ঝিনাইদহের হরিণাকু-ু তৈলটুপি গ্রাম এখন গরু পালনে স্বাবলম্বী

গরুর গোবর জ্বালানির পাশাপাশি জমিতেও জৈব সার হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে
জাহিদুর রহমান তারিক: ঝিনাইদহের হরিণাকু-ু উপজেলার ভায়না ইউনিয়নের তৈলটুপি গ্রামের প্রায় শতভাগ কৃষাণ-কৃষানী গরু মোটা তাজাকরণ প্রকল্প গ্রহণ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। এ গ্রামের সাড়ে ৪শ’ কৃষকের মধ্যে ৪শ’ কৃষকই গরু মোটা তাজাকরণ প্রকল্প গ্রহণ করেছেন। কৃষকদের পাশাপাশি উপজেলার অনেক বেকার যুবকও গরু মোটা তাজা করণের কাজ করে ধিরে ধিরে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছে। প্রতি বছরই একেক জন কৃষক একাধিক গরু মোটা তাজাকরণের কাজ করে আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছে আর সেই সাথে এনেছে সংসারে স্বচ্ছলতা। তাছাড়া গরুর গোবর জ্বালানির পাশাপাশি জমিতেও ব্যবহার হচ্ছে জৈব সার হিসেবে। গরুর গোবর জমিতে সারের চাহিদাও পূরণ করছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় একাধিক কৃষক পরিবার। হরিণাকু-ুু উপজেলার ভায়না ইউনিয়নের দারিদ্র্য নিপিড়ীত একটি গ্রাম তৈলটুপি। এ গ্রামের হতদরিদ্র প্রায় ৪ শতাধিক কৃষাণ-কৃষানী তাদের দারিদ্র্য জয়ের লক্ষ্যে দীর্ঘ ৩০-৪০ বছর ধরে গরু মোটা তাজাকরণের কাজ করে আসছে।
স্থানীয় বিভিন্ন বাজার ও পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে আসা গরুর বাচ্চা কিনে ১-৩ বছর ধরে লালন-পালন করে মসুলমানদের বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব কোরাবানির ঈদের হাটে বিক্রি করে অধিক মুনাফা লাভ করছে। সেই সাথে পূরণ করছে স্থানীয় ও দেশের মানুষের মাংসের চাহিদার একাংশ। অধিকাংশ কৃষকই প্রতি বছর এক থেকে দুটি গরু কোরবানি ঈদের ৫-৬ মাস আগে থেকে আধুনিক পদ্ধতিতে মোটা তাজা করতে ব্যস্ত থাকেন। এ কাজে কৃষকদের সাথে কৃষানী ও তাদের ছেলে-মেয়েরাও সহায়তা করে থাকে। উপজেলার অনেক শিক্ষিত বেকার যুবক চাকরির আশায় না ঘুরে গরু মোটা তাজাকরণ পদ্ধতিকে পেশা হিসেবে বেছে নিচ্ছে। এ গ্রামে সবচেয়ে বেশি গরু লালন-পালন কারেন আদিল উদ্দিন জোয়ার্দ্দার। তার বর্তমানে ৩০-৩৫টি গরু ও ৩ জন রাখাল আছে। পাকা গোয়াল ঘরে গরু রাখেন তিনি। কোরাবানির ঈদের হাটে বিক্রি করে অধিক মুনাফা লাভ করছেন তিনি। গরু পালন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন সকিনা নামে একজন বিধবা নারী। ২৫ হাজর টাকা নিয়ে ব্যবসা আরম্ভ করে এখন তার পুজি ৩ লাখ টাকা। পাশাপাশি ছেলে-মেয়ে মানুষ ও সংসার চালিয়েছেন তিনি।
নাজিম উদ্দীন জানান, ৩০ বছর ধরে তিনি এ কাজ করে আসছেন। ওষুধ ও খাদ্যের দাম দিনদিন বাড়ছে। এতে লাভের পরিমাণ আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে। প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা ঠিকভাবে আসে না বলে তিনি জানান। গ্রামের গৃহিনীরা জানান, তারা তাদের বাড়ির পুরুষদের গরু লালন-পালনে সহায়তা করে থাকেন। আদিল উদ্দিন জোয়ারদারের গোয়ালের শ্রমিক মাসে ৬ হাজার টাকা বেতনে কাজ করেন। এছাড়াও গরুর বিষ্টা (গোবর) জ্বালানি পাশাপাশি রাসায়নিক সারের ব্যবহারের পরির্বতে গোবর জমিতে ব্যবহার দিনদিন বৃদ্ধিসহ জমির উর্বরা শক্তি বাড়ছে এবং ব্যাপক ফসলের ফলন বাড়ছে।
ঝিনাইদহ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা জানান, ঝিনাইদহ জেলায় প্রচুর গরু মোটা তাজা করণ করা হয়। এর মধ্যে তৈলটুপি গ্রামে বেশি হয়। এদেরকে সরকারিভাবে আর্থিক সাহায্য করা হলে দেশীয় বাজারের মাংসের চাহিদা পূরণ করে বিদেশেও রফতানি করতে পারতো। ফলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে গ্রামটি সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারতো। কৃষকরা দাবি করে বলেন, কোনো ধরনের সরকারি পৃষ্ঠপোশকতা তারা পায় না। তারা আশা পোশন করেন সরকার তাদের এ ব্যাপারে সহায়তা করলে তারা দেশীয় বাজারে মাংসের চাহিদা পূরণসহ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারবেন।