চুয়াডাঙ্গায় এ বছরও পাটের ন্যায্যমূল্য থেকে কৃষকরা বঞ্চিত

 

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় বিজেএমসির পাট ক্রয়কেন্দ্রের পাট ক্রয় গত ছয় বছর ধরে বন্ধ। এ জেলার ফড়িয়া ও আড়তদারদের হাতে কৃষকরা জিম্মি হয়ে কম দামেই তাদের উৎপাদিত পাট বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। কৃষকরা এ বছরও পাটের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আবাদ খরচটাও ঘরে উঠবে না- এ কথা স্বীকার করছে সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা এবং আড়তদার ও ফড়িয়ারাও।

এদিকে ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় কৃষকরা হতাশা প্রকাশ করছে। এ বছর কৃষকদের প্রতিবিঘা জমিতে পাট উৎপাদন করে মোটা অঙ্কের লোকসান গুনতে হচ্ছে। বরাবরের মতো এ বছরেও কৃষকরা ব্যাপক খরচ করে পাট উৎপাদন করে পাটের ন্যায্যমূল্য না পেয়ে হতাশ হয়েছে। পাট উৎপাদন করে কৃষকরা সংসারের উন্নয়ন করার কথা তো দূরের কথা দেনাদার হতে হচ্ছে।

চুয়াডাঙ্গার কৃষকদের সরকারের কাছে দাবি, প্রতিমণ পাট এক হাজার আটশ থেকে দু হাজার টাকা করা হোক। তা না হলে বাংলার সোনালি আশ উৎপাদনে মুখ ফিরিয়ে নেবে চুয়াডাঙ্গা জেলায় পাটচাষিরা।

2nd5

দেশের সমতল ভূমির অন্যতম জলা চুয়াডাঙ্গা। এ জেলার কৃষকরা ধান আবাদের পাশাপাশি ব্যাপক হারে পাটের আবাদ করেছে। চুয়াডাঙ্গা পাট পরিদপ্তরের হিসেব অনুযায়ী এ বছর চুয়াডাঙ্গা জেলায় প্রায় ৪৬ হাজার একর জমিতে তোষা জাতের পাটের আবাদ করা হয়। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় সাত হাজার পাঁচশ একর, আলমডাঙ্গায় উপজেলায় ১৭ হাজার একর, জীবননগর উপজেলায় চার হাজার একর ও  দামুড়হুদা উপজেলায় ১৭ হাজার একর। এতে করে এবার জেলায় সর্বমোট দু লাখ ২৭ হাজার পাঁচশ বেল শুকনো পাট উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

দামুড়হুদা উপজেলার পাটাচোরা গ্রামের কৃষক আব্দুল আজিজ জানান, লাভ তো দূরের কথা কৃষকরা উৎপাদন খরচটাও ঘরে তুলতে পারছে না। সার কীটনাশক ও ডিজেলের অতিরিক্ত মূল্য হওয়ায় একমণ পাট উৎপাদন করতে কৃষকদের খরচ হয়েছে প্রায় এক হাজার দুশ থেকে এক হাজার পাঁচশ টাকা পর্যন্ত। কিন্তু প্রতিমণ পাটের বর্তমান বাজারদর সর্বনিম্ন আটশ টাকা থেকে সর্বোচ্চ এক হাজার একশ টাকা। এতে করে কৃষকদেরকে প্রতিমণ পাটে লোকসান গুনতে হবে চারশ টাকা। আর অন্য ফসলের উৎপাদিত লাভের তুলনা করলে কৃষককে পাট আবাদ করে বিঘাপ্রতি ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা লাভসহ লোকসান হবে।

চুয়াডাঙ্গা কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মার্কেটিং অফিসার আব্দুর রহিম জানান, চুয়াডাঙ্গা জেলার প্রতিটি ছোট বড় বাজারের ফড়িয়া ও আড়তদারদের আচরণ একই। তারা সব সময় কৃষকের কাছে থেকে কম দামে পাট কিনে মিলারদের কাছে বিক্রি করে মোটা অঙ্কের মুনাফা আয় করবে। তাই তারা পাটের বাজারে কৃষকের পাটের নানান ত্রুটি ধরে মূল্য কম দিয়ে থাকেন।

চুয়াডাঙ্গা পাট পরিদপ্তরের পরিদর্শক সৈয়দ আলাউদ্দিন জানান, গত চয় বছর ধরে চুয়াডাঙ্গা জেলার গোকুলখালী বাজারের বিজেএমসি’র পাট ক্রয়কেন্দ্রে পাট ক্রয় করা বন্ধ রয়েছে। যদি বিজেএমসি পাট ক্রয় করতো তাহলে কৃষকরা পাটের ন্যায্যমূল্য পেতো।

চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক হরিবুলা সরকার জানান, দেশের সোনালি আশের কারিগর চুয়াডাঙ্গার কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পাটের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না। এতে করে কৃষকরা পাট আবাদ করে লোকসান গুনছে। প্রতিবছরে পাট আবাদ করে লোকসান হওয়ায় এক সময় চুয়াডাঙ্গা জেলায় ব্যাপকহারে পাটের আবাদ করতো বর্তমারে তার চার ভাগের এক ভাগ আবাদ হচ্ছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে পাট আবাদে লোকসানের হাত থেকে কৃষককে না বাঁচালে আগামী দিনে হইতো এ জনপদে পাটের আবাদ বন্ধ হয়ে যাবে।