চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল চত্বরের চিত্র বদলে গেছে

কামরুজ্জামান বেল্টু: আচমকা আন্দোলনের পরের দিনই বদলে গেছে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের চিত্র। ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরাও যেমন সতর্ক হয়েছেন, তেমনই রোগী সাধারণকে সুহালেই চিকিৎসা দেয়ার পরিবেশ পেয়েছেন হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা। নেশাখোর ও দালালচক্রের ঘুরঘুরও ছিলো না। দৃশ্য দেখে অনেকেই মনের অজান্তেই বলে উঠেছেন, চমৎকার!

‌                চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে রোগী সাধারণের টাকা ও মূল্যবান মালামালসহ ওষুধপথ্য চুরির যেন হিড়িক পড়ে। একের পর এক চুরির খবর উঠে আসে পত্রিকার পাতায়। বহির্বিভাগে রিপ্রেজেন্টেটিভদের ভিড়ে চিকিৎসকের কক্ষে রোগী সাধারণের প্রবেশই যেন দায় হয়ে পড়ে। রিপ্রেজেন্টেটিভদের একজন বের হন, তো অন্যজন প্রবেশ করেন। রোগী সাধারণ ক্ষোভের আগুনে জ্বললেও অসহায়ের মতোই অপেক্ষায় থাকতে হয়। কেউ কেউ চিকিৎসক দেখানোর সুযোগ না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরেও যান। অবস্থাদৃষ্টে বছর দেড়-দুয়েক আগে সিভিল সার্জনের তরফে শুধুমাত্র বৃহস্পতিবার দুপুরে মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভদের কর্তব্যরত চিকিৎসকদের সাথে সাক্ষাতের সময় নির্ধারণ করে দেন। এ নিয়ম জারির কিছুদিন রিপ্রেজেন্টেটিভদের ভিড় হ্রাস পেলেও কিছুদিন পর অবস্থা সেই তিমিরেই ফিরে যায়। এছাড়া হাসপাতাল এলাকার বিভিন্ন ডায়গনস্টিক সেন্টারে ও ক্লিনিকে রোগী নেয়ার জন্য এক শ্রেণির দালালদের উৎপাত বেড়েই চলে। তাছাড়া হাসপাতালের পরিবেশও অস্বাস্থ্যকর হয়ে ওঠে। এরই এক পর্যায়ে গতপরশু সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত ছাত্রসমাজের ব্যানারে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। চুরি রোধ, দালাল মুক্ত হাসপাতাল, দুর্নীতি বন্ধ ও রিপ্রেজেন্টেটিভদের নির্ধারিত সময়ে চিকিৎসকের সাথে সাক্ষাতের দাবি সংবলিত প্ল্যাকার্ড নিয়ে মানববন্ধনে বক্তারা তিনদিনের সময় বেধে দিয়ে দাবি-দাওয়া দ্রুত বাস্তবায়ন না হলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানান।

এ আন্দোলনটি খানেকটা হঠাত করেই শুরু হয়। আন্দোলনকারীরা পরশু হাসপাতালের ভেতর থেকে দুজনকে ধরে দালাল হিসেবে চিহ্নিত করে তাদেরকে হালকা উত্তমমধ্যম দিয়ে বিতাড়িত করে। সিভিল সার্জনের সাক্ষাত না পেয়ে উত্তেজিত হয়ে উঠলে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন। এরই এক পর্যায়ে গতকাল বুধবার সকাল থেকেই হাসপাতালের চিত্র বদলাতে শুরু করে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতায় পরিচ্ছন্ন কর্মীদের যেমন আন্তরিকতা লক্ষ্য করা গেছে, তেমনই ঘুরঘুর করা দালালদেরও টিকির দেখা মেলেনি। রিপ্রেজেন্টেটিভদের ভিড়েও রোগী সাধারণকে পড়তে হয়নি বিড়ম্বনার মধ্যে। এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের বহির্বিভাগে কর্মরত এক চিকিৎসকের মন্তব্য জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আমরাও এরকম পরিবেশ চাই। ভদ্রতার খাতিরেই হোক আর অন্য কারণেই হোক আমরা রিপ্রেজেন্টেটিভদের তাড়িয়ে দিতে পারি না। চিকিৎসাদান কর্মকাণ্ড ব্যাহত হলেও ওনারা বুঝতে চান না। ওষুধ লিখতে হবে। প্রেসক্রিপশন দেখেই ঘর থেকে বের হবে। এরকম মানসিকতা নিয়েও অনেকেই ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকেন। পরিবেশ পাল্টে গেলে আমরাও খুশি। কিন্তু এরকম চমৎকার পরিবেশ ক’দিন থাকবে? এটাই এখন বড় প্রশ্ন। স্থায়িত্বই কাম্য।