ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের পামচাষিদের মুখের হাসি ম্লান হতে চলেছে

কালীগঞ্জ প্রতিনিধি: প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে গ্রীণ বাংলাদেশ নামক একটি কোম্পানির প্রতিনিধিদের কথায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের বিভিন্ন গ্রামে শুরু হয় পামচাষ। কোম্পানির লোভনীয় কথায় এ এলাকার কৃষকরা অতি গুরুত্ব সহকারে পামচাষের প্রতি ঝুঁকে পড়েন। সারাবছর পরিশ্রমের পর এখন তাদের গাছে গাছে থোকায় থোকায় পাম ফল। ভালো ফলন পেয়ে তো কৃষক মহাখুশি। কিন্তু এ খুশি যেন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে তাদের কপালে। কারণ এ ফলের সঠিক প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং বিপণন পদ্ধতি জানা নেই কৃষকদের। এদিকে গাছ লাগানোর এক বছর পর গ্রীণ বাংলাদেশ নামক কোম্পানির প্রতিনিধিরাও উধাও হয়ে যায়। তাই এ ফল নিয়ে মহাবিপদে পড়েছেন উপজেলার পামচাষিরা।

উপজেলার ভাতঘরা গ্রামের পামচাষি মাহবুব জানান, তিনি এক বিঘা জমিতে পামচাষ করেছেন। সাড়ে ৩ বছর আগে লাগানো গাছগুলো এখন পরিপূর্ণ ফল দিতে শুরু করেছে। এখন পাম ভাঙিয়ে তেল বের করার পালা, আর সেখানেই বিপত্তি। পাম ভাঙানোর কোনো মেশিন না থাকায় এবং চাষিরা পাম প্রক্রিয়াজাতের সঙ্গে পরিচিত না হওয়ায় সঠিক প্রক্রিয়ায় পাম থেকে তেল উৎপাদন অথবা পামবীজ বিপণন করতে পারছেন না। মাহবুব আরো জানান, কালীগঞ্জ উপজেলায় গ্রীণ বাংলাদেশের কাছ থেকে বিভিন্ন এলাকার চাষিরা প্রায় ৮হাজার পামের চারা ক্রয় করে লাগান হয়। তার জানামতে প্রায় প্রত্যেকের গাছেই ফল এসেছে। ফল আসায় আনন্দিত হয়েছিলেন চাষিরা কিন্তু সেই আনন্দ বেশি দিন ধরে রাখতে পারেননি। কারণ গাছে ফল থাকলেও  ফলের ক্রেতা নেই।

অনুপমপুরের পামচাষি মিজানুর রহমান জানান, তিনি গ্রীণ বাংলাদেশ নামক কোম্পানির কাছ থেকে একটি গাছ ৮শ’ টাকা দরে ৪০টি পাম গাছ কিনেছিলেন। কোম্পানির প্রতিনিধিরা ৩ বছর পরিচর্যা করবেন এবং ফল এলে তা বিক্রির ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু গাছ লাগানোর এক মাসের মধ্যেই ওই কোম্পানির প্রতিনিধি গা ঢাকা দেয়।  বড় ঘিঘাটি গ্রামের আরিজ মিয়া জানান, তিনি ২০টি পাম গাছ প্রতিটি ২২০ টাকা (পরিচর্যা বাদে) দরে কিনেছিলেন। অনেক পরিশ্রম করেছেন পাম বাগানে। গাছে ফলও এসেছে কিন্তু ফলের ক্রেতা নেই। গাছ কেটে অন্য কিছু করবেন না রেখে দেবেন সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না।  শুধু মাহবুব, মিজান, আরিজ নয় উপজেলার দুলাল মুন্দিয়ার তাজুল,  একতারপুরের মুক্তার হোসেন, ডা. মোহাম্মদ, বাবরার তোরাব আলী, নিশ্চিন্তপুরের টিটো, পান্তাপাড়ার ওমর ফারুক, বারবাজারের আরশেদ আলীসহ বিভিন্ন এলাকায় চাষিরা একই সমস্যায় ভুগছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন জানান, উপজেলার মাটি, প্রকৃতি ও আবহাওয়া ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার চাইতে খারাপ নয়। এ মাটিতে পামচাষ করে ওই দু দেশের মতো ভালো ফলন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কালীগঞ্জের পামচাষিরা তাদের পাম ফল বিক্রি ও বিপণনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের প্রতি জোর দাবি জানান।