। একে অপরের সাথে সাপে-নেউলে সম্পর্ক। সম্ভাব্য প্রার্থীরা গণসংযোগ করে যাচ্ছেন পৃথক পৃথকভাবে। নানান কৌশলে তারা কাছে টানার চেষ্টা করছেন ভোটারদের। এ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হলেন- শৈলকুপা উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল ওহাব কেন্দ্রীয় বিএনপির সহধর্মবিষয়ক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু।

বিএনপির আব্দুল ওহাব এর আগে এ আসন থেকে একাধিকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি এবারও সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে কোমর বেঁধে নির্বাচনী ময়দানে নেমেছেন। সভা-সমাবেশ ও গণসংযোগ করে যাচ্ছেন তিনি। এ ছাড়া অন্য প্রার্থীরাও দলীয় মনোনয়ন লাভের প্রত্যাশায় জোর লবিং-গ্র“পিং ও গণসংযোগ করে যাচ্ছেন। সব প্রার্থীই দলের নেতাকর্মীদের বুঝাতে চেষ্টা করছেন তিনিই দলের মনোনয়ন পাবেন। তবে বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীরা বলছেন, শৈলকুপা উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল ওহাবই আগামী নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পাবেন। জাতীয় পার্টি (এরশাদ)’র সম্ভাব্য প্রার্থী মনিকা আলম। তিনি দলের একক প্রার্থী হিসেবে গণসংযোগ করে যাচ্ছেন। মহিলা প্রার্থী হিসেবে তিনি নিজেকে ভোটারদের সামনে সৎ ও যোগ্য বলে উপস্থাপন করছেন। তিনিও বিজয়ের আশা নিয়ে তৃণমূল পর্যায়ের ভোটারদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে যাচ্ছেন। নিয়মিত সভা সমাবেশ করছেন নির্বাচনী এলাকায়।

দেশ স্বাধীনের পর এ আসনে যারা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন তারা হলেন- ১৯৭৩ সালে ডা. কাজী খাদেমূল ইসলাম (আ. লীগ), ১৯৭৯ সালে গোলাম মোস্তাফা (জাসদ), ১৯৮৬ সালে অধ্যক্ষ মো. কামরুজ্জামান (আ. লীগ), ১৯৮৮ সালে দবির উদ্দিন জোয়ার্দ্দার (জাসদ), ১৯৯১ সালে ও ১৯৯৬ সালে আব্দুল ওহাব (বিএনপি) ২০০১ সালে ও ২০০৮ সালে আব্দুল হাই (আ.লীগ)। এ আসনে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সাথে বিএনপির হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে সাধারণ ভোটাররা মনে করেন।

ঝিনাইদহ-২ আসন: হরিণাকুণ্ডু উপজেলা ও ঝিনাইদহ সদর উপজেলার একাংশ, ২টি পৌরসভা ও ২১টি ইউনিয়ন নিয়ে ঝিনাইদহ-২ আসন গঠিত। এ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৮৯ হাজার ৭৩৯ জন। এর মধ্যে মহিলা ভোটার ১ লাখ ৯৬ হাজার ১৯৬ জন ও পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৯৩ হাজার ৫৪৩ জন। নতুন ভোটার ৩২ হাজার ৭৬৪ জন। সংখ্যালঘু ভোটার ৯০ হাজার। এ আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মধ্যে মনোনয়ন নিয়ে চলছে চরম লবিং-গ্র“পিং। বিএনপিতে কোনো গ্র“পিং লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। বিএনপির রয়েছে একক প্রার্থী। আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা গ্রামে গ্রামে গণসংযোগ করে যাচ্ছেন। চলছে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা। নিজেকে তুলে ধরতে যার যার মতো করে কাজ করে যাচ্ছেন প্রার্থীরা। আগামী সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে এ আসনে মনোনয়ন চেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শফিকুল ইসলাম অপু, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. আজিজুর রহমান, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক কনক কান্তি দাস, ঝিনাইদহ পৌরসভার মেয়র জেলা আওয়ামী লীগ স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্মসম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্মসম্পাদক অ্যাড. আব্দুর রশিদ, সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জেএম রশিদুল আলম রশিদ, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য নুরজাহান বেগম ও হরিণাকুণ্ডু উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্মআহ্বায়ক আফজাল হোসেন।

