চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরে শীতবস্ত্র বিতরণ

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় চলমান শৈত্যপ্রবাহের মধ্যেও ঢাকাস্থ চুয়াডাঙ্গা জেলা সমিতি, বেশির ভাগ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ জেলার  বিত্তবানরা শীতার্তদের পাশে না দাঁড়ালেও ঢাকা থেকে ছুটে এসেছেন পাঁচ তরুণ প্রকৌশলীসহ ছয়জন। প্রথম আলোর চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি শাহ আলম সনির আমন্ত্রণে তারা চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার হকপাড়া রেলওয়ে বস্তিতে বসবাসকারী ছয় শতাধিক শীতার্ত মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করেছেন।

গতকাল শনিবার বেলা ৯টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা রেলস্টেশনের দক্ষিণ-পশ্চিম পাশে অবস্থিত হকপাড়া বস্তিতে বসবাসকারী ছিন্নমূল এসব মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়। এ সময় ৪৫০ পিস শিশুদের জ্যাকেট, সোয়েটার, বিস্কুট ও ২শ নারী-পুরুষের মাঝে নতুন কম্বল তুলে দেয়া হয়। তীব্র শীতের মধ্যে নতুন গরম কাপড় হাতে পেয়ে হকপাড়া বস্তির বাসিন্দাদের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। প্রতিনিধি দলে ছিলেন- প্রকৌশলী আরমান এম সিদ্দিক, তহমিনা আফরোজ নিপা, সাইফুল ইসলাম খান, আব্দুল্লাহ আলম মামুন, উম্মে আরাফাত মুক্তি ও মনসুর আলী। প্রথম আলোর প্রতিনিধি শাহ আলম সনি ও এনটিভির প্রতিনিধি রফিকুল ইসলাম, বাংলাদেশ রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী (সিগনাল) মো. মোতাহার হোসেন এবং হকপাড়া ও ফার্মপাড়ার একদল যুবক স্থানীয়ভাবে তাদেরকে সহযোগিতা করেন। সদর থানার এসআই রবিউল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশ সদস্যরা সুষ্ঠুভাবে বিতরণ সম্পন্ন করতে সহায়তা করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি শীত মরসুমে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অন্তত ৭০ জন মারা গেছেন। যাদের বেশির ভাগেরই শীতজনিত রোগে মৃত্যু হয়েছে।

বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি চুয়াডাঙ্গা ইউনিটের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম জানান, চুয়াডাঙ্গায় বিগত ১৫ দিন ধরে প্রায় দিনই দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হলেও সরকারিভাবে আশানুরূপ শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়নি। পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়ে ঢাকাস্থ চুয়াডাঙ্গা জেলা সমিতি, রাজনৈতিক দল, জনপ্রতিনিধি, ইটভাটা মালিক সমিতি, বাস-মিনিবাস মালিক সমিতি, জেলা সারব্যবসায়ী সমিতি (বিএফএ), জেলা ট্রাক-মালিক সমিতি, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ), কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিষ্ট সমিতি, জুয়েলারি মালিক সমিতি, জেলা ঠিকাদার কল্যাণ সমিতি, বেসরকারি সংগঠন ওয়েভ ফাউন্ডেশন, আত্মবিশ্বাস, জনকল্যাণ সংস্থা, জাগরণীচক্র, সৃজনী, আশা, ব্র্যাক, মোবাইলফোন অপারেটর গ্রামীণফোন, রবি, বাংলালিংক, টেলিটক, সিটিসেল, এয়ারটেল, সিগারেট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বিএটিসি ও আকিজ টোব্যাকোসহ অনেক প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান থাকলেও চুয়াডাঙ্গার অসহায় শীতার্ত মানুষের পাশে কেউই এগিয়ে আসেনি। কিন্তু এদের আসা দরকার বলে সচেতনমহলের অভিমত।

জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, জীবননগরে রেললাইনসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রহরারত আনসার-ভিডিপি সদস্যদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। জীবননগর উপজেলা আনসার-ভিডিপির উদ্যোগে সরকারি বরাদ্দের ৪০টি কম্বল, ৪০ জোড়া জুতো ও ৪০ জোড়া মোজা বিতরণ করা হয়। গতকাল শনিবার সকালে উপজেলা আনসার-ভিডিবির উদ্যোগে এ শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়। জীবননগর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ফারহানা আক্তার রিনি, জীবননগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকতা (ওসি) শিকদার মশিউর রহমান এবং উপজেলা ভারপ্রাপ্ত আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা জহুরুল হক আনসার-ভিডিবি সদস্যদের মাঝে এ শীতবস্ত্র বিতরণ করেন।

কার্পাসডাঙ্গা প্রতিনিধি জানিয়েছেনে, দামুড়হুদা কার্পাসডাঙ্গায় হতদরিদ্র মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। গত ১৬ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার দৈনিক মাথাভাঙ্গা ‘কার্পাসডাঙ্গাসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় হতদরিদ্র মানুষ শীতে কাহিল শীতবস্ত্র বিতরণে এগিয়ে আসেনি কেউ’ শীর্ষক একটি সংবাদ প্রকাশ হয়। এই সংবাদটি দামুড়হুদা উপজেলা প্রশাসনের দৃষ্টিগোচর হয়। গতপরশু শুক্রবার সকাল ১০টায় দামুড়হুদা উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। কার্পাসডাঙ্গা আবাসন প্রকল্পে শীতবস্ত্র বিতরণকালে উপস্থিত ছিলেন দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফরিদুর রহমান।

আমঝুপি প্রতিনিধি জানিয়েছেন, মউক গণসাক্ষরতা অভিযানের যৌথ আয়োজনে মেহেরপুর জেলায় দুস্থ ও অসহায় শীতার্ত মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে কম্বল বিতরণ করেন মেহেরপুর জেলা প্রশাসক মো. মাহমুদ হোসেন। বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন দারিয়াপুর কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আলহাজ আ. জলিল।

মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, জনতা ব্যাংক লিমিটেড মেহেরপুর শাখার উদ্যোগে শীতার্তদের  মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয়। গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মেহেরপুর জনতা ব্যাংক লিমিটেড কার্যালয়ে কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠানে ব্যবস্থাপক আব্দুর রহমানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনতা ব্যাংক লিমিটেড চুয়াডাঙ্গা জোনের এজিএম বিরেন্দ্র চন্দ্র তরফদার। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা শাখার ব্যবস্থাপক আব্দুস সামাদ।