জমে উঠেছে চুয়াডাঙ্গার ঈদ বাজার : এবার পোশাকের নামে নয় সৌন্দর্যই করছে ক্রেতাদের আকৃষ্ট বি

পণী বিতানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় : দম ফেলার ফুরসত নেই বিক্রেতাদের

আলম আশরাফ/জহির রায়হান সোহাগ: বিপণী বিতানগুলো ঈদের কেনাকাটায় সরগরম। প্রতিনিয়ত ক্রেতাদের ভিড় বাড়ছে। ১৭ রোজা শেষ। ঈদের আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। এরই মধ্যে জমে উঠেছে চুয়াডাঙ্গার ঈদবাজার। নানা বয়সী মানুষের পদচারণায় মুখরিত জেলার মার্কেটগুলো। দোকানগুলোতে ক্রেতা-সাধারণের ভিড় ক্রমেই বাড়ছে। বেচা-বিক্রিতে ব্যবসায়ীরাও সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ঈদকে সামনে রেখে বিপণী বিতানগুলোতে দোকানিরা হরেক রকমের ডিজাইনের পোশাকের পসরা সাজিয়েছেন। নানা ডিজাইনের নতুন নতুন ঈদ পোশাক সাজিয়ে ক্রেতা আকর্ষণের প্রতিযোগিতা শুরু করেছে দোকানিরা। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলছে বেচাকেনা। ক্রেতারা বিভিন্ন বিপণী বিতান ঘুরে ঘুরে তাদের পছন্দের পোশাক, জুতো, কসমেটিকসসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র কেনাকাটায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। বিপণী বিতানগুলো ছাড়াও ফুটপাথের দোকানেও ক্রেতাদের ভিড় বেড়েছে। প্রতিবছরের ন্যায় এবছরও কেনাকাটায় তরুণী ও গৃহবধূদের প্রাধান্যই বেশি। ক্রেতারা জানান, এ বছর পোশাকের দাম বিগত বছরগুলোর তুলনায় বেশি। ফলে ক্রেতাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।

ঈদে তরুণীদের কাছে পছন্দের শীর্ষে থাকে সালোয়ার কামিজ। সবাই চায় ঈদের পোশাকটি হোক বিশেষ কিছু। ক্রেপ জর্জেট, জর্জেট কাপড়ে জারদৌসি কাজের প্রতি মেয়েদের আকর্ষণ সবসময়ই থাকে। ঈদ এলে তার চাহিদা যায় আরো বেড়ে। এবার এসব ডিজাইনের পোশাকের মধ্যে লং ও শর্ট কোটির ব্যবহার বেড়েছে। তার ওপরে জমাট সুতার কাজ। ফিরে এসেছে লং কুর্তা। এর সাথে শর্ট কোটির ডিজাইন। তবে এবার ঈদ গরমকালে হওয়ার কারণে তুলনামূলক হালকা রঙ ও ফ্লোরাল মোটিফের পোশাকেরও চাহিদা রয়েছে। এছাড়া জনপ্রিয় ভারতীয় সিনেমার নামে এসেছে জমকালো কাজের সালোয়ার কামিজ। বাহুবলী ডিজাইনের সালোয়ার কামিজ এসেছে বাজারে। লম্বা ঝুলের কামিজের ওপরে লম্বা কুর্তা। এছাড়া সুলতান সালোয়ার কামিজের লং কামিজের ওপরে শর্ট কোটি রয়েছে। সব মিলিয়ে বেচাকেনায় দারুণ ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলার বিভিন্ন বিপণী বিতান আর মার্কেটের পোশাক ব্যবসায়ীরা। রোজার প্রথম দিকে বেচা-বিক্রিতে কিছুটা ভাটা পড়লেও এখন ঠিক তার দ্বিগুণ উদ্যমে চলছে বাহারি পোশাক, জুতোর বিক্রি। তবে এবার ঈদ বাজারে ভারতীয় টিভি সিরিয়াল বা হিন্দি সিনেমার সাথে নামকরণ পোশাকের তেমন দেখা মেলেনি। সকাল ৯টা থেকে ১২টার ভেতর কেনাকাটা করে ক্লান্তি এলেও ইফতারের পর মার্কেটগুলোতে উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।