এছাড়া দলের মনোনয়ন লাভের আশায় ভেতরে ভেতরে সকলেই কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা তৃণমূল ভোটারদের সাথে নিয়ে গণসংযোগ করছেন। ব্যাপক লবিং-গ্রুপিঙের কারণে দলের নেতাকর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়েছে। পিছিয়ে পড়েছে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম। গত ২০০৫ সালে জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়েছে। এরপর আর দলের কাউন্সিল হয়নি। ঝিনাইদহ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনও ১৪ বছর যাবত হয় না বলে জানা গেছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে দলের বিভক্তি ইউনিয়ন গ্রামপর্যায়ে বিস্তৃত হয়েছে। তৃণমূল পর্যায়ে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আওয়ামী লীগের দু গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটছে বিভিন্ন স্থানে। ক্ষমতায় থেকে পাওয়া না পাওয়া নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ ও অভিমানের সৃষ্টি হয়েছে। হরিণাকুণ্ডু উপজেলা আওয়ামী লীগও দু শিবিরে বিভক্ত। এক গ্রুপে আছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক মশিউর রহমান জোয়ার্দ্দার। তার প্রতিদ্বন্দী গ্রপে আছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্মআহ্বায়ক আফজাল হোসেন। সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বিশিষ্ট শিল্পপতি নুরে আলম সিদ্দিকীর বড় ছেলে তাহজীব আলম সিদ্দিকী সমি ঝিনাইদহের রাজনীতিতে নামার চেষ্টা করছেন। খেলাধুলা ও অন্য কর্মসূচির মাধ্যমে লাইম লাইটে আসতে তৎপর তিনি। আগামী নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় তার নামও শোনা যাচ্ছে।

অন্যদিকে এ আসনে এখনও পর্যন্ত সাবেক সংসদ সদস্য জেলা বিএনপির সভাপতি কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মসিউর রহমান দলের একক সম্ভাব্য প্রার্থী। তার বিকল্প অন্য কোনো প্রার্থীর নাম শোনা যায়নি। এ আসনে দলের মধ্যে মসিউর রহমান প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য কোনো লবিং-গ্র“পিং সৃষ্টি হতে দেননি। বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনগুলো বিভিন্ন কর্মসূচিতে শোডাউন করে চলেছে। প্রায়ই দলের নানা কর্মসূচি দিয়ে তিনি সরব করে রেখেছেন এ আসনের নেতাকর্মীদের। তবে দুদকের  সম্পদ-সম্পত্তির মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। একাধিকবার পুলিশ তার বাসায় অভিযান চালিয়েছে। মসিউর রহমান নির্বাচনে দাঁড়াতে না পারলে প্রার্থী সঙ্কট দেখা দিতে পারে এ আসনে। জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে রয়েছে জেলা আমির নুর মোহাম্মদ। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পশ্চিমাঞ্চল ও হরিণাকুণ্ডু উপজেলায় জামায়াতের শক্ত অবস্থান রয়েছে। তবে তারা এ আসনে ছাড় দিয়ে বিএনপির সাথে ঐক্যবদ্ধ নির্বাচন করবে বলে শোনা যাচ্ছে।

এ আসনে জাতীয় পার্টির (এরশাদ) প্রার্থী এনজিও সৃজনী বাংলাদেশের চেয়ারম্যান জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ড. হারুন অর রশিদ। সম্প্রতি শহরের ওয়াজির আলী হাইস্কুল মাঠে এক জনসভায় দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তাকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেন। তিনি নিজের অবস্থান শক্ত করে তুলতে প্রতিনিয়ত মিছিল-মিটিং, সভা-সমাবেশ করে যাচ্ছেন। ক্লিন ইমেজের এ সম্ভাব্য প্রার্থী এবার বিজয়ের আশা নিয়ে রাজনৈতিক ময়দান চষে বেড়াচ্ছেন। ফলে বিএনপি ও জাতীয় পার্টির একক সম্ভাব্য প্রার্থীদের মোকাবেলা করতে আওয়ামী লীগের ঐক্যবদ্ধ নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই বলে অভিমত সাধারণ ভোটার ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ বজলুর রহমান সাঈদকে তাদের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছে। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে এ আসনে যারা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন তারা হলেন- ১৯৭৩ সালে নূরে আলম সিদ্দিকী (আ. লীগ), ১৯৭৯ সালে মাও. নুরুন্নবী সামদানী (আইডিএল), ১৯৮৬ সালে আনোয়ার জাহিদ (জাতীয়পার্টি), ১৯৮৮ সালে আশরাফুল আবেদীন আশা (জাতীয়পার্টি), ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে মসিউর রহমান (বিএনপি) এবং ২০০৮ সালে শফিকুল ইসলাম অপু (আঃ লীগ)।

ঝিনাইদহ-৩ আসন: জেলার মহেশপুর ও কোটচাঁদপুর উপজেলার ২টি পৌরসভা ও ১৭টি ইউনিয়ন নিয়ে ঝিনাইদহ ৩ আসন। এ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ২০ হাজার ৫৫৮ জন। এর মধ্যে মহিলা ১ লাখ ৫৯ হাজার ৮৭০ জন ও পুরুষ ১ লাখ ৬০ হাজার ৬৮৮ জন। নতুন ভোটার ১৭ হাজার ৯০৯ জন। সংখ্যালঘু ভোটার ৩০ হাজার। এ আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে তীব্র দ্বন্দ চলছে। এর প্রভাব পড়েছে দল দুটির তৃণমূল পর্যন্ত। এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হচ্ছেন বতর্মান সংসদ সদস্য অ্যাড. শফিকুল আজম খাঁন চঞ্চল, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. আজিজুর রহমান, মহেশপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বিশিষ্ট শিল্পপতি শাহাজালাল ইসলামী ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান সাজ্জাতুয জুম্মা, মহেশপুর উপজেলা চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ময়জদ্দীন হামীদ, ঝিনাইদহ জেলা কৃষকলীগের সহসভাপতি এসবিকে ইউপি চেয়ারম্যান সাজ্জাদুল ইসলাম সাজ্জাদ, যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক অধ্যক্ষ নবী নেওয়াজ, সাবেক যুবলীগ নেতা আজিবার রহমান মহন, কোটচাঁদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শরিফুনেচ্ছা মিকি, সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান আলী, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপকমিটির সহসম্পাদক রেজাউল করিম টিটন, এমএ জামান মিল্লাত, অ্যাড. রোকনুজ্জামান প্রিন্স ও অ্যাড. জিহাদ। এ আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরোধ রয়েছে। ক্ষমতাসীন দল হিসেবে পাওয়া না পাওয়ার ক্ষোভ আছে নেতাকর্মীদের মাঝে। এ আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হচ্ছেন মহেশপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি সহিদুল ইসলাম মাস্টার, জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক কণ্ঠশিল্পী মনির খান, মহিলা দল নেত্রী অ্যাড. শেলী সুলতানা জামান, কোটচাঁদপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম সিরাজ, কোটচাঁদপুর পৌরসভার মেয়র সালাউদ্দিন বুলবুল সিডল ও কৃষকদলের সভাপতি অ্যাড. মাহফুজুল হক খান বাবু। তারা সকলেই দলীয় মনোনয়ন পেতে তৎপর বলে জানা গেছে। জাতীয় পার্টির (এরশাদ) আব্দুর রহমান মনোনয়ন প্রত্যাশায় গণসংযোগ করে যাচ্ছেন। এ আসনে বিএনপির গ্র“পিং আরও তীব্র। কণ্ঠশিল্পী মনির খান দলের মনোনয়ন প্রত্যাশায় এলাকায় ভোটারদের সাথে সভা-সমাবেশ ছাড়াও ব্যাপক গণসংযোগ করে যাচ্ছেন। সাধারণ ভোটারদের মাঝে তার নিয়ে বেশ সাড়া পড়েছে। আগামী নির্বাচনে মনির খান প্রার্থী হলে জয়লাভ করবেন বলে বলছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা।

