ঝিনাইদহের বেদানার বিবাহ ব্যবসা : ব্ল্যাকমেইল ও মামলা করে টাকা আদায়

 

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহের বেদানা খাতুনের মূল ব্যবসায় হচ্ছে বিবাহ ব্যবসা। ব্ল্যামেইল ও হামলা-মামলা করে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে মানুষকে সর্বশান্ত ও চিরতরে ধ্বংস করে দেয়ায় হচ্ছে তার মূল লক্ষ্য।

কে এই বেদানা খাতুন? ঝিনাইদহের সদর থানার এসপি অফিসের সামনে লক্ষিকোল গ্রামের মৃত আয়ূব আলীর কন্যা বেদানা খাতুনের দুই মেয়ে নিয়ে বসবাস। এর আগে বেদানা ঝিনাইদহ সদরের নাটাবাড়িয়া গ্রামে বসবাস করতো। বেদানা প্রতিদিন সকালে ঝিনাইদহের চুয়াডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডের হোটেল ও চায়ের দোকানে পানি টানা কাজ করে। পানি টানা কাজের ফাঁকে-ফাঁকে সে সহজ সরল মনের মানুষ খুঁজে-খুঁজে তাদের সাথে পরিচয় পর্ব শেষে কৌশলে লাখ-লাখ টাকা দেনমহরের মাধ্যমে বিবাহের জালে আবদ্ধ করে। তবে বেদানার টার্গেট টাকা পয়সা ওয়ালা ও সহজ-সরল মনের দোকান মালিককে বিবাহ নামক নাটকের জালে ফাঁসিয়ে লাখ-লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া। ইতোমধ্যে সে কমপক্ষে ১৪-১৫ জনকে ফুঁসলিয়ে প্রেম-ভালোবাসার ফাঁদে ফেলে বিয়ে শেষে ব্ল্যাকমেইল করে ও হামলা-মামলা করে সর্বশান্ত করে দিয়েছে।

বেদানা আগের স্বামীগুলোকে নিঃশ্বেষ করে তালাক দিয়ে অবশেষে ঝিনাইদহ সদর থানার খাজুরা গ্রামের মৃত. আজিম উদ্দিনের ছেলে ঝিনাইদহের চুয়াডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডের খ্যাতিমান ও সহজ-সরল চায়ের দোকান মালিক  মিন্টু বিশ্বাসকে ২৫ ডিশেম্বর ২০১৩ কৌশলে এক লাখ টাকা দেনমহরে বিয়ে করে। ২৬ ডিশেম্বর ২০১৩ ঝিনাইদহ ম্যজিস্ট্রেট কোর্টে উক্ত বিয়ের এফিডেভিট করা হয়। বেদানা বিয়ের পর থেকেই তার স্বামী মিন্টু বিশ্বাসের ওপর নির্যাতন শুরু করে দেয়। ভরণপোষণ দেয়া স্বত্ত্বেও প্রতিদিন রাত্রে বেদানা মিন্টুর চায়ের দোকানে এসে ৫শ, ৭শ ও হাজার ১২শ টাকা করে নিতে থাকে। এভাবে মিন্টু প্রতিনিয়ত দোকান থেকে বেদানাকে টাকা পঁয়সা দিতে দিতে সর্বশান্ত হয়ে পড়ে। পরবর্তিতে মিন্টু পূর্বের তুলনায় টাকা পয়সা দিতে না পারলে, বেদানা হামলা-মামলার ভয় দেখাতে থাকে। অসহায় মিন্টু ক্রমান্বয়ে বেদানার ব্ল্যাকমেইল শিকারে পরিণত হয়।

মিন্টু-বেদানার বিয়ের ২ মাস যেতে না যেতেই ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ বেদানা ঝিনাইদহের সদর থানায় মিন্টুর বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দাখিল করে। অভিযোগ সত্য প্রমাণ না হওয়ায় তৎকালীন ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি বিষয়টি উভয় পক্ষকে থানায় ডেকে এনে মীমাংশা করে দেন। বেদানা স্বার্থ সিদ্ধির জন্য সুযোগ বুঝে আবার ২১ এপ্রিল ২০১৪ ঝিনাইদহ কোর্টে মিন্টুর বিরুদ্ধে একটি যৌতুক মামলা দায়ের করে। সেই যৌতুক মামলায় দেড় বছর ধরে সাক্ষী হয় না। যৌতুক মামলার পরে আবার নারী ও শিশু মামলা করে বেদানা। নারী ও শিশু মামলা খারিজ হওয়ার পরে আবারও নতুন করে মিন্টুর বিরুদ্ধে নারী ও শিশু মামলা করেছে বেদানা খাতুন। তাছাড়া বেদানা ইতোমধ্যে পারিবারিক, পিটিশন ও ৭ ধারার মামলা দিয়ে মিন্টুকে নিঃস্ব করেছে। মামলার বোঝা মাথায় নিয়ে মিন্টু এখন দিশেহারা।

এ ব্যাপারে ঝিনাইদহের চুয়াডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডের- ভাই ভাই স্টোরের মালিক শহিদুল ইসলাম, শাওন ফার্মেসির মালিক ডা. নুরাঙ্গির ও শাওন ফার্মেসির কর্মচারি মতিয়ার, সোহাগ ইলেকট্রিকের সোহাগ, ঝিনুক মার্কেটের মালিক মিল্টন, শৈলকুপার ব্যবসায়ী টিপু, মুদিখানার দোকানের মজিবার, মাইক্রবাসের ড্রাইভার হামিদ, প্রাইভেট ড্রাইভার খোকন, ফল ব্যবসায়ী রমজান, মুদিখানার দোকানের নুরু বলেন, বেদানার নেশাই হচ্ছে বিবাহ ব্যবসা করা। অতঃপর ব্ল্যাকমেইল করার পরে হামলা-মামলা করে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে মানুষকে সর্বশান্ত করা।

বাসস্ট্যান্ডের দোকান মালিকরা আরও বলেন, বিয়ে ব্যবসায়ী বেদানার এ পর্যন্ত ৬ স্বামীকে আমরা চিনি তার মধ্যে, ইনতাজ-লেবুতলা, সোহেল-পাবনা, মোহাম্মদ-মেহেরপুর, হামজা পিতা আকবার-চাকলাপাড়া, খাজুরার রমজানের ছেলে মওলাকে তালাক দিয়ে শেষে-মিন্টুকে বিবাহ করে। সর্বশেষ ২৫ অক্টোবর ২০১৬ মঙ্গলবার বেদানা ও তার দু কন্যাসহ টিটনের ফলের দোকানে গিয়ে টিটন ও মিন্টুর দোকান বোম মেরে উড়িয়ে দিবে বলে প্রতিনিয়ত হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। এদিকে অসহায় মিন্টু ঝিনাইদহের প্রশাসনসহ সকল স্তরের ব্যক্তিবর্গের কাছে বিচার দাবি তুলে বলেছেন, বেদানা খাতুন কোনো শক্তির বলে আমার মতো সাধারণ মানুষের নামে মামলা করেই যাচ্ছেন? প্রশাসন সব কিছু জানা স্বত্বেও কেন বেদানার কথা শুনে আমাকে বছরের পর বছর হেনস্তা করছে? আমি ঝিনাইদহের প্রশাসনের কাছে জানতে চাই আমার অপরাধ কী?