চুয়াডাঙ্গা সমবায় নিউ মার্কেট, প্রিন্সপ্লাজাসহ কয়েকটি মার্কেটে ঘুরে দেখা গেছে, ছেলে-মেয়েদের পোশাকের বাজার দখল করেছে হরেক রকমের শার্ট, প্যান্ট, পাঞ্জাবি, থ্রি-পিস ও দেশি-বিদেশি শাড়ি। শিশুদের পোশাকেও এসেছে নতুনত্বের ছোঁয়া। শুধু মার্কেট নয়, ভিড় বেড়েছে শহরের টেইলার্সের দোকানগুলোতেও। টেইলার্সের দোকানে কর্মরত শ্রমিকরা জানান, এবার ঈদে অনেক বেশি কাজের বায়না পেয়েছেন তারা। তবে পরিশ্রম বেশি হলেও ন্যায্যমূল্য দেন না মালিকরা। এছাড়া অতিরিক্ত লোডশেডিঙের কারণে সময়মতো পুরো কাজ শেষ করতে পারবেন কি-না তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন তারা। এদিকে নতুন করে সকল পণ্যে ভ্যাট আরোপের অজুহাতে পোশাকের দাম বাড়িয়েছেন বিক্রেতারা। তারা জানালেন, সম্প্রতি প্রতিটি পণ্যে অতিরিক্ত ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। তাই পোশাকের দামও কিছুটা বেশি। প্রথম দিকে বেচাবিক্রি কম থাকলেও ঈদের দিন ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে তা বাড়ছে। ক্রেতাদের ভিড় চাঁদ রাত পর্যন্ত থাকবে বলেও আশাবাদী তারা। পোশাকের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। ক্রেতাদের অভিযোগ, গত বছরের তুলনায় পোশাকের দাম কয়েক গুণ বেশি। তাই পছন্দের পোশাক কিনতে খরচ করতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। তবে নিজের জন্য না হলেও আপনজনদের ঈদের খুশি অক্ষুণ্ণ রাখতে সকলেই কেনাকাটায় ব্যস্ত ঈদ বাজারে। তবে পোশাকের ভিন্নতার সাথে এবারে ঈদ বাজারে পোশাকের দামও অনেক চড়া। তাতে কী! ঈদ বলে কথা। বিপণী বিতানগুলো ঘুরে যাচাই-বাছাই শেষে নিজেদের পছন্দের পোশাকটি বেছে নিচ্ছেন ক্রেতারা। নিউমার্কেট, পুরাতনগলি, প্রিন্সপ্লাজা, মুনসুপার মার্কেট, রেলবাজার মার্কেটসহ বিভিন্ন বিপণী বিতানগুলোতে নানা নাম ও বাহারি রঙের পোশাকের পসরা সাজিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। অন্য বছরের মতো এ বছরও ভারতীয় পোশাকের প্রতি ক্রেতাদের ঝোঁক বেশি বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। বিভিন্ন বিপণী বিতানগুলোতে ভিড় করছে নারী-পুরুষসহ বিভিন্ন বয়সী ক্রেতারা। ফলে এখনই দম ফেলার ফুরসত নেই এখানকার ব্যবসায়ীদের। ছেলেদের কালার ফুল শার্ট, চেক শার্ট, এক কালার শার্ট, জিন্স ও গ্যাবাডিং প্যান্টের পাশাপাশি বাহারি ডিজাইনের পাঞ্জাবি পছন্দের তালিকায় রয়েছে। ব্যবসায়ীরা পোশাকের মূল্য বৃদ্ধির কথা স্বীকার করে জানান, দেশীয় পোশাকের চেয়ে ভারতীয় পোশাক বেশি পছন্দ করছে মেয়ে ক্রেতারা। কলেজপড়ুয়া আরিফা খাতুন বলেন, ঈদের পোশাকে এক ধরনের প্রতিযোগিতা থাকে। তাতে দামের চেয়েও আকৃষ্ট করার বিষয়টি প্রাধান্য পায়। প্রতিযোগিতার এ স্থানে দেশীয় পোশাক স্থান পাচ্ছে কম। সুলতানা খাতুন বলেন, ভারতীয় থ্রি-পিসের ডিজাইন ও রঙ ভালো লাগছে। মধ্যবিত্তদের জন্য দামও আওতার মধ্যে রয়েছে।

এবার অনেকটা আগেভাগেই মার্কেটে আসতে শুরু করে ক্রেতারা। বিক্রেতাদের যেন দম ফেলার ফুসরত নেই। এবার আবহাওয়া ভালো থাকায় ব্যবসা ভালো হবে বলে মনে করেন তারা। কিন্তু শুরুতেই ঈদের বাজার অনেকটা চড়া। ঢাকার মোকামে দাম বৃদ্ধি তাই আমাদেরও একটু বেশি নিতে হচ্ছে। তবে শ শ অভিযোগের পাশ কাটিয়ে বিপণী বিতানগুলোতে ক্রেতাদের সরব উপস্থিতি জানান দিচ্ছে ঈদ কেনাকাটার। দোকানগুলোতে বরাবরের মতো এবারো শিশু ও মেয়েদের পোশাকে ভারতীয় ছাপ বেশি লক্ষ্য করা গেছে। এগুলোর চাহিদাও অনেক। ফলে ক্রেতার তালিকায় পুরুষের চেয়ে নারী ও শিশুর সংখ্যাই বেশি। গতবারের তুলনায় এবার ক্রেতাদের মাঝে এসেছে কিছু ভিন্নতা ভারতীয় বাংলা সিরিয়ালের চেয়ে হিন্দি সিরিয়াল ও সিনেমার বিভিন্ন নায়িকাদের নামানুসারে থ্রিপিসের চাহিদাও ব্যাপক বলে জানান বিক্রেতারা। আর পুরুষের ক্ষেত্রে দেশি ব্রান্ডের মধ্যে ফেইথ-১১, ক্যাটস আই, মনসুনরেইন, নেক্সট, শীতল, পাস পয়েন্ট, রঙ, রেক্স, সপুরা সিল্ক, হ্যান্ডিবাজার, প্রভৃতির সাথে ভারত-পাকিস্তানের নানা ডিজাইনের পাঞ্জাবি, চীন-থাইল্যান্ডের বিভিন্ন ডিজাইনের শার্ট-প্যান্ট ও টি-শার্টের সমাহার উল্লেখ করার মতো। তবে কেনাকাটায় কোনো অংশেই পিছিয়ে নেই ফুটপাতগুলো। ফুটপাতগুলোতে বেচাকেনা চলছে ধুমছে। ক্রেতারা বলছেন, ফুটপাতের দোকানগুলোতে নিম্নধ্যবিত্ত শ্রেণির ক্রেতাদের জিনিসপত্র বেশি পাওয়া যায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভালো শার্ট, প্যান্ট, ছোটদের সব ধরনের পোশাক, সালোয়ার কামিজ, থ্রি-পিসও পাওয়া যাচ্ছে ফুটপাতে।