এদিকে উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি সহিদুল ইসলাম মাস্টারও অসুস্থ। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তার বাড়ির মাটি খুঁড়ে ত্রাণের টিন, শাড়ি, লুঙ্গি, কম্বলসহ বিপুল পরিমাণ ত্রাণসামগ্রী উদ্ধার করে যৌথবাহিনী। এরপর থেকে তিনি একটু চুপসে যান। মহেশপুর-কোটচাঁদপুর জামায়াতের ঘাঁটি এলাকা হিসেবে পরিচিত। ১৮ দলের শরিক দল হিসেবে এ আসনটি এবার জামায়াত দাবি করতে পারে বলে জানা গেছে। সেক্ষেত্রে জামায়াতের কেন্দ্রীয় মসলিশে শুরা সদস্য ও জেলা রাজনৈতিক সেক্রেটারি অধ্যাপক মতিয়ার রহমান এ আসনে জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী বলে জানা গেছে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মুফতি আব্দুল কুদ্দুসকে তাদের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছে। এর আগে এ আসনে যারা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন তারা হলেন- ১৯৭৩ সালে ময়েজউদ্দিন মিয়াজী (আ. লীগ), ১৯৮৯ সালে মাও. মোজাম্মেল হক (আইডিএল), ১৯৮৬ সালে মাওলানা মোজাম্মেল হক (জামায়াত), ১৯৮৮ সালে শামসুল হুদা খান (জাতীয় পার্টি), ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে সহিদুল ইসলাম মাস্টার (বিএনপি) এবং ২০০৮ সালে শফিকুল আজম খান চঞ্চল (আ. লীগ)।

ঝিনাইদহ-৪ আসন: জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন, ১টি পৌরসভা ও ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ৪টি ইউনিয়নসহ মোট ১৫টি ইউনিয়ন নিয়ে ঝিনাইদহ-৪ আসন গঠিত। এ আসনে মোট ভোটার ২ লাখ ৪৯ হাজার ২৪২ জন। এর মধ্যে মহিলা ১ লাখ ২৪ হাজার ৭৭৭ ও পুরুষ ১ লাখ ২৪ হাজার ৪৬৫ জন। নতুন ভোটার ১৭ হাজার ৬৭৪ জন। সংখ্যালঘু ৫৫ হাজার। এ আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও প্রধান বিরোধী দল বিএনপির মধ্যে তীব্র কোন্দল রয়েছে। এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হচ্ছেন বর্তমান সংসদ সদস্য কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল মান্নান, সাধারণ সম্পাদক উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ারুল আজিম আনার, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আক্কাস আলী, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জাহাঙ্গীর আলম সিদ্দিকী ঠাণ্ডু, জেলা আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক গোলাম সরোয়ার সউদ, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ডা. রাশেদ শমসের, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য কালীগঞ্জ পৌর মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান বিজু ও বাস্তুহারা লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি তোফাজ্জেল হোসেন বাবু।

