চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার খেজুরতলায় সাপ নিয়ে ভণ্ডামি : প্রচার পাচ্ছে কল্পিত গল্প

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: সর্পদ্রষ্ট নিয়ে যেমন ওঝা কবিরাজচক্র নানা নাটক করে, তেমনই সাপ নিয়েও কল্পিত গল্পের ফাঁদে ফেলে প্রতারণা কম হয় না। সাপের মণি নিয়ে যেমন রূপকথা আছে, তেমনই ওটা সাপ নয় সাপের বেশ ধরে জিন বলেও আতঙ্কগ্রস্থ করে প্রতারণার দোকান খোলা হয় বিভিন্ন স্থানে। আলমডাঙ্গার খেজুরতলায় কি সেরকমই পায়তারা চলছে? এক ব্যক্তির ঘরে ঢোকা সাপ নিয়ে কল্পিত নানা কাহিনী প্রচারের কারণে স্থানীয় সচেতন যুবকদের মধ্যে এরকমই প্রশ্ন দানা বেধেছে।

Mukel24

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার নাগদাহ ইউনিয়নের খেজুরতলা গ্রামের এক ব্যক্তির ঘরে সাপ ঢুকেছে। সাপ মারতে গেলে গৃহমালিকের ক্ষতি হচ্ছে। সে সাপ আবার সাধারণ সাপ নয়, সালাম দিলে ফণা তোলে ও পট খুলে সালামের উত্তর দেয়। এমন কাহিনী শুনে উৎসুক জনতা ছুটে যায় গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে খেজুরতলা গ্রামের জয়নাল আবেদীনের বাড়িতে। সারাদিনের মতো গতকাল দুপুরেও সে বাড়িতে নারী-পুরুষের ভিড় ছিলো। সাংবাদিক দেখে সে ভিড়ে নতুন করে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। আজব সাপ দেখতে চাইলে নিয়ে যাওয়া হয় পশ্চিম দিকের কাঁচা একটি ছোটখাটো ঘরে। ঘরে কোনো আসবাবপত্র নেই। ওই ঘরের এক কোণে অবস্থান সেই সাপের। টর্চ লাইট জ্বেলে আমাদের সাপ দেখানো হলো। একবার তাকালেই মনে হবে ছোটখাটো একটা বাচ্চা সাপ। সাপটি বেজায় অসুস্থ। সাপের পাশে একটা চিনামাটির পিরিচে দুধ খেতে দেয়া হয়েছে। দুধ খেয়েছে বলে মনে হলো না। কারণ পিরিচ ভর্তি দুধ ছিলো। সাপে দুধ খায় কি-না জিজ্ঞাসা করার সাথে সাথে শুরু হলো কেচ্ছা কাহিনী। উপস্থিত সকলেই প্রায় বেশ বিশ্বাসের সাথে জবাব দিলেন, অবশ্যই দুধ খায়। তিনদিন ধরে দুধ খেতে দেয়া হচ্ছে। তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত ৫/৬ দিন আগে সাপটি ওই ঘরে ওঠে। সে সময় গৃহমালিক জয়নালের ছেলে  কামালের সদ্যপ্রসূতি স্ত্রী দু মেয়ে ও সদ্যভূমিষ্ঠ শিশু সন্তান ছেলেকে নিয়ে থাকতেন। সাপ ঘরে ওঠার পরে তারা ঘর ছেড়ে অন্যত্র উঠেছেন। এ সম্পর্কে জয়নাল বলেছেন, সাপকে ওই ঘর তিনি দিয়ে দিয়েছেন। সাপকে কেন মেরে ফেলছেন না? এ প্রশ্ন করলে তারা বলেন, সাপ মারলে গৃহমালিকের ক্ষতি হবে। তবে কারো কোনো ধরনের ক্ষতি হয়েছে কি-না তা কেউ বলতে পারেনি। ওই গ্রামের বদর আলীর ছেলে যুবক আলমগীর হোসেন অপর যুবক জিনারুল আরো চাঞ্চল্যকর কাহিনী বর্ণনা করে। তারা জানায়, সাপকে সালাম দিলে সে সালামের উত্তর দেয়। তারা স্বচক্ষে কখনো এ বিষয়টি দেখেছে কি-না জিজ্ঞাসা করলে দেখেছে বলে দৃঢ়তার সাখে উত্তর দেয়। সাপ কথা বলতে পারে কি-না অথবা মানুষের কথা বুঝতে পারে কি-না তা জিজ্ঞাসা করলে তারা জানায় সালামের উত্তরে সাপটি কথা বলে না। ফণা তুলে পট মেলে উত্তর দেয়। আমাদের সামনে সালাম দিতে বললে তাদের কেউই রাজি হয় নি। অনেক জোর করলে শেষে সালাম ও শাকিল নামে ২ যুবক রাজি হয়। সাকিল সাপের কাছে গিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে বলে- ও দাদা তোমাকে দেখতে অনেক লোক এসেছে। তুমি তাকিয়ে দেখ। এ কথা বলার পর উচ্চস্বরে কয়েকবার সালাম দিলেও তার দাদা ফণা তুলে পট মেলে উত্তর দেয়নি। আগের মতো নির্জিবের মতো শুয়ে ছিলো। বেশ কয়েকবার চেষ্টার পর সে বৃথা চেষ্টা থেকে বিরত হয়। এক পর্যায়ে কেন তারা সাপটিকে নিয়ে মিথ্যে প্রচারণা করছে জিজ্ঞাসা করলে আমার অভিযোগ সত্য নয় বলে পাল্টা অভিযোগ করেন। এ সময় তারা কাহিনীর বর্ণনা করেন এভাবে- গৃহমালিক জয়নালের ছেলে কামালের স্ত্রী পর পর দু মেয়ের পর আবারও অন্তঃসত্তা হন। এবার ছেলে হলে তিনি সকলকে মিষ্টি খাওয়াবেন বলে ঘোষণা করেন। সম্প্রতি তার ছেলে হওয়ার পরও মিষ্টি খাওয়ায়নি। সেকারণে ওই সাপ ঘরে উঠেছে। এমনটা বিশ্বাস করেন প্রায় সকলে। ওই সাপকে লাঠি দিয়ে চেপে ধরলে জয়নালের চাচাতো ভাইয়ের মেয়ে রশিদা খাতুন যার বিয়ে হয়েছে বারোঘরিয়া গ্রামে, সে মোবাইলফোনে জানিয়েছিলো তার গলা কে যেন চেপে ধরেছে। দম বন্ধ হয়ে আসছে। তোমরা সাপটাকে মেরে ফেলো না। তাহলে আমিও মরে যাব। ওটা সাপ নয়, জিন। এর পর থেকে সাপটিকে গ্রামবাসী জিন বলে ভাবতে শুরু করেছে।

সাপ নিয়ে কল্পিত গল্প বলে প্রতারণার দোকান খোলার পায়তারা চলছে বলেই মন্তব্য গ্রামের সচেতন যুব সমাজের।