জিডি নিতে ভেড়ামারা ও দৌলতপুর থানার ঠেলাঠেলি বিএনপি নেতাসহ দুজনকে তুলে নেয়ার অভিযোগ

 

স্টাফ রিপোর্টার: কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় বিএনপির এক নেতাসহ দুজনকে পুলিশ পরিচয়ে তুলে নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় দুই থানার ঠেলাঠেলিতে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে পারছে না পরিবার। নিখোঁজ দুজন হলেন দৌলতপুর উপজেলার মরিচা ইউনিয়নের মাজদিয়াড় গ্রামের মৃত ঈমান আলীর ছেলে লিয়াকত আলী (৪৭) এবং মৃত দাউদ প্রামাণিকের ছেলে সাইফুল ইসলাম (৪০)। পেশায় কৃষক লিয়াকত মরিচা ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্মসাধারণ সম্পাদক। আর বিএ পাসসাইফুল একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ছিলেন। সম্প্রতি চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। ১৯ মে দিবাগত রাত একটার দিকে ভেড়ামারার লালন শাহ সেতুর টোলপ্লাজায় তাঁদের বাস থেকে নামিয়ে নেয়া হয়।

লিয়াকত আলীর পরিবারের এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, লিয়াকত আলী চিকিৎসার জন্য গত ২৩ এপ্রিল ঢাকায় যান। ১৯ মে সন্ধ্যা ৭টায় ঢাকা থেকে ফাতেমা এন্টারপ্রাইজ নামের একটি বাসে করে বাড়িতে ফিরছিলেন। আসন নম্বর ছিলো এফ-১। পাশের আসনে বসে ছিলেন সাইফুল ইসলাম। রাত একটার দিকে লিয়াকত মুঠোফোনে তার স্ত্রী কাজল রেখাকে বলেন, কিছুক্ষণের মধ্যে তিনি ভেড়ামারায় পৌঁছুবেন। তবে দেড়টার পর থেকে তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। ২০ মে সকালে ওই পরিবহনের কাউন্টারে যান পরিবারের সদস্যরা। তারা ওই বাসের চালক ও সুপারভাইজারের সাথে কথা বলে জানতে পারেন, লালন শাহ সেতু টোলপ্লাজায় পুলিশ বাসের গতি রোধ করে। এরপর দুজন সাদাপোশাকের ব্যক্তি বাসে উঠে লিয়াকত ও সাইফুলকে হাতকড়া পরিয়ে নিচে নেমে যান। নিচে একটি গাড়ির পাশে পুলিশের পোশাকে আরও তিনজন দাঁড়িয়ে ছিলেন।

পরিবার দুটি বলছে, ঘটনার বিষয়ে খোঁজ নিতে পরে তারা টোলপ্লাজা পুলিশ ক্যাম্পে গিয়েছিলো। তবে সেখানকার পুলিশ সদস্যরা বাস থামিয়ে কাউকে আটকের কথা অস্বীকার করেন। এরপর দুপুরে ভেড়ামারা থানায় গিয়ে ঘটনা জানিয়ে জিডি করতে চাইলেও থানার ওসি তা গ্রহণ করেননি। ওসি বলে দেন, যেহেতু নিখোঁজ দুজনের বাড়ি দৌলতপুর থানা এলাকায়, সেহেতু ওই থানায় জিডি করতে হবে। জানতে চাইলে ভেড়ামারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নূর হোসেন খন্দকার বলেন, ‘লালন শাহ সেতুর কাছ থেকেই ওই দুজনকে পুলিশ নিয়ে গেছে, তাদের (পরিবারের) কাছে এমন কী প্রমাণ আছে? এটা খুব স্পর্শকাতর বিষয়, এজন্য আমরা জিডি নিইনি।’ বাসের চালক ও সুপারভাইজারের বরাত দেয়ার কথা বললে ওসি বলেন, ‘এটা ক্লিয়ার হতে হবে, তাছাড়া কিছু বলতে পারছি না।’

দৌলতপুর থানার ওসি শাহ দারা খান বলেন, ‘দুটি পরিবারের সদস্যরা আমার কাছে এসেছিলো। তারা ঢাকা থেকে রওনা দেয়ার পর নিখোঁজ হয়েছেন। সেহেতু ঢাকায় জিডি হবে। আর ভেড়ামারা থেকে যদি নিখোঁজ হন, তাহলে ভেড়ামারায় জিডি হবে। ভেড়ামারা থানা কেনো জিডি নিচ্ছে না, এটা আমি বলতে পারব না।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাইফুলের এক চাচাতো ভাই বলেন, পুলিশের কাছে গেলে তারা কিছুই জানে না বলে জানাচ্ছে। পুলিশ শুধু এটুকু বলছে, আপনারা খোঁজেন, আমরাও খুঁজি।

দুজনের বিরুদ্ধেই মামলা আছে: দুই পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলে জানা যায়, লিয়াকত বিএনপির রাজনীতি করেন। ২০০৩ সালে তিনি ইউপি নির্বাচনে অংশ নিয়ে সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১৬ ও ২০১৭ সালে তার বিরুদ্ধে দুটি মাদকের মামলা হয়। এর একটিতে তিনি জামিনে আছেন। সাইফুল ইসলামের নামেও দেড় বছর আগে ঢাকায় একটি মাদকের মামলা হয়। সেই মামলায় তিনি জামিনে আছেন।