এ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নানের সাথে কালীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ারুল আজিম আনারের মধ্যে দা-কুমড়ার সম্পর্ক। তাদের এ দ্বন্দ্ব দলের তৃণমূল পর্যন্ত ছড়িয়ে গেছে। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে প্রায়ই সংঘর্ষ লেগেই আছে। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দের জেরে গত ৪ মাসে ৪ জন দলীয় কর্মী খুন হয়েছে। তাছাড়াও বেশ কিছু দলীয় কর্মী সংঘর্ষে আহত হয়ে পঙ্গুত্ববরণ করেছে। গত সংসদ নির্বাচনে আব্দুল মান্নান ও আনোয়ারুল আজীম আনার দুজনই মনোনয়নের জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে লবিং করেন। প্রথম দফায় আনোয়ারুল আজীম আনারকে দল থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়। কিন্তু তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলার অভিযোগসহ নানা ধরনের অভিযোগ কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে পাঠানো হয়। এরপর তার মনোনয়ন বাতিল করে আব্দুল মান্নানকে মনোনয়ন দেয়া হয়। এ মনোনয়ন নিয়ে দুজনের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। তাদের কারণে কালীগঞ্জ আওয়ামী লীগ প্রকাশ্যে দু ভাগ হয়ে পড়েছে। এখানে তাদের দুজনের ব্যাপক গ্রুপিং থাকায় দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড একেবারেই ঝিমিয়ে পড়েছে। এছাড়া এ উপজেলায় আওয়ামী লীগের নেই কোনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি। ফলে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সর্বস্ব কমিটি দিয়ে চলছে কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ। নেতাকর্মীদের মধ্যে রয়েছে চরম অসন্তোষ।

অন্যদিকে বিএনপির মধ্যেও এ আসনে তীব্র গ্র“পিং রয়েছে। বিএনপির দু গ্র“পের মধ্যে বোমাবাজিসহ সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটছে। এ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হচ্ছেন সাবেক সংসদ সদস্য এম শহিদুজ্জামান বেল্টু, ছাত্রদলের  কেন্দ্রীয় সহসভাপতি সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, কালীগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র মাহবুবার রহমান ও উপজেলা বিএনপির যুগ্মআহ্বায়ক হামিদুল ইসলাম হামিদ। এ আসনে জাপার (এরশাদ) সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আব্দুল কাদের গণসংযোগ করছেন। জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে উপজেলা নায়েবে আমির মাও. আবু তালেবের নাম শোনা যাচ্ছে।

এ আসনে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য এম শহীদুজ্জামান বেল্টু গত ওয়ান-ইলেভেনের সময় দলে সংস্কারপন্থি হিসেবে চিহ্নিত হন। ফলে ওই সময় দলের একটি অংশ তার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। তাকে নিয়েই মূলত কালীগঞ্জ উপজেলা বিএনপি প্রকাশ্যে দু ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। দলের এ গ্র“পিঙের কারণে গত সংসদ, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এখানে দলীয় প্রার্থীদের চরমভাবে ভরাডুবি হয়। এ আসনে বিএনপির সাবেক পৌর মেয়র মাহবুবার রহমান ও উপজেলা বিএনপির যুগ্মআহ্বায়ক হামিদুল ইসলাম হামিদ লাইম লাইটে আসার চেষ্টা করছেন। এ আসনে আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মান্নান ও আনোয়ারুল আজিম আনার ঐক্যবদ্ধ নির্বাচন করলে বিএনপির সাথে তাদের লড়াই হবে হাড্ডা হাড্ডি এমন ধারণা সাধারণ মানুষের। এ আসন থেকে এর আগে যারা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছে তারা হলেন- ১৯৭৩ সালে জেকেএমএ আজিজ (আ. লীগ), ১৯৭৯ সালে এবাদত হোসেন মণ্ডল (বিএনপি), ১৯৮৬ সালে আব্দুস সাত্তার (জাতীয় পার্টি), ১৯৮৮ সালে মুক্তিযোদ্ধা মো. নুরুদ্দিন (জাতীয় পার্টি), ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে শহিদুজ্জামান বেল্টু (বিএনপি) ও ২০০৮ সালে আব্দুল মান্নান (আ. লীগ)।

এ চারটি আসনে রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি আসন্ন নির্বাচনে নিজেদের প্রার্থী হিসেবে প্রচার করে দলীয় মনোনয়ন পেতে দলীয় প্রধানদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন। একই সাথে নির্বাচনের আগে স্থানীয়ভাবে দলের অভ্যন্তরীণ সব বিবাদ মিটিয়ে নির্বাচনীর মাঠকে প্লেইন লেভেল ফিল্ড হিসেবে দেখতে চাইছেন সব প্রার্থী।